বাঁশখালী সড়কের দীর্ঘদিনের দুর্দশা পরিবহন নৈরাজ্য বন্ধে কার্যত উদ্যোগ নেই বললেই চলে। কোন কর্তৃপক্ষই যেন কর্তৃত্ব ফলাতে পারছেনা এই অদৃশ্য শক্তির উপর। যুগযুগ ধরে চলে আসা মান্ধাতা আমলের অচলায়তন ভেঙে দেয়ার মুরোদ যেন কারোই নেই। মালিক সমিতি নামধারী অসাধু সিন্ডিকেটিদের কালো হাতের থাবায় জিম্মি বাঁশখালীর লক্ষ লক্ষ যাত্রীসাধারণ।
বিশেষ বিশেষ ছুটি দিনের ছুঁতোয় কিংবা প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নামলেই পরিবহন শ্রমিকদের ডাকাতরূপী মুখোশ উন্মোচিত হয়। যাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতোপূর্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করলেও তার খেসারত হিসেবে টিকেটমূল্য কয়েকদফায় বাড়িয়ে দেয় মালিক সমিতির রথি-মহারথিরা।
পরিবহন সংক্রান্ত হাজারো অভিযোগ-আন্দোলনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া সামাজিকমাধ্যম থেকে শুরু করে মানুষের মুখে মুখে ঘুরপাক খেলেও কার্যত সুফল মিলছেনা। কর্তাব্যক্তিরা শুনেও যেন কানে আঙুল দিয়ে বসে আছেন।
এসব আন্দোলন-অভিযোগকে নিষ্ফল আবেদন উল্লেখ করে পরিবহন সমস্যারোধে বিকল্প উদ্যোগকে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী শিক্ষার্থী বর্তমানে মানবসম্পদ ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বাঁশখালীর সন্তান ইন্তিজামুল ইসলাম।
নিচে তাঁর প্রস্তাবটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-
‘এবার বলি আমাদের কমন হাহুতাশগুলো কীভাবে ভুল, এবং কেন যাচ্ছেতাইভাবে যেখানে সেখানে ব্যক্ত করা ঠিক নয়। এই যে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে এত অস্থিরতা, এত ভার্চুয়াল ইভেন্ট-গ্রুপিং, গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন তো এগুলো দিয়ে কি আদৌ কিছু হয়? বাই দ্য ওয়ে, একটা কথা বলে রাখি মূল কথায় যাওয়ার আগে। আমি চাই আমার বা আমাদের এসব প্রচলিত ধারনার বিপরীত মতামতগুলো নিয়ে পর্যালোচনা, সমালোচনা, এবং প্রত্যুত্তর আসুক। স্থুলতা বাদ দিয়ে গভীর চিন্তাধারার বিকাশ ঘটুক। আশা করি বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ এই কথাটা মাথায় রেখে কাউন্টার আর্গুমেন্ট তৈরির চেষ্টা করবেন। হ্যা, যা বলছিলাম, এসব ভার্চুয়াল আয়োজনের আল্টিমেট ফলাফল কী? আমি কি করতে চাই শুনুন।
অনেকদিন আগে, প্রায় আট থেকে দশ বছর আগে, মাসিক একটি পত্রিকায় একটি সাইন্স ফিকশন পড়েছিলাম। রায়হান এবং রাইয়ান নামের দুই বন্ধু। রায়হান বেশ প্রতিবাদী। কোন অন্যায় সে দু’চোখে দেখতে পারে না। প্রতিবাদে নেমে পড়ে। সে পরিবর্তনে বিশ্বাসী। তার বিশ্বাস, একদিন নিশ্চয়ই মানুষ একত্র হবে সব অন্যায়ের প্রতিবিধানকল্পে। অন্যদিকে রাইয়ানের এসবে কোন আগ্রহ নেই। তার মতে, এসব উড়ু উড়ু প্রতিবাদ আসলে কোন কাজের না। শুধু শুধু গলা ফাটানো। একদিন খবর আসলো, অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর শেষমেশ ভারত “বাংলাদেশিদের মরণফাঁদরূপ” টিপাইমুখ বাধ উদ্ভোধন করবে। প্রতিবাদের ঝড় উঠলো সারা দেশে। রায়হানের রক্ত গরম। এতবড় অন্যায় সে কিছুতেই মেনে নিতে পারলো না। প্রতিবাদে