মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের: বাঁশখালী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ও উপকূলীয়ে অঞ্চলে খাল, বিল, জলাশয়, পুকুর শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত অধিকাংশ নলকূপ পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার অবস্থা ধারণ করছে।স্থানীয় প্রভাবশালীরা সেচ পাম্প বসিয়ে বোরোধান আবাদ করার ফলে নলকূপগুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন জনসাধারণ।তাছাড়া অধিকাংশ নলকূপ পড়ে আছে অকেজো অবস্থায়।
অন্যদিকে পুকুরের দূষিত পানি পান করে কলেরা,টাইফয়েড,আমাশয়,ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।অনেকে দূর-দূরান্তের গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছে। অপরদিকে স্কুল-কলেজের নলকূপ গুলোতেও পানি পাওয়া যাচ্ছেনা।যার কারণে স্কুলের কোমলমতি শিশুরা পানির তৃষ্ণা মেটাতে না পেরে পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে আচার-চাটনী খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পানির অভাবে ডোবা ও পুকুরের পানি ফুটিয়ে পান করছে অনেকেই। শুস্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে পানীয় জলের এ সংকট চরম আকার ধারণ করছে। ফলে বাঁঁশখালীর বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার পানি সংকট।
সরজমিনে বাঁশখালীর উপজেলার ছনুয়া, গন্ডামারা, শেখেরখীল, শীলকূপ,সরল, বাহারছড়া,খুদুকখালী, খানখানাবাদ, পুকুরিয়া, কালীপুর, বৈলছড়ি, কাথরিয়া, সাধনপুর, পুঁইছড়ি, চাম্বল ও জলদী পৌরসদর সহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন কালে দেখা যায়, অধিকাংশ স্কুল, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না থাকায় প্রচন্ড গরম ও উঞ্চ আবহাওয়ার কারনে ছাত্র-ছাত্রীরা বাধ্য হয়ে পিপাসা মিটাতে খাল, বিল, পুকুর এবং পথঘাট থেকে পানি পান করার ফলে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাঁশখালীর প্রায় ৫৫ শতাংশ বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপের ব্যবস্থা থাকলেও তা অনেকদিনের পুরানো এবং দীর্ঘদিন থেকে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকায় অকেজো হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানিয় জলের ব্যবস্থা নেই। সাগর উপকূলের ইউনিয়নগুলো শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই খাল, বিল ও পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়।
প্রচন্ড তাপদাহে উপকূলীয় এলাকার ইউনিয়নগুলোতে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। মঙ্গলবার সরল মিনজিরীতলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায় এই এলাকায় ভ্যান গাড়িতে করে কলসি ভর্তি পানি বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি কলসি ৫ টাকা হারে যে কেউ পানি কিনে নিচ্ছে জীবনমান রক্ষার্থে। অভিযোগ রয়েছে বিগত অনেকদিন যাবত বাঁশখালীবাসীর চাহিদা অনুসারে কোন নলকূপ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছেনা। তাছাড়া যেসব নলকূপ সরকারী ভাবে বরাদ্দ পাওয়া যায় তাতেও ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ করে এই শুষ্ক মৌসুমে পানি পায়না জনগণ।
এদিকে উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে। যে কারণে ছাত্রছাত্রীদের খাবার পানি নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, তাদেরকে স্কুলে আসার সময় পানীয় জলের বোতল সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হয়।
শীলকূপের আলমগীর ও ছনুয়া এলাকার গৃহবধূ করিমুনেচ্ছা বাপ্পি বলেন,আমাদের এলাকার নলকূপ গুলোতে ৩-৪ চাপ দিলে একটা কলসি অনায়াসে পানি পুরানো যেত।কিন্তু দুঃখের বিষয়,কিছু স্বার্থন্বেসী ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ বিবেচনা করে গভীর সেচ পাম্প বসিয়ে বোরাে ধানের আবাদ করার কারণে আমাদের নলকূপগুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা।আবার কিছু নলকূপে পানি পাওয়া গেলেও তা পানিয়ে দিয়ে তুলতে হচ্ছে।বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে এই শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও এযেন দেখার কেউ নেই।অন্যদিকে এই এলাকায় ভ্যান গাড়িতে করে কলসি ভর্তি পানি বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে । প্রতি কলসি ৫ টাকা হারে যে কেউ পানি কিনে নিচ্ছে জীবনমান রক্ষার্থে। অভিযোগ রয়েছে বিগত অনেকদিন যাবত বাঁশখালীবাসীর চাহিদা অনুসারে কোন নলকূপ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছেনা।
এদিকে বাঁশখালীর একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত তিনমাস ধরে পানি নেই। এর ফলে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে আসা বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগের রোগী এবং তাদের স্বজনদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।দীর্ঘদিন আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পানির চাহিদা মিটাতে স্থাপন করা দু’টি টিউবওয়েলের একটি অকেজো অবস্থায় রয়েছে এবং অপরটিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ার কারণে চলতি শুষ্ক মৌসুমে আর পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
পানি সংকটের সত্যতা স্বীকার করে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামরুল আজাদ জানান, গত একযুগ ধরে প্রতি শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে তিন চার মাস যাবৎ টিউবওয়েল গুলোতে পানি ওটছে না এই বিষয়টি আমরা সংসদ সদস্য কে অবহিত করলে তিনি খুব শিগগিরই হাসপাতালে একটি গভীর নলকূপ স্থাপনের আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান দেওয়ানজী বলেন, চলতি শুষ্ক মৌসুমে ও গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে গভীর-অগভীর নলকূপের সাহায্যে পানি উত্তোলনের ফলে দুই-তৃতীয়াংশ নলকূপে পানি উঠছে না। পানির স্তর আশংকা জনক ভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েল গুলিতে স্বাভাবিক ভাবে পানি উঠছে না।
বর্তমানে বাঁশখালীতে তীব্র পানিয় সংকটে ভুগছে পৌরসভাসহ ১৪ ইউনিয়নের প্রায় ৬ লক্ষাধিক জনগণ। বাঁশখালীর সর্বস্তরের অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় একটি করে নলকূপ স্থাপনের জন্য এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ মানুষ এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।