মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের: বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিস! এ-যেন–
“দেহ অাছে, প্রাণ নাই!
“ভবন আছে, কার্যক্রম নাই!
বাঁশখালীতে দীর্ঘ ৭ বছরে ও উদ্বোধন হচ্ছে না ফায়ার সার্ভিস। বছরে অগ্নিকাণ্ডে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি, হতাশ সাধারণণ জনগণ। কবে হবে উদ্বোধন?
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার অতীব গুরুত্বপূর্ন একমাত্র ফায়ার সার্ভিস চালু হবে কবে? বাঁশখালীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবার পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভার দক্ষিণ জলদী দারোগা বাজার সংলগ্ন এলাকায় ২০১০ সালের মার্চ থেকে এই জনগুরুত্বপূর্ণ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ৮ বছর শেষে এর নির্মাণকাজ প্রায় সমাপ্তির পথে হলেও যেন শুধু ভবনটাই আছে। নেই কোনো কাযর্ক্রম। এই একটি ভবন নির্মানে দীর্ঘ আট বছর কাজ চলমান থাকার পর চলতি বছরের শুরুর দিকে এর নির্মাণ কাজ শেষ হলেও কাযর্ক্রম শুরু না করায় হতাশ সাধারণ জনগণ। এতে করে বৎসরে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে।
বাঁশখালীতে প্রতিনিয়ত সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডগুলো সাধারন জনগন নীরব দর্শকের মত চেয়ে থাকা ছাড়া কোন কিছু করার থাকে না। পেকুয়া অথবা সাতকানিয়া থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আসতে আসতে প্রায় ২-৩ ঘন্টা চলে যায়। ফলে অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব নিঃস্ব হয়ে যায়। এর ফলে প্রতি বৎসর অগ্নিকাণ্ডে প্রায় কোটি কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয় বাঁশখালীবাসীর। অগ্নিকাণ্ডের সময় দুর্ঘটনাস্থলে সহযোগিতার জন্য পাড়া প্রতিবেশীরা ঝাপিয়ে পড়লেও বেশীর ভাগ সময়েই তাদের দাড়িয়ে তামাশা দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। যুগ যুগ ধরে অপ্রতিরোধ্য অাগুনের লেলিহান শিখা এখানকার শত শত ঘর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্টান ধ্বংস করে হাজার হাজার মানুষকে পথে বসিয়েছে।
বিগত (৮ নভেম্বর) ২০১৭ ইং উপজেলার পৌরসভাস্থ উত্তর জলদী ভাদালিয়া ১ নং ওয়ার্ডে ফজর আলী তালুকদারের বাড়ীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। এই অগ্নিকান্ডে ২ বসতঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।এতে করে আগুন লাগার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আশে পাশের এলাকাবাসী অাগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ঘরের ভিতরে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রবাসী মৌ. হাফেজ তৈয়্যবের অন্ত:সত্বা স্ত্রী হামিদা আক্তার (২৯) এর পুরো শরীর পুড়ে মারা যায় এবং তার বড় মেয়ে ৫ম শ্রেনীর সমাপনী পরিক্ষার্থী তানজিনা সোলতানা সায়েমা (১২) ধোঁয়ায় অবরুদ্ধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
অপর দিকে এই পোড়া ক্ষত যেতে না যেতে আবারো পৌরসভার আস্করিয়া পাড়া ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫ বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে অন্তত ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়।
এ দিকে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নব নির্মিত এই ভবনে অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিনত হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস অফিসটি পরিত্যক্ত থাকায় এখন পরিণত হচ্ছে সকল প্রকার অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদকসেবীদের আখড়ায়। সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, অফিসের গেইটে নাম মাত্র তালা দেয়া থাকলেও কোন নৈশপ্রহরী না থাকায় দিনের বেলাতেও বেশ আরামে বসেই সকল প্রকার অসামাজিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ পাচ্ছে কিছু বখাটে শ্রেণীর মানুষ। রবিবার সন্ধ্যায় ছবি উঠাতে গেলে সংবাদকর্মী টের পেয়ে গাঁজা সেবনকারী ও তীর কাউন্টার (অনলাইন জুয়া) খেলতে আসা অনেকেই সটকে পড়ে। একজন গাঁজা সেবনকারী জানায়, জায়গাটি বেশ নির্জন এবং চারদিক বাউন্ডারী থাকায় আমরা সকলেই বসে আড্ডা করছি। সন্ধ্যার পর অনেক যুবক এখানে জুয়া, মদ ও গাঁজা সেবন করতে আসেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। ২০১০ সালে নির্মিত হয় উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি। এর পর থেকে বিভিন্ন জটিলতার কারণে এবং জনবল নিয়োগ না দেয়ার এখন পর্যন্ত অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি।
ফায়ার স্টেশন এলাকার আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন বিষয়টি আমরাও শুনেছি, এখন থেকে ওই এলাকায় পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হবে। সরকারি ভবনে কেউ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকলে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছুড়ি প্রেম বাজার, নাপোড়া বাজার, ছনুয়া মনুমিয়াজীর বাজার, শেখেরখীল মৌলভী বাজার, চাম্বল বাজার, বড়ঘোনা সকাল বাজার, গন্ডামারা বাজার, টাইমবাজার, উপজেলা সদর পৌরসভা, মিয়ার বাজার,রসরল বাজার, বৈলছড়ি কেবি বাজার, কাথরিয়া বাজার, কালীপুর রামদাস মুন্সীর হাট, গুনাগরি চৌমুহনী, জলদী হারুন বাজার, সাহেবের হাট, বাণীগ্রাম বাজার, চৌধুরী হাট, খানখানাবাদ বাজার, পুকুরিয়া চৌমুহনীসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিগত বছর গুলোতে ভয়াবাহ অগ্নিকান্ডের ফলে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামালসহ দোকানপাট ও ব্যানিজ্য কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে গেলে ও মৌখিক সহানুভূতি ছাড়া কতৃর্পক্ষ বা জনপ্রতিনিধিদের আর কোনো ভূমিকা থাকে না।
স্থানীয় পৌরসভা নিবাসী ভাদালিয়া বায়তুল ইরফান মাদ্রাসার পরিচালক আলহাজ্ব মাওলানা মনছুর, পূর্ব চাম্বল এলাকার ছাত্রলীগ নেতা মোঃ বেলাল,পুকুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ গিয়াস উদ্দীন ও গন্ডামারা এলাকার এম শওকত আজাদ জানান, বাঁশখালীতে বছরের পর বছর অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতি কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় আবার এতে করে অনেকে অগ্নি দগ্ধ হয়ে মারা যায়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে বাঁশখালীতে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসের নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো পযর্ন্ত কোন কার্যক্রম চালু না থাকায় নিমিষেই চোখের সামনে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায় । তারা প্রসাশনের কাছে শীঘ্রই বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম চালু করার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, বাঁশখালীবাসীর মানুষের কথা চিন্তা করে সরকার দারোগা বাজার এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের একটি ভবন ইতিমধ্যে প্রায় সমাপ্ত করেছে । তবে কী কারণে এখনও পর্যন্ত উদ্বোধন করা হচ্ছে না আমি জানি না। আমি ফায়ার সার্ভিসের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে খুব শীঘ্রই তাদের কার্যক্রম শুরু করার জন্য চেষ্টা করব এবং যথা সময়ে উদ্বোধন হলে তাদের কার্যক্রম চলবে বলে আশা প্রকাশ করি।