বাঁশখালী ( Banshkhali ) বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি উপজেলা। যেটি বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। যে উপজেলাটি দেশ পেরিয়ে বিদেশেও সুখ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে আপন শক্তিতে। বাঁশখালীতে জন্মেছিল উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ডঃ আবদুল করিম, দেশের প্রথম মহিলা ভাস্কর নভেরা আহমেদসহ অসংখ্যা গুনীজন। তাছাড়াও বাঁশখালী ( Banshkhali ) জুড়ে রয়েছে অসংখ্যা পর্যটন স্পট। যা বাঁশখালীকে দেশ পেরিয়ে বিদেশেও পরিচিত করে দিচ্ছে। এই স্পটগুলোর কারণে দেশ বিদেশের পর্যটকের কাছে বাঁশখালীর অনেক কদর,মান,মর্যাদা। দেশ বিদেশের পর্যটকের কাছে কদর থাকলেও আমরা বাঁশখালীবাসীর নিকট তার কদর খুবই কম! যদি কদর থাকতো তাহলে আমরা পর্যটন স্পটগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতাম। পর্যটন স্পটগুলো তথা বাঁশখালীর উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতাম। কিন্তু আমরা তাতে ব্যর্থ হয়েছি।
বাঁশখালীতে কি আছে, সেটা বলতে চাই না। বাঁশখালীতে কি নেই, সেটা জানতে চাই! বাঁশখালীর মতো এতো কিছু কি দেশের অন্য উপজেলায় আছে! তারপরও কেন বাঁশখালী ( Banshkhali ) অবহেলিত! নিশ্চয় আমাদের দোষে। আমাদের বাঁশখালীর কর্তাব্যাক্তিরা অনেক বেশি যোগ্য। তারা চাইলে বদলে দিতে পারে অবহেলিত বাঁশখালীকে। বাঁশখালীর উন্নয়নের স্বার্থে যদি দলমত নির্বিশেষে বাঁশখালীর সব নেতা,শিল্পপতি,শিক্ষাবিদ এক টেবিলে বসে তাহলে খুব কম সময়েই বদলে যাবে বাঁশখালী। তাই সকল নেতা,কর্তাদের উচিত- বাঁশখালীর উন্নয়ন,অগ্রগতি নিয়ে ভাবা। নয়তো আমাদের কি প্রয়োজন তাদের নেতা হিসেবে মানার! কি প্রয়োজন তাদের সম্মানিত করার!
অনেকেই হয়তো এখনো জানেন না বাঁশখালীতে কি কি আছে! আসুন সংক্ষিপ্ত বর্নণাসহ একবার জেনে নিই- বাঁশখালীতে কি কি আছে।
বাঁশখালী ( Banshkhali ) চা-বাগানঃ বাঁশখালী ( Banshkhali ) উপজেলার প্রবেশদ্বার পুকুরিয়া ইউনিয়ন। এখান থেকেই যাত্রা শুরু বাঁশখালী উপজেলার। এই ইউনিয়নের কয়েক’শ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে বাঁশখালী চা-বাগান। যেখানে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে চা-পাতা। ফলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাঁশখালী চা-বাগান। এই চা-বাগানটি তার ভালো মানের চা-পাতার মাধ্যমে বাঁশখালীকে দেশব্যাপী পরিচিত করে দিচ্ছে। যার কারণে জনপ্রিয় এ পর্যটন স্পটটিতে প্রতিদিন নামছে পর্যটকের ঢল। বিভিন্ন ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভ্রমনের স্পট তালিকায়ও স্থান পায় বাঁশখালীর এই চা-বাগান। তাছাড়া এই চা-বাগানে বর্তমানে ৭০০ এর অধিক সংখ্যাক মানুষ কর্মরত আছেন। যদি চা-বাগানটির আরেকটু উন্নয়ন করা যায় তাহলে নিঃসন্দেহে এটি দেশের অন্যতম পর্যটন স্পটের মর্যাদা পাবে। যার ফলে উপকৃত হবে স্থানীয়রা তথা বাঁশখালীবাসী, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের।
সাঙ্গু নদীঃ বাঁশখালীর সীমানা সাঙ্গু নদীর উপর অবস্থিত তৈলারদ্বীপ সেতু থেকে। সাঙ্গু চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে কয়েকটি নদীর উৎপত্তি তার মধ্যে সাঙ্গু নদী অন্যতম। এ নদীর উৎপত্তিস্থল বান্দরবান জেলার মদক এলাকার পাহাড়ে। এটি উৎপত্তিস্থল থেকে দক্ষিন চট্টগ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। উৎপত্তিস্থল থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এ নদীর দৈর্ঘ্য ১৭০ কি.মি। নদীর দু’পাশে সবুজের সমারোহ। শীতল হাওয়ায় উড়ে মাথার চুল। নদীর ঢেউ জুড়িয়ে দেয় হৃদয়। মাঝিরা দাড় বেয়ে যায় নৌকার। সাঙ্গু নদী পর্যটকদের নিকট অতি পরিচিত একটি নাম। যেই নদীর পাড়ে বিকেল বেলায় পানির স্রোতের সাথে বাড়ে পর্যটকের স্রোত। সাঙ্গু নদীর বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়ন অংশে দেখা যায় অতিথি পাখির দল, ডিঙ্গি নৌকার সারি। যা মুগ্ধ করে পর্যটকদের।
বাঁশখালী ( Banshkhali )সমুদ্র সৈকতঃ পুরো বাঁশখালীর পশ্চিমালাকা জুড়ে বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতের অবস্থান। যেটিকে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা বলে পর্যটকেরা স্মীকৃতি দিয়েছে। অনেকেই এটিকে ‘মিনি কক্সবাজার’ বলে অভিহিত করে থাকেন। সকাল থেকেই প্রতিদিন জোয়ার-ভাটার তালে তালে নামে পর্যটকের ঢল। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতে। উপকূলজুড়ে ঝাঁউ গাছের শীতল হাওয়া ছুয়ে যায় মানুষের হৃদয়। সমুদ্রে ভাটা পড়লে মাটি ফেটে বের হয় লাল কাঁকড়া। এসব মনোরম দৃর্শ্য দেখতে প্রতিদিন পর্যটকরা ছুটে আসছে এই অঘোষিত পর্যটন স্পটে। দুঃখের বিষয়- অবহেলার কারণে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে উপকূলজুড়ে অবস্থিত সৌন্দর্য বর্ধনকারী ঝাঁউ বাগান। যদি স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে উপকূলকে সমুদ্রের পানির প্রবল ধাক্কা থেকে রক্ষা করা যায়। তাহলে হুমকির মুখ থেকে রক্ষা পাবে ঝাঁউ বাগানসহ উপকূলে বসবাসকারী জনগন।
বাঁশখালী ইকোপার্কঃ পাহাড় পর্বতে ঘেরা শীলকূপ ইউনিয়নের পূর্বে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট ইকো পার্কের অবস্থান। ২০০৩-২০০৪ সালের দিকে যেটি মানুষকে কাছে টানতে শুরু করে। চারিদিক থেকে মানুষ ছুটে আসে ইকো পার্কের নীড়ে। দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু এখানেই অবস্থিত। আছে সুউচ্চ দুটি টাওয়ার। যেই টাওয়ারে ওঠলে পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর দেখা যায়। সবুজ অরণ্য,প্রকৃতি,মিনি চিড়িয়াখানা, লেকসহ বেশ কয়েকটি উপভোগ্য জিনিস নিয়ে ইকোপার্ক দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। চলমান শীত মৌসুমে ইকো পার্কে আগমন ঘটে অতিথি পাখির। সম্প্রতি কর্তাব্যক্তিদের অবহেলায় ইকোপার্কের ঐতিহ্য হুমকির মুখে পড়েছে। ইকোপার্কে এখন নেই কোন উন্নয়ন। ইকোপার্কের ঐতিহ্য রক্ষায় যা কিছু আছে তাও ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সরকার চাইলে এমন পর্যটন স্পটগুলোর উন্নয়ন সাধন করে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব আদায় করতে পারে।
নাপোড়া তারেক পার্কঃ সম্প্রতি নাপোড়ায় গড়ে ওঠেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ধারণ করে অর্গানিক ইকো ট্যুরিজম স্পট (তারেক পার্ক)। যেটি ইতিমধ্যে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমান আধুনিক যুগে গ্রামীন ঐতিহ্য ধ্বংসের পথে। সেখানে গ্রামীন ইতিহাস-ঐতিহ্য ধারণ করা এমন স্পট সত্যিই গুরুত্ববহ। এই স্পটটি এখন শুধুমাত্র যাত্রা শুরু করেছে। আগামীতে এইটিকে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পটে রূপান্তরিত করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বাঁশখালীতে রয়েছে পর্যটকদের মন জুড়ানো প্রাচীন বখশি হামেদ জামে মসজিদ, জলকদর খাল,কয়লা বিদ্যুত, মলকাবানুর দীঘি, অসংখ্যা পীর আউলিয়ার মাজার, মৃৎশিল্প,পাহাড়-পর্বতসহ মন জুড়িয়ে দেওয়ার মতো অনেক কিছু।
যদি একটু চেষ্টার মাধ্যমে উপরিউল্লিখিত স্পটগুলোকে সুরক্ষিত রাখা যায় তাহলে বাঁশখালী দেশের অন্যতম উপজেলায় পরিণত হতে বেগ পেতে হবেনা। এসব স্পটগুলোর দিকে একটু সুদৃষ্টি দেওয়া গেলে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে বাঁশখালীর দৃর্শ্য। বেড়ে যেতে পারে বাঁশখালীর সাথে বাঁশখালীবাসীর দাম,মূল্য। এ বিষয়ে বাঁশখালী ( Banshkhali ) তথা চট্টগ্রামের নেতা,কর্তাব্যাক্তিদের সুদৃষ্টি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
লেখক: তাফহীমুল ইসলাম
তরুণ লেখক