বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৭, শক্ত অবস্থানে জাতীয় পার্টি!

শুকলাল দাশ ও কল্যাণ বড়ুয়া মুক্তা: জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে চোখে পড়ার মতো। প্রতিদিন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছুটছেন নেতাকর্মীদের কাছে। কে কার চেয়ে বড় শোডাউন করে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিতে পারেন সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বহু আগে। এখন পুরো উপজেলা জুড়ে বইছে নির্বাচনী হাওয়া।
উপজেলার বিশাল এলাকা জুড়ে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকাটি এই অঞ্চলের সবচেয়ে অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এখানে গড়ে উঠছে দেশের অন্যতম বৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। উপজেলার অপর প্রান্তে রয়েছে হাজার হাজার একর পাহাড়ি উর্বর বনাঞ্চল। এই পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষি-ফলদ এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এমন সম্ভাবনাময় সংসদীয় আসনে গত ৫ বছরে বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এলাকার উন্নয়নে প্রচুর কাজ করেছেন। তবে দলীয় কোন্দলের কারণে এই উন্নয়নের সফলতা চাপা পড়ে আছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের কোন্দলও চরমে। এই কোন্দল নিরসনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছেন দলীয় হাইকমান্ডের (দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দিকে। দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত নৌকার মনোনয়ন যিনিই পাবেন দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে সবাইকে এক মঞ্চে আসতে হবে।

BanshkhaliTimes
বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে নিজের শক্ত অবস্থানে আছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক সিটি মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগের বাইরে জাতীয় পার্টির আছেন দুইজন। সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ও স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা আবু বক্কর ছিদ্দিকী।

বর্তমানে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও শিল্পপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ক্রীড়া সংগঠক সাইফুদ্দিন আহমদ রবি, আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক-ইউসিবিএলের এক্সিকিউটিভ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী সিজার, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সাবেক সহ সম্পাদক ড. জমির উদ্দিন সিকদার ও সাবেক সাংসদ সুলতান উল কবির চৌধুরীর পুত্র চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব।

BanshkhaliTimes
অপরদিকে এলাকায় প্রচার আছেন-জোটগত নির্বাচন হলে এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছিলেন। পরে দলের সিদ্ধান্ত তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তবে নতুন করে নিজের পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতা আবু বক্কর ছিদ্দিকীও। এদিকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনয়ন দিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় সহ-পর্যটন বিষয়ক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এম মহিউল আলম চৌধুরীকে।

বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর থেকে ১০ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৩ বার নিজেদের বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা শাহ-ই-জাহান চৌধুরী, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম সুলতান উল কবির চৌধুরী এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর থেকে বাঁশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নয়ন হয়েছে।

BanshkhaliTimes
উপজেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। তবে দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে তার প্রচার হয়েছে কম। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাঁশখালীর ১৪ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মধ্যে ১০ জন চেয়ারম্যান প্রতিনিয়ত তার পক্ষে বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন ।
আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। বাঁশখালীতে প্রায় হাজার কোটি টাকার নানাবিধ উন্নয়ন করেছি। উন্নয়নের সুফলে সাধারণ জনগণ উপকৃত হচ্ছেন। দীর্ঘদিনের উন্নয়ন বঞ্চিত বাঁশখালীকে আমি উন্নয়নের মাধ্যমে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছি। আমার ৫ বছরে বাঁশখালীতে উন্নয়ন এবং সম্ভাবনায় প্রাণচাঞ্চল্য ভাব ফিরে এসেছে। এলাকায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামীতেও আমাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় এলাকার জনগণ। আমার বিশ্বাস আমি মনোনয়ন পেলে অবশ্যই নির্বাচিত হবো। বাঁশখালীর জনগণ আমাকে বিজয়ী করতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাঁশখালীর ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীই জিতেছে। এটাও আমার উন্নয়ন কাজের ফসল। বাঁশখালীর প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করেছি। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ছিল এলাকাবাসীর মরণফাঁদ। সরকারের সহযোগিতায় তা করতে সক্ষম হয়েছি। তাছাড়া আধুনিক বাঁশখালী গড়তে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বর্তমানে চলমান। এ ধারা অব্যাহত রাখতে দলীয় নেতাকর্মীরা অবশ্যই তার পক্ষে রায় দিবেন বলে তিনি নিশ্চিত। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমার ব্যক্তিগত কিছু চাওয়া ও পাওয়ার ছিল না। আমি সাধারণ জনগণ নিয়ে রাজনীতি করি যা চেয়েছি শুধু তাদের জন্য। আশা রাখি আগামীতেও সাধারণ জনগণ আমার সাথে থেকে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন ।