প্রতিরোধে সে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিল; মিছিল মিটিং লেখালেখি জনমত গঠন আরো কত কি! অন্যদিকে রাইয়ান চুপচাপ। কোন সাতে পাঁচে নেই সে। খালি মাঝে মাঝে সপ্তাহখানেকের জন্যে কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করলেও বলে না। মাস দেড়েক পর সে রায়হানকে ডাকলো। আন্দোলন সংগ্রাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। শেষে বললো, আগামীকালের পর তোর আর আন্দোলন করা লাগবে না! পরের দিন খবর এলো, কী এক অজ্ঞাত কারনে টিপাইমুখ বাধ ধুলোয় মিশে গেছে। ধনীর দুলাল রাইয়ানের একটা ল্যাব আছে। ছোটবেলা থেকেই রোবোটিকস-এ অনেক উৎসাহ তার। সাগর তীরে বিশাল এক জায়গা লীজ নিয়ে সেখানে অত্যাধুনিক এক আন্ডারগ্রাউন্ড ল্যাব গড়ে তুলেছে। টিপাইমুখের পরিকল্পনা শুরু হওয়ার পর থেকেই সে কাউন্টার প্ল্যান গড়ে তোলে এটা ধ্বংস করার। আজকের এই নিউজ তার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফসল। কেউ কোন ক্লু বের করতে পারল না এই ঘটনার।
আপাতদৃষ্টিতে বাচ্চাসুলভ, বাস্তবতা বিবর্জিত মনে হলেও সার্বিকভাবে আমি রাইয়ানের চিন্তাধারায় বিশ্বাসী। আমাদের বাঁশখালীর প্রতিশ্রুতিশীল এক উদ্যোক্তাকে বলেছিলাম, আপনি এখানে নিজস্ব বাস সার্ভিস চালু করুন। তাইলে একাধারে অনেকগুলো কাজ হবে; ব্যবসায় ব্যবসা হবে, সেবা হবে, বড় একটা অন্যায়ের প্রতিবিধান হবে, এবং ফাইনালি, মানুষের মনে জায়গা পাবেন। ওনার জবাব, পুরাতন সিন্ডিকেটগুলো টিকে থাকতে দিবে না। রাজনীতি জড়িয়ে যাবে। ব্যস! এখানেই শেষ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলার চেয়ে অন্যায়কারীদেরকে সমূলে উৎপাটন করে দিলে ভাল হয় না? আমরা উদ্যোক্তারা যা করতে পারি তা হলো, সিন্ডিকেট গড়ে তুলে নিজেদের একটি পরিবহন সংস্থা গড়ে তোলা। এই ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কোন কারন নেই। সততার ব্যবসায় মানুষ পাশে থাকবে। পয়সাওয়ালা মুরুব্বীদের আহ্বান জানাই এই বিষয়ে ভেবে দেখার।
ভার্চুয়ালি মানুষকে প্রতিবাদের সঙ্গী হওয়ার আহ্বানের কাজে যে সময়টা দিতেন, আজ থেকে অন্যায়ভাবে ভাড়া আদায়কারীদের স্থলাবিষিক্ত নতুন কোন সার্ভিস চালু করার জন্যে অর্থনৈতিক ফোরাম গড়ার কাজে সে সময়টা দেয়ার চেষ্টা করুন। শুরুতে বলেছিলাম, উপজেলার মত ছোট পরিসর নিয়ে চিন্তা করার কাজ আমাদের মত চুনোপুটিদের নয়। কেন জানেন? কারন দুর্নীতি, অন্যায্য ভাড়া আদায়, দায়িত্বে গাফলতি- ইত্যাদি সমস্যাগুলো আমাদের জাতীয় সমস্যা। এগুলোর সমাধান সরকার ছাড়া সম্ভব নয়। আর আপনি আমি সরকারী নীতি নৈতিকতা পরিবর্তনের অত উচ্চাশা করে আদৌ কোন লাভ নেই। আমরা যা পারি সেটুকু অন্তত করি। চিন্তা করে দেখুন, সরকারী পলিসি, নীতি এবং দুর্নীতিগুলোর পর্যালোচনা সমালোচনা করার জন্য যতগুলো নাগরিক কমিটি আমাদের দেশে আছে, সেগুলোর পরিবর্তে যদি সমপরিমাণ ছোটবড় অর্থনৈতিক ফোরাম থাকত- ঐ যে বাস সার্ভিস উন্নত করার জন্যে যে ফোরামের কথা বললাম ওরকম- তাইলে দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্মে সত্যিকার অর্থে ভাটা পড়তো কিনা। অবশ্যয়ই পড়ত। ভেবে দেখবেন আশা করি।’