BanshkhaliTimes

নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের হাতছানি বাঁশখালী সমুদ্রসৈকত

আরকানুল ইসলাম: বাঁশখালী সমুদ্রসৈকতের দৈর্ঘ প্রায় ৩৮ কিলোমিটার বলে জেনেছি, কেউ কেউ বলেন ২৭ কিলোমিটার। সে যা-ই হোক, বাঁশখালীজুড়ে যে এত দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত আছে সেখবর হয়তো অনেকেই জানেন না, কেউ কেউ জানেন।
আনোয়ারা তৈলারদ্বীপ ব্রীজ হয়ে শঙ্খনদীর যে মুখটি বঙ্গোপসাগরে মিশেছে সেটা বাঁশখালী হয়েই মিশেছে। রায়ছটা থেকে শুরু হয়ে বঙ্গোপসাগরের বাঁশখালী অংশটি গন্ডামারা-বড়ঘোনা-ছনুয়াকে ছুঁয়ে গেছে। এই দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতকে আমরা কয়েকভাগে ভাগ করতে পারি।
১. খানখানাবাদ পয়েন্ট
২. বাহারছড়া পয়েন্ট
৩. কাথরিয়া-বাগমারা পয়েন্ট এবং
৪. গণ্ডামারা পয়েন্ট।

খানখানাবাদ পয়েন্টটা সবচেয়ে দারুণ। যদিও গেল রোয়ানু ঘূূর্ণিঝড় তার সৌন্দর্যকে বিলীন করে দিয়েছে।
বাহারছড়া পয়েন্টও অনেক সুন্দর। সারি সারি ঝাউগাছ, মরুভূমির মতো সাদা-সাদা বালিতে ভরা সৈকত দেখে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। প্রায় প্রতিদিন এই বাহারছড়া পয়েন্টে প্রচুর স্থানীয় সমুদ্রপ্রেমী পর্যটক ভিড় জমায়। একটু সুযোগ পেলেই তারা সমুদ্রপ্রেমে মত্ত হয়ে বিনোদন নেয়। এই পয়েন্টে মানুষের আনাগোনাও বেশি। প্রতিদিন ফুটবল ম্যাচ চলে। তরুণ-যুবকেরা ফুটবল ম্যাচ নিয়ে সৈকতে এসে খেলার আয়োজন করে।
সবচে’ মজার ও উপভোগ্য দৃশ্য হলো, এই পয়েন্ট বিকেল হলেই তরতাজা সামুদ্রিক মাছের নিলাম। যে মাছে কোনো ফরমালিন নেই, নেই ক্যামিকেল মেশানোর কোনো পথ! তাই, স্বাস্থ্যসচেতন ভোজনরসিক ছুটে চলে নিলামে, গ্রহণ করে নিলামে ওঠা মাছ। নিয়মিত ক্রেতারা তো আছেই। আরেকদল আছে প্রকৃতিপ্রেমী, তারাও সুযোগ হলেই ছুটে চলে সৈকতে, ক্যামেরার ক্লিকে ফ্রেমবন্দী ক’রে রাখে সৈকতে কাটানো মুহূর্তগুলো।

কাথরিয়া-বাগমারা পয়েন্টের সৌন্দর্য আলাদা। যদিও এই সৈকত থেকে সমুদ্র কিছুটা দূরে। কিছুটা দূরে বলেই এখানে আকাশের নীল সামিয়ানার নিচে সবুজের গালিচায় সৌন্দর্যপিয়াসীরা দলে দলে ভিড় ক’রে, চুষে নেয় সুন্দরের পেয়ালায় থাকা সব আস্বাদন। সমুদ্রের আগে থাকা বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে যে জায়গাটা রয়েছে, তাতে কয়েকটা ফুটবল ম্যাচ একই সাথে চলে। চাইলে এখানে সমুদ্রের কোলঘেঁষে স্টেডিয়াম বানানো যাবে! সেরকম উদ্যোগের মুরোদ যদি কোনো বাঁশখালীয়ানের থেকে থাকে আরকী!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যারিবিয়ান দ্বীপে যেমন ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলে খেলোয়াড়, দর্শকসহ সারাবিশ্বের সাংবাদিকরা যে মুগ্ধতার নিশ্বাস ফেলতে বাধ্য হয়েছিল, তেমনি বাঁশখালীর কাথরিয়া অংশের এই সমুদ্রপাড়ে একটা স্টেডিয়াম ক’রে তাক লাগানো কোনো ব্যাপার না!
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘হালদা’য় হালিশহর ফইল্ল্যাতলী বাজার সংলগ্ন যে সৈকত দেখিয়েছে তারচেয়েও অনেক বেশি সুন্দর এই কাথরিয়া সমুদ্রসৈকত। সৈকতে কোলঘেঁষে রয়েছে সারি সারি ঝাউগাছ, রয়েছে সুন্দরবনের মতো শ্বাসমূল। সৌন্দর্যের কী নেই এখানে!
যদি এখানে ‘গলফ’ খেলার আয়োজন ক’রে তাহলে এখানকার সবুজ, নয়নাভিরাম ঘাসে কোনো হাত লাগাতে হবে না। এতই মসৃণ এখানকার ঘাসগুলো, এখানকার ভূমি।
আবার এর পাশেই রয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মৎসপ্রকল্প। সমুদ্রের পানি বন্দী করে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে মৎসঘের। চাষ হয় মাছের। এখান থেকেই স্থানীয় বাজারে নিয়মিত মাছ সরবরাহ করা হয়।

মৎসঘের থেকে অল্প দূরত্বে বিশাল এলাকাজুড়ে শাক-সবজির চায় হয়। একেবারে তরতাজা সব সবজি এখানে নিয়মিত মে’লে। আলু, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, শসা, বাঁধাকপি, ফুলকপি থেকে শুরু করে মৌসুমভেদে নানারকম শাক উৎপন্ন হয় এখানে। দামেও সাশ্রয়! অল্প দামে এখান থেকে কিনে পাইকারী ত্রেতারা শহরে নিয়ে বিক্রি ক’রে।
এই সৈকত থেকে সূর্য পাটে যাওয়ার দৃশ্যটা খুবই মনোরম! যেন বিশাল সাগর ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে ডুবন্ত সূর্যের লালিমাটাকে।

যাতায়াতের ক্ষেত্রে সবচে’ সহজ বাহারছড়া সৈকতে যেতে। একেবারে মূল সড়ক থেকে কালীপুর ছলিয়ার বঅর (ছলিয়ার বাপের পুল) পুল থেকে সোজা বেড়িবাঁধ পর্যন্ত গাড়ি চলে যায়। জাপানের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার এ রাস্তাটি ক’রে দিয়েছে।
আবার কাথরিয়া পয়েন্টে যেতে হলে বৈলছড়ি ইউনিয়নের চেচুরিয়া হাবিবের দোকান থেকে সিএনজিতে করে কাথরিয়া-বাগমারা বেড়িবাঁধের কাছাকাছি পর্যন্ত যাওয়া যায়। একটা কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছে এখন, না-হয় বেড়িবাঁধ পর্যন্ত গাড়ি চলে যায়। বেড়িবাঁধ পার হয়ে মিনিট পনের হাঁটলেই প্রতীক্ষিত সেই চোখ ধাঁধানো, মন জুড়ানো সমুদ্রসৈকত। এক
সিএনজি ভাড়া ১৭০-২০০ টাকা নেয়। জনপ্রতি ৪০-৫০ টাকা ক’রে নেয়।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *