প্রিয় মাটির ঋণ শোধ করুন
আ ন ম অহিদুল আলম
বেশিদিন হয়নি স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। অনেক রাত অব্দি লসএঞ্জেলস শহরে হাঁটছি, আর প্রতিটি বাড়ির সামনে সাজানো ফুলের বাগানগুলো দেখছি, রাতে ভেজালমুক্ত খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। স্বপ্ন দেখি। হায়রে আমার জন্মভূমিতে যদি শুধু খাবারে ভেজালটা বন্ধ, দূষণ রোধ, দুর্নীতির কিছুটা হলেও লাগাম টেনে ধরতে পারতাম, তাহলে দেশটা সুন্দর ও সুখের হতে পারত। স্বপ্নভঙ্গ হল। মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাব আঘাত হানল যুক্তরাষ্ট্রেও। হঠাৎ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব থেকে ফোন আসা শুরু হল, সবার এককথা যা পার কিনে রাখো, লসএঞ্জেলস লকডাউন করা হবে। লকডাউন শব্দের সাথে আগে পরিচিত ছিলাম না। আমার স্ত্রী জান্নাতুন নাঈম উদগ্রীব। কিছু জিনিস স্টক করতে বলল। হাসলাম, আর তাকে আশ্বস্ত করে বললাম, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ না খেয়ে থাকবে না। কিন্ত অবিশ্বাস্য ঠেকল, বিকালের মধ্যে সব সুপারমল খালি হয়ে গেল, একটা রুটিও কোথাও পাওয়া গেল না। অবাক হলাম। বড় বড় সুপারমল বন্ধ হয়ে গেল, অফিসগুলোতে ছাঁটাই শুরু হল, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে লাগল। এতো কিছুর পর একটা দেশ শক্তিশালী অর্থনীতির উপর দাঁড়িয়ে থাকলে কি করতে পারে কাছ থেকে তা দেখছি। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে সুপারমল খুলে গেল। অবাক হবার বিষয় কোনোভাবে নয়ছয় হয়নি। বেকারদের প্রণোদনা দেওয়া শুরু হল। প্রাপ্তবয়স্করা বারশ ডলার, ছোটরা ছয়শ ডলার করে। এছাড়া ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণির মানুষের জন্য হরেক প্রণোদনা। চিন্তা করে দেখুন একটা দেশে যদি প্রতিদিন ত্রিশ হাজার করে মানুষ আক্রান্ত হয় আর তিন হাজার মারা যায় সে দেশে অবস্থা কেমন হওয়ার কথা। কিন্তু অবাক হওয়ার ব্যাপার মৃত্যুর জন্য মানুষের মাঝে কষ্ট আছে, ছাঁটাইয়ের জন্য দুঃখ আছে, কিন্তু হাহাকার নেই। এখনও এখানকার মানুষ সমুদ্রবিলাসে যায়। খেলে, নির্বাচনি প্রচারণা করে। একদিনের জন্য আমার অফিস বন্ধ হয়নি, নিয়মিত অফিসে যাই। এদিকে মৃত্যুর মিছিল স্বল্প হচ্ছে, আর আমার মাতৃভূমিতে দীর্ঘ হচ্ছে। উদ্বেগ উৎকন্ঠায় থাকি, অনলাইনে দেশের প্রিয় পত্রিকাগুলো চোখ বুলিয়ে নিই। ভালো সংবাদের চেয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে থাকি যাতে প্রিয় কোনো মানুষকে হারানোর সংবাদ না দেখি। এই মহামারীর জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। সাধারণ মানুষ যেমন ডাক্তার না পাওয়ার জন্য ক্ষোভ ঝেড়েছে। নকল এন৯৫ মাস্ক এবং পিপিই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। লকডাউনের সিস্টেম নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই। কিন্তু বেমালুম ভুলে যাচ্ছি, যারা লাভ মনে করে ১৫৬ টাকায় নকল কুমিল্লা মাতৃভাণ্ডারের মিষ্টি ঘরে তুলেছি। সেই দেশে মাস্ক কেলেঙ্কারি অস্বাভাবিক কিছু নয়। করণীয় নিয়ে বিতর্ক সব দেশে আছে। আরেকটি প্রশ্নের জবাব যুক্তরাষ্ট্রে যারাই করেছে, সদুত্তর দিতে পারি না। সেটা হলো- বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাংকের মালিক চট্টগ্রামের, কিংবা ওখানকার ব্যবসায়ী। ভেন্টিলেশনসহ হাসপাতাল নেই কেন চট্টগ্রামে? ধনীদের এই জেলায় চিকিৎসা ব্যবস্থা এত নাজুক কেন? সেই উত্তর আমার জানা নেই, দিতেও পারিনি। ধনীরা টাকা কামাই করে বিদেশে রাখার জন্য! না শুনলেও ধনীদের কাছে অনুরোধ প্রিয় মাটির জন্মের ঋণ শোধ করুন।