BanshkhaliTimes

পুকুরিয়ায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ

বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফরিদ আহমদ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই এলাকাবাসীর। তিনি এলাকায় সাংসদ ও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। তার নেতৃত্বে বৈদ্যুতিক মিটারের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে একটি চক্র। এ নিয়ে প্রতিকার পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন সাধারণ জনগণ। এছাড়া তিনি শঙ্খ নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন বলেও জানা গেছে। এতে নদীপাড়ের অনেক মানুষের বতসভিটা বিলীন হওয়ার পথে। বিষয়গুলো নিয়ে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা বেগম।
জানা যায়, ২০১৭ সালের জুন মাসে বৈদ্যুতিক মিটারের জন্য ৫ হাজার ২শ টাকা করে দিয়েছে পুকুরিয়ার তেচ্ছিপাড়ার ৬০ পরিবার। টাকা দেওয়ার ১ বছর ৪ মাস অতিক্রম হলেও পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ মেলেনি এসব পরিবারে। বিদ্যুৎ সংযোগের পরিবর্তে উল্টো হয়রানি করছেন ইউপি সদস্য ফরিদ আহমদ। এসব দুর্দশা থেকে পরিত্রাণ পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। শুধু তেচ্ছিপাড়ায় নয় পুকুরিয়ার বিভিন্ন জায়গায় মিটারের নামে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ফরিদ আহমদের নেতৃত্বাধীন চক্রটি। সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান ও তার ব্যক্তিগত সহকারী তাজুল ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে চক্রটি এসব কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম নাইমুল হাসান জানিয়েছেন, প্রতি ঘরে বৈদ্যুতিক মিটারের জন্য অফিসিয়াল ফি সর্বোচ্চ ৯শ টাকা। অয়ারিংসহ সর্বোচ্চ দুই আড়াই হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না। তবে অভিযোগটির ব্যাপারে তিনি এখনো অবগত নন বলে পূর্বদেশকে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ২০১৭ সালের জুনে পশ্চিম পুকুরিয়ায় ৬০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৫ হাজার ২শ টাকা করে সংগ্রহ করেন ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য ফরিদ আহমদ। বর্তমান সরকার মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় ২০ জন গ্রাহক স্বাক্ষর করে গত ২৩ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগকারী শামসুল আলম ও আবুল কাসেমসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, তিন মাসের মধ্যে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য প্রথমে ৫ হাজার পরে ২শ টাকা করে নেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে খুঁটি স্থাপন করা হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ মিলছে না। প্রতি বাড়িতে গ্রাহকরা অয়ারিংও করেছেন। কিন্তু মিটার সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। এরমধ্যে গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়ে প্রশাসনকে অবহিত করেছেন।
এদিকে তেচ্ছিপাড়ায় শঙ্খনদী থেকে প্রতিদিন ৭/৮টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদী গহববরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এলাকার বসতভিটা। ফলে শত শত পরিবার সহায়সম্পদ, বসতবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়া সংলগ্ন শঙ্খনদী হতে গত ৩ মাস যাবৎ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজার মেশিন দিয়ে টাগবোটের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে ব্যবসা করা হচ্ছে।
বালুগুলো চন্দনাইশের বরমা, আনোয়ারা, বরুমছড়া, পুকুরিয়া ও সাতকানিয়ার চরতিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ বালু উত্তোলনে ৩০ জনের সিন্ডিকেট সদস্যের মধ্যে ফরিদ আহাম্মদ, আমজাদ আলী, বেদার আলী, আবদুল খালেক, আলমাস ও জয়নাল অন্যতম। এছাড়াও ফয়সল, হুমায়ুনের নেতৃত্বে অপর একটি গ্রæপ বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন জোয়ারের সময় ৮-১০টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কার্গো টাগবোটগুলো ভর্তি করে বালু নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের সূত্রে আরো জানা য়ায়, শঙ্খনদী থেকে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে প্রতি ট্রিপ টাগবোট থেকে ২৮-৩০ হাজার টাকা করে আদায় করে ফরিদ আহমদের নেতৃত্বাধীন চক্রটি। দৈনিক ১০/১২টি টাগবোট দফায় দফায় বালু উত্তোলন করার ফলে নদীর স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুকুরিয়া তেচ্ছিপাড়া কুমারখালী ঘাট এলাকায় জোয়ারের সময় ৩টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে টাগবোটে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলন করা বালুগুলো নদীপথে বরমা সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য ফরিদ আহমদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘বিদ্যুতের বিষয়ে আমার একটি মতামত আছে তা হল, তেচ্ছিপাড়া এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। আমি ২০১৫ সালে অনেকের রেফারেন্স নিয়ে বিদ্যুৎ এনেছি। আর যে পরিবারগুলো অভিযোগ করেছে, তাদের মধ্যে ১৪ পরিবার এখনো ১ টাকাও দেয়নি।’
অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে যারা প্রভাবে থাকে তারা বালু উত্তোলন করেন। আমাদের এলাকাটি বাঁশখালীর মানচিত্রে নেই। সেখানে বর্তমানে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। এসব উন্নয়নকাজে আমি তাদের কাছ থেকে বালু কিনে নিই।’
অবৈধ কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে কেন বাধা দেননি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি বাধা দিয়েছি। শুধু তেচ্ছিপাড়ায় নয়, হাজিগাঁওয়েও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে।’
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘পুকুরিয়া তেচ্ছিপাড়া এবং হাজিগাঁওয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি সত্যত্য যাচাই করে শীঘ্রই আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’
এ বিষয়ে বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোমেনা বেগম পূর্বদেশকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করা হচ্ছে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. আলমগীর দুই-এক দিনের মধ্যে এ প্রতিবেদন জমা দিবেন। যদি বৈদ্যুতিক মিটারের নামে টাকা নিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই টাকা ফেরত দিতে হবে।’
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে বলেন, ‘আমি খবর নিচ্ছি। তার বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সূত্র: পূর্বদেশ

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *