বই আলোচনা || শামসুদ্দীন শিশিরের “শিক্ষকতা মহান পেশা”

BanshkhaliTimes
অধ্যাপক শামসুদ্দীন শিশির

শিক্ষক জাতির আদিপুরুষ জ্ঞানগুরু দার্শনিক সক্রেটিসের আমলে শিক্ষাদানের জন্য কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান ছিলনা। তাই খৃষ্টপূর্ব আড়াই হাজার বছর আগে তিনি রাস্তাঘাটে এবং হাটবাজারে যুবকদের তিনি দাঁড়করাতেন। এরপর তার নিজস্ব দ্বান্দিক পদ্ধতিে তিনি প্রশ্ন করতেন এবং যতক্ষণ না তিনি সন্তুষ্ট হতেন ততক্ষণ তিনি ছাড়তেন না। তার শিক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল সত্য ও ন্যায়। যে সত্য ও ন্যায়ের জন্য তাকেঁ তৎকালীন গ্রিসের সরকারের দেয়া মৃত্যুূদন্ডকেও বরণ করতে হয়েছিল। তিনি ছিলেন আরেক মহান দার্শনিক প্লেটোর শিক্ষক।
পেশাগতভাবে যদিও তিনি শিক্ষক ছিলেন না তবে জ্ঞান বিতরণের দিক থেকে তিনি ছিলেন একজন মহান শিক্ষক। শিক্ষা দানের প্রথম বার্তা বাহক এবং শিক্ষণ-শিখনের দীক্ষাগুরু।
তিনি প্রথম শিখিয়েছিলেন জ্ঞানার্জনের পদ্ধতি কী হওয়া উচিত কিংবা জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যই বা কী হওয়া উচিত। তাই তিনি ইতিহাসের প্রথম পুরুষ যার নিজের বিতরণ করা জ্ঞানের উপর ছিল অবিচল আস্থা এবং এ আস্থা এবং দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে শিক্ষকের মর্যাদাকে সর্বোচ্চ তুঙ্গে এবং এই পেশাকে মহান করে গিয়েছিলেন।
কালানুক্রম এ পেশার হয়েছে ক্রমবিকাশ। প্লেটো, এরিস্টটল এর সেই আকাদেমি এবং লাইসিয়াম পরিণত হয়েছে এক একটা বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় নামক আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে । বেড়েছে শিক্ষক – শিক্ষার্থী, সৃষ্টি হয়েছে পাঠ্যসূচী,কারিকুলাম। চলছে গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ। তার সাথে বেড়েছে শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং সাথে নীতি ও নৈতিকতা নামক দায়বদ্ধতা । এ সব নীতি, নৈতিকতা ও দায়- দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বিদ্বান, বিচক্ষণ, নীতিবান শিক্ষক নিজেই আজ পেশাটিকে মহান করে তুলছেন। আর এ কথাটিই যিনি প্রথম কালিও কলমে রাঙিয়ে মলাট বদ্ধ করে ” শিক্ষকতা মহান পেশা ” শিরোনামে পাঠকের কাছে সুলভ করেছেন তিনি হলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় গুনীজন,শিক্ষক, অধ্যাপক, লেখক, কলামিস্ট ও শিক্ষাবিদ মীর আবুসালেহ্ শামসুদ্দিন শিশির।
১৪৩ পৃষ্ঠার বইটিতে ৪৫ টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। যার মধ্যে, জাতি গঠনে শিক্ষক,গুণগত শিক্ষার জন্য শিক্ষক, সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্ঠিতে শিক্ষক,পাঠদানের রকম সকম,শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকতাকৌশল,মূল্যবোধ শিক্ষা ও শিক্ষক,শিক্ষার্থীদেরকে পাঠে চাঙ্গাকরণ কৌশল,শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য এবং শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষক, শেখা ও শেখানো শিক্ষাদানে প্রযুক্তির ব্যবহার,শিক্ষা উপকরণ প্রসঙ্গে, শিক্ষণে দক্ষতা, বয়স্ক শিক্ষার গোড়ার কথা, বাংলাদেশের শিক্ষা,শাস্তি ও উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা,জেন্ডার প্রসঙ্গ ইত্যাদি প্রবন্ধে শিক্ষা বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো খুব সহজ, সরল, প্রাঞ্জল ভাষায় বিবৃত হয়েছে।
শুধু শিক্ষণ -শিখনে নয় মেধা ও মননের বিকাশেও এ প্রবন্ধগুলোর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাছাড়া, শিক্ষক -শিক্ষার্থী, শিক্ষাসচেতন ব্যক্তি বিদ্ধান, জ্ঞানী, অনুরাগী পাঠককে প্রবন্ধগুলো ভাষাগত প্রাঞ্জলতা ও সৃজনশীলতার কারণে বিমুগ্ধ করবে আশা করি।
প্রবন্ধগুলোতে স্পেস, ভাঙ্গা ফন্ট, বানান ভুল সহ প্রায় ১৮০ টির মতো মুদ্রণ প্রমাদ রয়েছ যা কখনো সচেতন পাঠকের দৃষ্টি এড়াবার নয়। তাপরও প্রবন্ধ ও শব্দসংখ্যা বিবেচনায় এগুলো নগণ্য।
বইটি প্রকাশ করেছেন Edu-Aide
প্রকাশক: ড: ওবায়দুল করিম
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন দ্বীপক দত্ত।
শুভেচ্ছা মূল্য: দুইশত টাকা।

অসাধারণ বন্ধুবৎসল, প্রাজ্ঞ সুশীল, সজ্জন এই ব্যাক্তি লিখেই যাচ্ছেন নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই। তিনি নিজেই বলেছেন-“শিক্ষা আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার। শিক্ষক তার সুনিপুণ কারিগর। শিক্ষা ব্যতিত আলোকিত মানুষ তৈরি কোনভাবেই সম্ভব নয়। এ বোধ থেকে আমার এ লেখা। অন্ধকার অতল গহবরে নিমজ্জিত সমাজকে আলোর মুখ দেখাতে পারে একমাত্র সুশিক্ষা। যার ধারক ও বাহক একজন সুশিক্ষক যারা শিক্ষকতাকে মহান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনেকরি আমার কিছু দায়বদ্ধতা আছে। আমার দায়বদ্ধতা সহকর্মীর কাছে, সমাজের কাছে, দেশের মানুষের কাছে,আগামী প্রজন্মের কাছে। তাই আমার এ লেখা সহকর্মীদের জন্য,সমাজ ও দেশের মানুষের জন্য,আগামী প্রজন্মের জন্য।”
“শিক্ষকতা মহান পেশা” বইটি ছাড়াও প্রকাশনা জগতে শিক্ষা, সাহিত্য, দর্শন ও ইতিহাস নিয়ে লেখা ও সম্পাদিত তার অনেকগুলো ছোট বড় গ্রন্থ রয়েছে। গ্রন্থটির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।

BanshkhaliTimes
আলোচক

পান্থজন জাহাঙ্গীর
কবি ও গল্পকার

 
Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *