প্রফেসর আসহাব উদ্দিন আহমদ’র ২৪তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদ স্যার কে নিয়ে আমার কিছু লেখার অনেকদিনের ইচ্ছা। আমি উনার অনেক লেখা পড়েছি। আমি যখন আমার জীবনের প্রথম রম্যগ্রন্থ বাঁকাকথা প্রকাশ করলাম, আমাকে আমার অনেক ভক্ত বলেছিলেন আমার লেখাতে আসহাব উদ্দিন স্যারের প্রভাব আছে। আসহাব উদ্দিন স্যারের লেখার সমতুল্য আমি লিখতে পারব অথবা উনার লেখার মত আমার লেখাও হবে তা কিন্তু আমার বিশ্বাস হয় না। তবুও কেন জানি কাকতালীয়ভাবে উনার চিন্তা চেতনামূলক লেখার সাথে আমার লেখা মিলে যায়। তাতে আমি নিজেকে সুভাগ্যবান মনে করি। প্রতিনিয়ত আমি দৈনিক পূর্বকোণ, আজাদীসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে আসছি। চেষ্টা করি সমাজের অসুন্দরের বিরুদ্ধে যেন আমার কলমকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। কয়েকদিন আগেই আসহাব উদ্দিন আহমদ স্যারের মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। কিন্তু যতটুকু প্রচার ও প্রসার ঘটার কথা কিছুই হয়নি। আসহাব উদ্দিন আহমদ স্যারের মতো একজন গুণী লেখককে আমরা অতি সহজে ভুলে যাচ্চি। সেখানে আমাদের মতো ক্ষুদ্র লেখকের কথা কে বা মনে রাখবে ? তাই বিবেকের তাড়নায় আসহাব উদ্দিন আহমদ স্যারের উপর কিছু লিখতে বসলাম। উনি যে মাপের সাহিত্যিক আমার স্বল্প জ্ঞানে তাঁকে আয়ত্বে আনা সম্ভব হবে না। তবুও লেখার প্রচুর ইচ্ছা। সেই ইচ্ছার প্রতিফলন চির অমর, পরিপূর্ণ মানুষ আসহাব উদ্দিন আহমদ স্যার। তাঁর প্রতি আমার ক্ষুদ্র লেখার হয়তো আমি কিছুটা পরিচিতি লাভ করব। সমাজের আলোকিত লেখকদের জ্ঞানের আলোক রশ্নিতে আমি আলোকিত হতে চাই বলে আমি আসহাব উদ্দিন স্যারকে মনে প্রাণে স্মরণ করছি। আসহাব উদ্দিন আহমদস্যার বিশ্বাস করতেন পৃথিবীর সভ্যতার সব মানুষের সমান অধিকার।
সম্পদের যথাযথ বন্টনে তিনি যেমন বিশ্বাসী, তেমনি মনে করতেন যে সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান মানুষ অর্জন করেছে তাতে সকলের অধিকার নিশ্চিত করা চাই। তাঁর সহকর্মীদের সর্বদা বলতেন সাধারণ মানুষের উপযোগী করে লেখা উচিত। কারণ বেশীর ভাগ নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী কেউ পড়ে শোনালেই তাঁরা যেন বুঝতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখ। সহজ করতে গিয়ে তিনি লেখাকে কখনো তরল করে ফেলেননি। মানুষের প্রতি গভীর আস্থা ও ভালোবাসা ছিল বলে জনপ্রিয় লেখক হওয়ার দরকার বোধ করেননি। সাহিত্যকে পণ্যে পরিণত করেননি। তাঁর লেখার বক্তব্যে স্পষ্ট, তাঁর লক্ষ্য পাঠককে স্পর্শ করা। তাঁকে ভুলিয়ে রাখা কিংবা ভড়কে দেওয়ার জন্য তিনি সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত হননি। তিনি নিজেই দুঃখ করেছেন গল্প, কবিতা, উপন্যাস লিখতে পারেননি। যে মাধ্যমগুলোতে সমাজ জীবন চিত্র ফুটিয়ে তোলা সম্ভব কিন্তু তাঁর লেখার মূল্য অন্যখানে। তিনি লেখার মান নিয়ে ভাবেননি, আঙ্গিক বা বিষয়বস্তু নিয়ে ওনা। লিখেছেন মনের ক্ষোভ মেটাতে। মনের ঘৃনাকে প্রকাশ করতে বিবেকের দংশন থেকে বাঁচতে। এ লেখা তাঁর দলীয় রাজনীতি নয়। রিক্ত মানুষের নতুন সংস্কৃতি। দুর্গত মানুষের ঘরে কিংবা ছাদের উপর বসে আত্মগোপন জীবনে তিনি যা লিখেছিলেন তা আজ বাংলা সাহিত্যেও অমূল্য সম্পদ। সমাজের বিরাজমান শ্রেণীভেদ, শোষণ নিপীড়ন, অসঙ্গতি আসহাব উদ্দিনের সাহিত্যের দর্পনে তির্যকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এ দর্পনে ভেসে উঠেছে ক্ষোভ, দ্রোহ আর প্রতিবাদেও প্রতিচ্ছবি। কখনও প্রচন্ডভাবে আবার কখনও প্রচ্ছন্নভাবে। তাঁর জীবন ও সাহিত্যের অন্যতম লক্ষ্য ছিল মেহনতি মানুষের চিন্তাচেতনা সঠিকখাতে প্রবাহিত করা এবং অত্যন্ত সহজভাবে উক্ত মেহনতি মানুষকে শ্রেণী সচেতন করা।
আসহাব উদ্দিন স্যার জ্ঞান চর্চাকে সাধনা হিসেবে মান্য করতেন। মৃত্যু অবধি পড়ালেখার প্রতি তিনি ছিলেন প্রবল আগ্রহী, আর এই আগ্রহী কেবল নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে অন্যদেরকে আগ্রহান্বিত ও উদ্বুদ্ধ করে তোলার কাজে নিজেকে তিনি ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। একটি হচ্ছে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা আর অন্যটি হচ্ছে স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠা। তন্মধ্যে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা বাতিকের মতো ছিল্ মানবসেবার ভাবনাতে দেখা যায়, আর্ত নীপিড়ীতদের প্রতি স্বতোৎচারিত দরদ, মানুষের জন্য এটাই ছিল তাঁর জীবনের মূল দর্শন। মানুষের কল্যানে নিজেকে বিলিয়ে দেবার মধ্যেই তিনি খুঁজে পেতেন জীবনের সার্থকতা। তিনি ছিলেন দুঃস্থ, দরিদ্র, নিঃস্ব, নিরন্ন মজলুম জনতার বিপদকালের সহায় ও বন্ধু এবং ভরসার পাত্র।
প্রতিবাদী চেতনাতে দেখা যায়, আসহাব উদ্দিন শৈশবকাল থেকেই অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন এবং এটাই তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠে। সমাজের অন্যায় গুলোকে তিনি সরাসরি আঘাত করেছেন হাস্য ও কৌতুকের মধ্যে দিয়ে। চট্টগ্রাম কলেজের প্রিন্সিপাল পদ্মানী ভূষণ রুদ্রের অন্যদের বিরোধিতা করায় তাঁর কোঁপ দৃষ্টিতে পড়েন। প্রিন্সিপাল তাঁর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করায় তাঁকে চাকরি হারাতে হয়। নারী মুক্তি ভাবনা আসহাব উদ্দিন লিখেছেন অনেক কথা। নারীমুক্তি প্রশ্নে ভুমিহীন কৃষক কড়িহীন লেখক, বইয়ে উল্লেখ করেন নারী ও পরুষের আচার আচরণে পারষ্পরিক সম্পর্কে যে বিকৃত অসংগতি অরুচি। তিক্ততা মূল্যে বোধের অবক্ষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। তার মূলে রয়েছে চলতি সমাজ ব্যবস্থা। এ সমাজ নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের বাসস্থান, কর্মসংস্থান শিক্ষা চিকিৎসা ও বার্ধক্য ভাতার কোন গ্যারান্টি নেই। প্রতিটি নাগরিকের যোগ্যতানুযায়ী কাজ পাবার অধিকার নেই। যৌতুক প্রথার অমানবিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যৌতুক নগ্ন ঘুষ। এ বিষয়ে তর্কের অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না। কন্যাদায় গ্রস্থ পিতার অসহায়তার সুযোগ নিয়ে নগদ অর্থ ও মালামাল আদায় করা ঘুষ বই আর কিছুই নয়। এ দেশের প্রবাদ : জামাই হারামখোর আর বেড়াল হারামখোর, যৌতুকখোর জামাই ঘুষ খোর কাজেই হারামখোর পিতামাতা প্রতিশ্রুতি এই ঘুষ প্রদানে অসমর্থ হওয়া অসংখ্য নারীকে যৌতুক কোন ধর্মীই অনুশাসন নয়। এটা একটা ঘৃণ্য সামাজিক প্রথা। দিন পাল্টাচ্ছে কালের আবর্তে কত কুসংস্কার বিলীন হচ্ছে। ঘুনেধরা এই সমাজব্যবস্থায় নারীত্বে মূল্যায়ন করা হয় যৌতুকের টাকার বিনিময়ে। আর একজন মেয়ে অন্নবস্ত্রের সংস্থান হয় তার দেহের বিনিময়ে । তাই আত্মহত্যার সংখ্যা ভয়াবহ হারে বেড়ে চলছে।
