মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী টাইমসঃ

বাঁশখালীতে পল্লী বিদ্যুতের লাগামহীন নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে স্থানীয় ভুক্তভোগী গ্রাহক।
সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা বলা হলেও এর সুফল হতে বঞ্চিত বাঁশখালীবাসী। এ সমস্যা নিরসনে সাধারণ গ্রাহকদের পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন বরাবর বারবার হস্তক্ষেপ কামনা করা হলেও সকলেই যেন চুপ ও নির্বিকার।
পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমরা প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ বিতরণ করছি কিন্তু বাস্তবচিত্র এর বিপরীত বলে মন্তব্য এলাকাবাসীর।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় সারা বছরই থাকে পল্লীবিদ্যুৎতের ভেল্কিবাজি। চলছে গ্রীষ্মের তাপদাহ ও রমজানের ঈবাদত বন্দেগীর অতীব গুরুত্বপূর্ণ মাস মাহে রমজান। ঈবাদতের জন্য রাত্রি জাগা থেকে শুরু করে সারাদিন মগ্ন থাকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ। তারাবীর নামায, সেহরী ও ইফতারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাঁশখালী জুড়ে লোডশেডিং অব্যাহত রয়েছে। বছরের সারা মাসে বিদ্যুৎতের ভেল্কিবাজিতে এমনিতেই অতি9ষ্ট বাঁশখালীবাসী। দিনের বেশির ভাগই বিদ্যুৎ থাকেনা,ভসন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে চলছে অনবরত বিদ্যুতের যাওয়া-আসা । প্রচন্ড গরমে সারাদিন বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিং ও অতিরিক্ত ভ্যাপসা গরমের কারণে জনজীবন অসহনীয় হয়ে উঠছে। রাতে দীঘর্ক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ গরমে নিন্দ্রাহীন অবস্থায় রাত্রী পার করছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছে ছোট ছোট শিশু ও বয়স্ক মানুষ। একদিকে প্রচন্ড গরমের সঙ্গে বাঁশখালী জুড়ে চলছে নতুন নিয়মে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হওয়া ছাড়াও অফিস আদালতে কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। শিশু-বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা জটিল অসুখে। গত একমাসে দৈনিক গড়ে ১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছে না বলে দাবি এলাকাবাসী। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর সাথে যদি কালবৈশাখীর একটু বাতাস হয় তবে বিদ্যুতের আর কোন দেখা মিলে না। কখনো অঘোষিত গাছ কাটার অজুহাত, কখনো সামন্য বাতাস হলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, রাতের পর রাত বিদ্যুৎ আর আসে না। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় যেন বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি।
এক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আসতে না আসতেই বন্ধ হয়ে যায় অন্য এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ। এত ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে লাইট, টিভি, ফ্রিজ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রিক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে গ্রাহকদের। পবিত্র রমজানের শুরু থেকে তীব্র গরমের মাঝে লোডশেডিংয়ে বিপযর্স্ত হয়ে পড়েছে এই উপজেলা ৮০ হাজারের চেয়ে অধিক গ্রাহক। সরজমিন দেখা যায়,ভঅতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে বিভিন্ন সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্টান ও ব্যবসায়ীরা সময় মত তাদের পণ্য গ্রাহকের কাছে দিতে পারছে না। এতে করে সাধারণ মানুষ তীব্র ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রীতে ঘনঘন লোডশেডিং এবং দিনে ৭-৮ বারেরও বেশি বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করতে দেখা গেছে।
পল্লী বিদ্যুৎ বাঁঁশখালী জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৮০ হাজারের অধিক। তন্মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ৭০৮১৩ হাজার, বাণিজ্যিক ৪৮০২ হাজার,শিল্প ৩৪৩,সেচ সংযোগ রয়েছে ৫৮০টি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল,কলেজ,মসজিদ,মাদ্রাসা,মন্দির, গীর্জায় ১১৬৪ । সর্বমোট ৭৭৭৫৫ বাকীগুলো চলমান সংযোগ। এছাড়া রয়েছে পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তায় সড়কবাতি। ৩৩/১১ কেভি উপ-কেন্দ্র ১টি (২০ এমভিএ)। বর্তমানে ৪ টি সাব স্টেশন চালু রয়েছে। তবে এ সমস্ত সাবস্টেশন গুলোতে সর্বোচ্চ লোড ১৭.৫০ মেগাওয়াট। ১৪ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভাসহ ৩৯৭ বর্গ কিলোমটার আয়তনের এ উপজেলার প্রায় গ্রামে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুতায়নের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা যায়।
চাম্বল এলাকার বাসিন্দা তরুন আইনজিবী এডভোকেট সাজ্জাত হোসেন তালুকদার বলেন, “রমজানে ঘনঘন লোডশেডিং আমাদের জনজীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। দিন এবং রাতের বেলায় বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকেনা। যার ফলে এই রমজান মাসে মানুষের ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হয়, দিনে ৭-৮ ঘন্টাও আমরা বিদ্যুৎ পাই না।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তৌহিদুল আনোয়ার বলেন- “বাঁশখালীতে যেই হারে বিদ্যুৎতের সমস্যা হয় আমার চাকুরী জীবনে আমি আর কোথাও দেখিনি। আমাদের এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে জেনারেটর থাকলেও সরকারী ভাবে তেমন কোন জ্বালানি তেল এর ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথে পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্ধকার রূপধারণ করে এবং অতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। বিদ্যুতের ব্যাপক হারে লোডশেডিং এর কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত রোগীরা তীব্র গরমে অতিষ্ট হয়ে পড়ে। যেখানে রোগীরা একটু সুস্থতা পাওয়ার জন্য সেবা নিতে মেডিকেলে আসে অথচ সেখানে রোগীরা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আরো অসুস্থতা ভোগ করে। অনেক সময় অপারেশন করতে গেলে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টার বিদ্যুৎ থাকে না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রক্ত, প্রস্রাব ও কফসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেও ব্যাপক কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়।”
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–১ বাঁঁশখালী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. নাইমুল হাসান জানান, বাঁশখালীতে যথেষ্ট বিদ্যুতের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সে হারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। অনেক সময় সংযোগ তারে গাছের ডালপালা ছাঁটাই করতে গিয়ে সাময়িক বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে কাজ করতে হয়। তবে চেষ্টা করি সর্ব্বোচ্চ বিদ্যুৎসেবা প্রদান করতে। তাছাড়া লোডশেডিংয়ের বর্তমান সমস্যা আমাদের সৃষ্ট না। এটি চন্দনাইশ গ্রিডের সমস্যা। কারণ দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া হয়ে দীর্ঘ ৪৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ আসে। তবে গুণাগুরি থেকে সাতকানিয়া হয়ে রাস্তা গুলো পাহাড়ী এবং অতিরিক্ত খারাপ হওয়ায় বিভিন্ন সময় জনবল সংকট হওয়ার কারণে ত্রুটির সৃষ্টি হয়। যার ফলে সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়ে থাকে। এ গ্রিডে ৩০ মেগাওয়াট লোড নিতে পারে। এর মধ্যে ইনকামিং ব্রেকারে কারিগরি সমস্যার কারণে তা সম্পূর্ণ লোড নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাঁশখালীতে ৮০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রতিদিন আমাদের চাহিদা লাগে ২২ মেগাওয়াট, ইতিমধ্যে আমরা ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎই পাচ্ছি। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতেছি। যার ফলে তেমন কোন বড় ধরনের লোডশেডিং হচ্ছে না। পাশাপাশি বাঁশখালীর সরকারী বেসরকারী অফিস এবং বিভিন্ন প্রতিষ্টান থেকে ৬ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বাকী, তারমধ্যে বাঁশখালী পৌরসভায় ১২ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বাকী রয়েছে।।তিনি আরো বলেন, ঝড়, বৃষ্টি ও তীব্র বাতাস যদি না হয়, পরিবেশ যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে কোন ধরনের লোডশেডিং হবে না।