এ আসনে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ, দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সম্পাদক ও স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান সিআইপি। তিনি মাস্টার নজির আহমদ ফাউন্ডেশনের ব্যানারে দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। যার ফলে সাধারণ জনগণ তাদের প্রতি নানাভাবে সহানুভূতিশীল। তাদের পুরো পরিবার সারা বছর এলাকায় গরীব-অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছেন। এলাকার হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে তাদের শিল্প-কারখানায় চাকরি দিয়েছেন। নানান সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে বাঁশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সাথে মুজিবুর রহমানের একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নজির আহমদ মাস্টার পরিবারের সন্তান হিসেবে এলাকায় তাদের রয়েছে বেশ সুনাম। এলাকায় স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন সামাজিক কাজে উন্নয়নমূলক অংশগ্রহণও রয়েছে তাদের পরিবারের। দক্ষিণ বাঁশখালীর একমাত্র কলেজ নজির আহম্মদ ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ২০০৭ সালে। শিক্ষার আলো ছড়ানো এই কলেজে বর্তমানে অনার্স কোর্স চালু হয়েছে।
আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ব্যাপারে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, আমি ও আমার পরিবার সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করি। এলাকার দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা বিস্তার, ভিক্ষুক পুনর্বাসনসহ প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দশটি বিশেষ উদ্যোগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে গরীব দুসথদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আমি মনে করি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলেই আমার সব অর্জন সার্থক। আমি কোন ধরনের গ্রুপ রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। সবসময় মূলধারার সাথে থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করেছি। যে কারণে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। নেত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচিত হয়ে সংগঠনকে গতিশীল করবো এবং এলাকার উন্নয়নে আরো বেশি সচেষ্ট থাকবো।
এদিকে বাঁশখালীতে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির ব্যানারে সাংসদ নির্বাচিত হন মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালের ৭ মে এবং ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ব্যানারে সাংসদ নির্বাচিত হন মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন পত্র দাখিল করলেও পরবর্তীতে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু বিগত কিছুদিন আগে শঙ্খ নদীর তৈলারদ্বীপ সেতুর টোল মওকুফের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারো প্রকাশ্যে এলেন তিনি। এরপর থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গুছাতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করা ছাড়াও উপজেলা ও বিভিন্ন কলেজওয়ারী ছাত্র সমাজকে নতুন করে সাজাতে শুরু করেছেন তিনি। তবে বাঁশখালীর জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসাবে মহাজোট থেকে এ আসনে লড়ার কথা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ।
নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতার ব্যাপারে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি অবিভক্ত চট্টগ্রামের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন এবং ছাত্র নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধুর সমাবেশে বক্তব্য রেখেছি। ১৯৭৫ থেকে ৭৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র ও প্রশাসক থাকাকালীন বাশঁখালীর কয়েক হাজার লোককে চাকুরি ও কর্মসংস্থান করে দিয়েছি যারা আজ অনেক বড় বড় দায়িত্ব পালন করছে। ১৯৯১ সালে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে ৪৭৮ ভোটে পরাজিত হই। জাতীয় পার্টির প্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের মুক্তি আন্দোলন থেকে শুরু করে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসাবে ১৯৯২ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পার্টির সমন্বয়ক হিসাবে এবং ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছি। তিনি আরো বলেন, দেশের বিভিন্ন আসন নিয়ে দলীয় হাইকমান্ড নানা কথা বললেও বাঁশখালী আসন নিয়ে কেউ কোন কথা বলছে না। তার অর্থ বাঁশখালী আসন জোটের। আমি জোটের প্রার্থী হলে বিগত দিনে ভঙ্গুর বাঁশখালীর যে উন্নয়নের সূচনা করেছিলাম তা শতভাগ বাস্তবায়ন করব। তিনি বলেন, বাঁশখালীর প্রধান সড়কে আমার আমলে ইট বসানো হয়েছিল। আমি না চাইলে কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু হত না আর দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনগণ ও বাশঁখালীবাসী এত যোগাযোগ সুবিধা পেত না। তিনি বাঁশখালীকে আধুনিক বাঁশখালী গড়তে আগামীতে মহাজোট প্রার্থী হিসাবে সর্বস্তরের জনগণ তার সাথে রয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে এ আসনটিতে সম্প্রতি নতুন করে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা আবু বক্কর ছিদ্দিকী। তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রেখেছি আমরা, তাই মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার আমারও রয়েছে।
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল্লাহ কবির লিটনও। তিনি সাবেক এমপি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান চৌধুরীর ভাগিনা। দীর্ঘদিন যাবত বাঁশখালীর রাজনীতিতে আলোচিত নাম। দলের দুর্দিনে এলাকায় নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। এছাড়া তিনি আকতারুজ্জামান চৌধুরী স্মৃতি সংসদের ব্যানারে ও তৃণমূল আওয়ামী লীগের ব্যানারে বাঁশখালীর সর্বত্র সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্র কমিটি থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে রয়েছেন তিনি। তিনি বাঁশখালীর সর্বত্র কর্মী সমর্থক নিয়ে শোডাউন থেকে শুরু করে প্রতিনিয়ত সভা সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। বাঁশখালীর সর্বত্র বিশাল ব্যানার ফেস্টুন প্রচার-প্রচারণায় আছেন এ নেতা। এলাকায় তাঁর শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে জানান বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতা।
নির্বাচনের ব্যাপারে আব্দুল্লাহ কবির লিটন বলেন, আমার স্বপ্ন বাঁশখালীকে দেশের মধ্যে আধুনিক ও মডেল উপজেলা হিসাবে গড়ে তোলা। তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে আমার রাজনীতি। দলের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে এবং বাঁশখালী আসন নেত্রীকে উপহার দিতে আমি সার্বক্ষণিক দলের ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। আশা রাখি দল আমাকে মনোনয়ন দিলে দলকে এ আসন উপহার দিতে পারবো। পুরো বাঁশখালীতে আমি দলের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছি। এলাকায় নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম-এখনো আছি। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে বাঁশখালীর প্রতিটি এলাকায় গিয়ে প্রচার করেছি।
এ আসনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ক্রীড়া সংগঠক সাইফুদ্দিন আহমদ রবিও নির্বাচন করবেন বলে জানান। তিনি আজাদীকে জানান, আমি ছাত্রলীগ থেকে আজকে আওয়ামী লীগ করছি। দলের দুর্দিনে রাজপথে ছিলাম। দল থেকে কখনো কিছু চাই নি। বিগত দিনে মনোনয়ন চেয়েছিলাম এবারও চাইব। নেত্রী যাকে যোগ্য মনে করেন মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে জানবাজি রেখে কাজ করব ।
এদিকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক- ইউসিবিএলের এক্সিকিউটিভ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী সিজারও। পেশাগত জীবনে ব্যাংকার হলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বিচ্যুত হননি। রাজনৈতিক কোন পদ-পদবীতে না থেকেও তিনি আওয়ামী লীগের আদর্শের সৈনিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন এলাকায়। সাধারণ মানুষের অনুপ্রেরণায় তিনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। মানবসেবায়, সমাজকর্মে এলাকায় তাকে সবাই ভালোবাসেন বলেও জানান। গ্রামের কেউ অর্থাভাবে পড়াশুনা করতে পারছে না, তাদের জন্য অর্থের যোগানদাতা হয়ে যান তিনি। টাকার জন্য কারও মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না, সেখানেও সাহায্য করেন নিঃস্বার্থভাবে। কারও শরীর অসুস্থ, তার চিকিৎসার ভার তুলে নেন নিজের কাঁধে। এখানেই শেষ নয়, নিজ গ্রাম বাঁশখালী ও তার আশপাশের এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, অনাথ শিশুদের ভরণপোষণ ও পড়াশুনার ব্যবস্থা করে দেয়াই যেনো তার জীবনের অন্যতম ব্রত।
এই ব্যাপারে আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী সিজার বলেন, আমার মা-বাবা দু’জনেই মুক্তিযোদ্ধা। বাবা ডা. জমির উদ্দিন চৌধুরী একাত্তরের রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। মা ডা. আঞ্জুমান আরা বেগম মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসার তথ্য সংগ্রহ করে তা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। মেঝভাই শামসুল আরেফিন ছিলেন হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের বার্ষিকী সম্পাদক। তার হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোসহীন ছিলাম। এজন্য ১৯৯১ সালের ৬ ডিসেম্বর জামায়াত শিবিরের হামলার শিকারও হয়েছি। মারাত্মকভাবে জখম হয়ে বহুদিন ছিলাম কোমায়। এলাকায় মানুষের জন্য কাজ করছি দীর্ঘদিন থেকে। সরকারের উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। এলাকাবাসী চান আমি নির্বাচন করি। তাই নির্বাচনে প্রার্থী হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সাবেক সহ সম্পাদক চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি ঢাকার সভাপতি ড. জমির উদ্দিন সিকদার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা জানান দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, দল থেকে মনোনয়ন চাইব। দল যদি যোগ্য মনে করে তাহলে মনোনয়ন দেবে। আর যদি মনোনয়ন না দেয় যেভাবে দলের নির্দেশনা আসবে সে ভাবে দলের জন্য কাজ করে যাব।
অন্যদিকে সাবেক সাংসদ সুলতান উল কবির চৌধুরীর পুত্র ও দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আজাদীকে জানান, আমার পিতা বাঁশখালীতে দলের দুঃসময়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বাঁশখালীর গণমানুষের নেতা ছিলেন। বাঁশখালীবাসী আজো তাকে ভুলে নি। এলাকাবাসী চায় আমি নির্বাচন করি। তাই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বললে নির্বাচন করবো।
এ আসন থেকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনয়ন দিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় সহ-পর্যটন বিষয়ক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এম মহিউল আলম চৌধুরীকে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন ইসলামী ছাত্রসেনা ও ইসলামিক ফ্রন্টের রাজনীতির সাথে জড়িত। বাঁশখালীর মধ্যম ইলশা নিবাসী মহিউল আলম চৌধুরী বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ ভিত্তিক কার্যক্রমের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত রয়েছি। সামাজিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে বাঁশখালীর উন্নয়নে, উপকূলীয় রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, পর্যটনের উন্নয়ন, রাস্তা-ঘাট উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় রয়েছি। তাই আশা করছি, আগামী নির্বাচনে বাঁশখালীর সাধারণ জনগণ চেয়ার প্রতীকে আমাকে নির্বাচিত করবে।
সূত্র: দৈনিক আজাদী

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *