মু. মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী টাইমস: বাঁশখালীর সন্তান দৈনিক পূর্বদেশের স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক রাহুল দাশ নয়ন সম্প্রতি সপরিবারে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। পরিবারের ৫ সদস্য সহ করোনামুক্তির পর তিনি মানুষের জীবন বাঁচানোর তাগিদে প্লাজমা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
করোনা জয়ী হওয়া এই সাংবাদিক জানান, ঈদের দিন রাতে (২৫মে) গায়ে জ্বর আসে। আলাদা হয়ে যাই। ২৬ মে সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পরামর্শে কোভিড টেস্ট করি। ৩০মে রেজাল্ট আসে পজেটিভ। জুনের ১ তারিখ মৃদু শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাৎক্ষনিক একাই প্রাইভেট গাড়ি যোগে ফিল্ড হাসপাতালে ভর্তি হই। সেদিনই (১) জুন আমার পরিবারের ৫ সদস্যের নমুনা নেয়া হয়। (আমার বাবা, মা, স্ত্রী, কন্যা ও চাচাতো ভাই)। আমিও ৩ জুন ফিল্ড হসপিটালে ২য়বার নমুনা দিই।
আমার পরিবারের ৬ জুন রেজাল্ট আসে। আমার ৪ বছর বয়সী মেয়ে ছাড়া বাকি ৪ জন পজেটিভ। চিন্তায় পড়ি মেয়েকে কিভাবে আলাদা রাখবো। সাহস করে তার মা বললো আমরা সবাই সুস্থ আছি, মেয়েকে সাথেই রাখি। পরদিন আমার নমুনা রেজাল্ট নেগেটিভ আসলে সবাই একটু নির্ভার হয়। আমি এরপরেও চিকিৎসকের পরামর্শে কোয়ারেন্টাইনে চলে যাই। পরে আবারো ৩য় দফা নমুনা দিই ১২ জুন। আবারো রেজাল্ট নেগেটিভ আসে ২১জুন।
এরমধ্যে আমার পরিবার ২য় নমুনা দেয়। সেদিন সবার সাথে আমার মেয়ের নমুনাও দিই। ২০জুন ফলাফল আসে সবাই নেগেটিভ।
৫ সদস্য নেগেটিভ হলেও আমার ফলাফল না আসায় একটু চিন্তিত হলাম। অবশেষে (২১জুন) দীর্ঘ ২৭ দিন পর আমরা সবাই আনুষ্ঠানিকভাবে করোনামুক্ত হই।
এই করোনাকালীন সময়ে আমি হাসপাতালে থাকলেও পরিবার নিয়ে বাড়তি উৎকন্ঠায় ছিলাম। প্রতিবেশি এক বড় ভাই (শেখর) ও বন্ধুরা ঘরে ওষুধ, দুধ, ডিম, মাছসহ যাবতীয় বাজার করে দিয়ে সহায়তা করতো।
২৫ মে-২১জুন পর্যন্ত আমার উপর যেন একটি বোঝা ছিল। সবার শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলেও নেগেটিভ আসার চিন্তা মাথায় ভর করেছিল। এটা একধরনের মানসিক চাপ বলা চলে। বাসায় যখন একা থাকতাম রাতে প্রচন্ড টেনশন হতো। ঘুম হতো না।
আমার স্ত্রী এসএলইর মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তারে নিয়ে ভয়ে ছিলাম। আবার আমার বাবার বয়স প্রায় সত্তর ছুঁই ছুঁই হওয়ায় সে ভয়ও ছিলো। সব বাধা পেরিয়ে অবশেষে রক্ষা পেয়েছি।
আমার অসুস্থতার সময় প্রতিদিনই আমার পরিবার ও আমার খোঁজ নিত সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ শুভানুধ্যায়ীরা। সবার ভালোবাসাতেই করোনাকালীন সময়গুলোতে আমি মানসিক শক্তি পেয়েছিলাম।
জ্বর থাকলে জ্বরের ওষুধ, কাশি ও গলাব্যাথার জন্য নির্ধারিত ওষুধেই উপসর্গ কমে যায়। তবে প্রাকৃতিক নির্যাসে তৈরি গরম পানির ভাব, নিয়মিত গরম পানি ও রঙ চা খেলে করোনা থেকে বাঁচা সম্ভব।
যাদের এজমা, কিডনী সমস্যা, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্ট আছে তাদের জন্য এ রোগ বিপদের।
করোনার লকডাউন শুরুর পর থেকেই এলাকায় নিয়মিত মানবিক কাজে জড়িত ছিলাম। দাতা সংস্থা মাষ্টার নজির আহমদ ট্রাস্টের ত্রাণ নিয়ে ছুটেছি বিভিন্ন ইউনিয়নে। ব্যক্তিগতভাবেও অনেক গরীব দুঃখীর পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। তবে এখন আমার একমাত্র চিন্তা প্লাজমা দিব এবং মানবিক কাজে আবারো নিজেকে নিয়োজিত করবো।