আসহাব উদ্দিন ‘ঘুষ’ বইয়ে লিখেছেন ভদ্রবেশী ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ মানুষের ভন্ডামী লোভ লালসা এবং সীমাহীন স্বার্থপরতা কত তীব্র ও গভীর হতে পারে লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তাঁর সাহিত্যে। দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের রেওয়াজ রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। আর্থ সামাজিক ব্যবস্থা শোষণ ভিত্তিক হবার ফলে ঘুষ দুর্নীতির প্রকোপ দিন দিন বেড়ে চলছে। এ প্রসঙ্গে তিনি মধুযুগের ইংল্যান্ডের কবি লেংলেন্ডের পিয়ার্ম প্লাওম্যান কাব্যের উদ্ধিতি টেনেছেন, লেডিমিড় (ঘুষদেবী) মোহনী বেশ ধরে লাল সিরাজীর ভান্ড হাতে মেলায় আবিভূর্ত হয়েছেন। আর তার পানপত্র থেকে দেবী সর্বশ্রেণীর লোককে গ্লাসে গ্লাসে ঘুষের শরবত বিলাচ্ছেন। সবাই তো পান করছে। সে মাদকতা আজো কমেনি। বরং ঘুষদেবীর সরবত পান রকেটের গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে ঘুষ প্রদান এক রকম রেওয়াজ পরিণত হয়েছে। আগেকার দিনে ঘুষের লেনদেন গোপনে হতো, তাই এটা কে বাম হাতের কাজ বলা হতো। এত এখন ঘুষ ডান হাতের ব্যাপার হয়ে গেছে কারণ প্রকাশ্য ঘুষ চলে।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, সংগ্রামী রাজনীতিবিদ, সমাজ সচেতন লেখক অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদ চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার সাধনপুর গ্রামে ১৯১৪ সালে জন্মেছিলেন। পিতা মরহুম মুনশী সফর আলী চৌধুরী ছিলেন চা বাগানের ম্যানেজার। শৈশবে গ্রামের বাড়িতে মক্তবে ও মাইনর স্কুলে পাঠ্য জীবন শুরু হয়। ১৯৩২ সালে বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৩৪ সালে ২০ টাকা বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে আই এ ও ১৯৩৪ সালে একই কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে উরংঃরহপঃরড়হ সহ বি.এ পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ ক্লাশে ভর্তি হন, ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিভাগে এম. এ ডিগ্রী লাভ করেন। শিক্ষকতার মাধ্যমে আসহাব উদ্দিন কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে চট্টগ্রাম কলেজে যোগদান করেন। ১৯৪১ এর এপ্রিল পর্যন্ত উক্ত কলেজে ছিলেন। অতঃপর ১৯৪১ এর জুলাই মাসে চট্টগ্রাম ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে (বর্তমান মহসীন কলেজ) যোগদান করে ১৯৪৫ এর মাঝামাঝি সময় অবস্থান করেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৮ এর শেষভাগ পর্যন্ত লাকসাম নবাব ফয়জুন্নেসা কলেজে অধ্যাপনা করেন। এরপর ১৯৫০ এর মধ্যবর্তী সময় অবধি ফেনী কলেজে, ১৯৫০ এর মাঝামাঝি থেকে ১৯৫৩ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যাপনা করেন। শিক্ষকতা জীবনে শিক্ষক আন্দোলনের মুখপত্র দি টিচার পত্রিকার সম্পাদনা ও শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে আয়োজিত শিক্ষক কনভেনশনে প্রতিনিধিত্ব করেন। ইতোমধ্যে ঢাকায় ৫২’র ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। তার প্রচন্ড ঢেউ এসে লাগে কুমিল্লায়। কোন রাজনৈতিক নেতাকে খুঁজে না পেয়ে ছাত্ররা তাদের অতি প্রিয় শিক্ষক আসহাব উদ্দিন ও আবুল খায়েরকে নেতৃত্বে বরণ করে আন্দোলনের বিপজ্জনক ময়দানের মাঝখানে এনে দাঁড় করিয়ে দেন। এ প্রসঙ্গে আসহাব উদ্দিন লিখেছেন-‘ঢাকার নৃশংস হত্যাকান্ড আমার মনেও আগুন ধরিয়ে দিল। আর তো গৃহবন্দি হয়ে থাকা যায় না। দেশের সর্বত্র যেমন বাইশের সকালে কুমিল্লা শহরেও মাইলাধিক লম্বা এক মিছিল বের হল। কুমিল্লার সব লোক যেন রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। মিছিলের প্রধান স্লোগান ছিল ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, নুরুল আমিনের কল্লা চাই’। মিছিলে এসে দাঁড়ালাম। জীবনে এই প্রথম উম্মুক্ত অম্বরতলে ধূসর প্রশস্থ রাজপথে জনতার মাঝখানে এসে দাঁড়ানো। ১৯৫৩ এর ডিসেম্বরে এখানেই পদত্যাগ করে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে। ভাষা আন্দোলনের সূত্রে রাজনীতি, রাজনীতির সূত্রে বাম দীক্ষা তথা মার্কসবাদ গ্রহণ করে ধূলো-বালি ও কাদামাটি মাখা কৃষক শ্রমজীবী মানুষের সাথে তার শতকরা পঁচানব্বই জনের হাসি-কান্নার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। সামাজিক জীবনের মধ্যে সম্পূর্ণ নিমগ্ন হয়ে তিনি নিজের ব্যক্তিগত অস্তিত্বটাকে তার সঙ্গে সংযুক্ত করে দিয়েছিলেন। তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবন ১৯৫৩ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৯৫৪ সালে তিনি চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে যুক্তফ্রন্টের সদস্য হিসেবে এম.এল.এ (প্রাদেশিক সংসদ সদস্য) নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলার সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৭ সালে মাওলানা ভাসানীর ন্যাপ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং ন্যাপের কেন্দ্রীয় সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মাঃ লেঃ) এর সদস্য ও কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি। পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলে পরিণত হলে উক্ত সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ও বাংলাদেশ চাষি মুক্তি সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি। ১৯৭১ সালে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, বাঁশখালীতে প্রথম মুক্তিযুদ্ধের কর্মকান্ডের সূচনা ও এই যুদ্ধকে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধে রূপ দিয়ে জনগনতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত করার চিন্তা করেন। ১৯৮০ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রনে গণচীন সফর করেন। এ সময় আসহাব উদ্দিন আহমদ বামধারার রাজনীতিতে মতভেদ, পথ-ভিন্নতা, অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতা দেখে পীড়িত, বিব্রত ও অনেকটা হতাশ হয়েই সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। এই সমাজ চিন্তার দার্শনিক আজ থেকে ২৪ বছর পূর্বে ১৯৯৪ সালের ২৮শে মে আমার কাছ থেকে চির বিদায় নেন। তিনি বাঁশখালী তথা পুরো বাংলাদেশ এবং এশিয়া মহাদেশের অগ্নিপুরুষ ছিলেন।
পরিশেষে বলি আসহাব উদ্দিন আহমদের মতো জ্ঞানতাপস গুণীব্যক্তিরা তাদের নিজ গুণের বলে আমাদের কাছে চিরজীবন বেঁচে থাকবে। এবং তাদেরকে বেঁচে রাখার জন্য আন্তরিকভাবে সমাজ সচেতন মানুষরা এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: মো. কামাল উদ্দীন, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক।