নবজাতকের যত্নে ভ্রান্ত ধারণা বনাম করণীয়
সালসাবিলা নকি
একটি শিশুর জন্ম পরিবারে যেমন খুশির বার্তা বয়ে আনে, তেমনই তার অসুস্থতা পরিবারের সবাইকে বিপর্যস্ত করে তোলে। শিশু সুস্থ না থাকলে পরিবারের কেউই ভালো থাকতে পারে না। একটি শিশু স্বাভাবিক ও সুস্থভাবে জন্ম নিলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে শিশুর অযত্ন হলে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। চলুন জেনে নিই প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও তার বিপরীতে আমাদের করণীয় কী।
শিশুর গোসলঃ শিশুর গায়ে যে আবরণ থাকে তাকে অনেকেই নাপাক বলে জন্মের পরপরই গোসল করিয়ে ফেলেন। এতে শিশুর নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। শিশুর প্রথম গোসল ৬/৭ দিন পর হওয়াই ভালো।
মধু খাওয়ানোঃ জন্মের পরপরই শিশুকে মধু খাওয়াতে দেখা যায়। এটা করা একেবারেই উচিত নয়। ছয় মাস পর্যন্ত শিশু শুধু মায়ের দুধ খাবে।
শিশুর কক্ষে আগুন রাখাঃ অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুর কক্ষে আগুন বা ধূপ জ্বালিয়ে রাখা হয়। এতে শিশুর শ্বাসকষ্ট বা অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শিশুর কক্ষ হবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, ধোঁয়া ও ধুলোবালি মুক্ত।
শিশুর গায়ে কাপড় জড়ানোঃ এখনও দেখা যায় শিশুকে অনেক বেশি কাপড় চোপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখা হয়। কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা হয়। শীতকাল না হলে, অন্য যে কোনো সময় শিশুকে পাতলা তোয়ালে বা কাঁথা দিয়ে জড়িয়ে রাখতে পারেন। মুখের ওপর কাপড় দেয়া একেবারেই উচিত না। এতে শিশুর নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। বেশি কাপড়-চোপড় দিয়ে ঢেকে রাখলে ঘেমে গিয়ে শিশুর বুকে ঠান্ডা বসে যেতে পারে। পরবর্তিতে এটা নিউমোনিয়ায় রুপ নিতে পারে।
তেল দিয়ে ম্যাসাজ করাঃ বাচ্চাদের শরীরে সরিষার তেল মেখে ম্যাসাজ করতে দেখা যায়। সরিষার তেল খুব পুরু। এই তেল ব্যবহারে শরীরে র্যাস দেখা দিতে পারে। এছাড়া শরীর ময়লাও হয়ে যায়। এ থেকে সংক্রমণ হতে পারে। তাই সরিষার তেল না দিয়ে বেবি অয়েল বা অলিভ অয়েল দেওয়া উচিত। তাও বাচ্চার বয়স দেড় মাস হয়ে যাওয়ার পর। কারণ জন্মের পর শিশুর ত্বক অনেক পাতলা থাকে। তাই এ সময় তেল লাগালে ত্বকের নানা সমস্যা হয়।
জন্ডিসঃ অধিকাংশ নবজাতকেরই জন্মের পর জন্ডিস হতে দেখা যায়। এতে প্যানিকড হওয়ার কিছু নেই। তবে সময় মতো এর চিকিৎসা না নিলে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। নবজাতকের স্বাভাবিক যে জন্ডিস সেটির ক্ষেত্রে দেখা যাবে তিন থেকে চার দিন পর শরীর হলুদ হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে চেহারা হলুদ হয়ে যাবে, এরপর হাতে, পায়ে হলুদ আসবে, বুক ও পেটে হলুদ হবে। সর্বশেষে পায়ের তলায় এবং হাতের তালু হলুদ হয়ে যাবে। এ ছাড়া প্রস্রাবও হলুদ হয়ে যাবে। শিশুকে সকালের রোদে দিলে প্রাথমিক জন্ডিস ভালো হয়ে যায়। পর্যাপ্ত আলো চলাচল হয় এমন কক্ষে শিশুকে রাখা উচিত। জন্ডিস ভালো না হলে হাসপাতালে ভর্তি করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
শিশুর পেটে সমস্যা হবে বলে অনেকক্ষেত্রে খাবারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। চিংড়ি, গরুর মাংসসহ আরও অনেক খাবার প্রথম তিনমাস বা ছয়মাস পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়। শুধুমাত্র শিশুর জন্মের পর যতদিন মা পুরোপুরি সুস্থ না হন ততদিন একটু বাছবিচার করেও খেলেও পরবর্তীতে সব স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন। শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাওয়ার জন্য, এবং দুধে সব পুষ্ঠিগুণ যাতে বজায় থাকে সেজন্য মাকে সেভাবে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে মা-বাবাসহ পরিবারের সকলকেই সচেষ্ট হতে হবে। শিশুর লালন-পালন ও যত্নে কোনো তথ্য শোনামাত্র প্রয়োগ না করে, সেটা নিয়ে ভালোভাবে অনুসন্ধান বা পড়াশোনা করা উচিত। তাহলেই ভ্রান্ত ধারণার বলি হবে না আর কোনো শিশু।