নবজাতকের জন্ম পরবর্তী যত্ন, গোল্ডেন মিনিট ও অন্যান্য...

নবজাতকের জন্ম পরবর্তী যত্ন, গোল্ডেন মিনিট ও অন্যান্য…

 

BanshkhaliTimes

নবজাতকের জন্ম পরবর্তী যত্ন, গোল্ডেন মিনিট ও অন্যান্য…
সালসাবিলা নকি

প্রতিটি শিশুর জন্ম তার পরিবারের জন্য অসীম খুশির বার্তাসম। নবজাতক শিশুকে পেয়ে আনন্দ উদ্বেলিত হয় সকলের মন। বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই শিশুর যত্নও হতে হবে স্পেশাল। নবজাতকের যত্নে মেনে চলতে হবে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম। আপনি যদি প্রথমবার সন্তানের মা হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য নবজাতকের যত্ন, পরিচর্যা ও লালন-পালন বেশ কঠিন, চ্যালেঞ্জিং ক্লান্তিকর মনে হতে পারে। একই সাথে এটা আনন্দের ও অভিভূতকারীও হতে পারে। আপনি শিশুর যত্ন সম্পর্কে সবার কাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের পরস্পর বিরোধী পরামর্শ পাবেন। এসব আপনাকে বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে। আজকে আমি নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে লিখব। এগুলো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ও ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত যথাসম্ভব নির্ভুল তথ্য অনুসারে লিখেছি।

অনেকেই কিন্তু জানেন না একটা শিশুকে কখন নবজাতক বলা হবে। নবজাতকের একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা রয়েছে। ডাক্তারদের মতে সাধারণত জন্মের পরপর যে শিশুটি সে নবজাতক এবং জন্মের পর থেকে শুরু করে ২৮ দিন পর্যন্ত বয়সের বাচ্চাকে নবজাতক বলা হয়।

নবজাতকের জন্মের পর প্রাথমিক যত্নঃ

জন্মের পরপরই শিশুকে পরিষ্কার নরম কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। এটা সাধারণত হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্স করে থাকে। বাচ্চা হাসপাতালে না হয়ে বাসা বাড়িতে হলে ধাত্রীই এই কাজটা করে। বাসায় ডেলিভারি না হলেই ভালো। অপরিপক্ব ধাত্রীর হাতে ডেলিভারি করালে বাচ্চা এবং মা দুজনেরই প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। হাসপাতালে গেলেই সিজার করাবে এটা একটা ভুল ধারণা। প্রয়োজনে ডেলিভারির দুই তিন মাস আগে থেকে কোথায় ডেলিভারি করাবেন সেটা খোঁজ খবর নেয়া যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে তিনবার গাইনী ডাক্তারের কাছে চেক আপ করানো ভালো। যাকে দেখাবেন সম্ভব হলে তার তত্ত্বাবধানেও ডেলিভারি করাতে পারেন।

সবচেয়ে ভালো হয় বাচ্চার জন্মগ্রহণটা যদি কোনো সরকারি হাসপাতালে হয়। সরকারি হাসপাতালে গাইনি বিশেষজ্ঞ থাকেন। কোনো সমস্যা হলে তিনি বুঝতে পারবেন। বাচ্চা জন্মের পর হঠাৎ করে দেখা গেল, তার বার্থ ট্রমা হচ্ছে। অথবা জন্ম নেওয়ার পর বাচ্চাটা শ্বাস নিতে পারছে না। যদি দ্রুত এগুলোর সঠিকভাবে চিকিৎসা করা না হয় তাহলে বাচ্চার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

ডাক্তারি ভাষায় জন্মের পরবর্তী যে মিনিটটা সেটিকে বলা হয় গোল্ডেন মিনিট। এই এক মিনিটের মধ্যে বাচ্চার যদি কোনো শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাসের কষ্ট না হয়, বাচ্চাটা আজীবন ভালো থাকবে। এই এক মিনিট থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাচ্চাটা যদি শ্বাস না নেয়, তাহলে নিউরোলজিক্যাল রোগ হতে পারে।

হাসপাতালে বাচ্চা জন্মগ্রহণ করার পরপরই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস দেখা হয়, সেটি হলো, বাচ্চার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা। কারণ, ওই সময় বাচ্চার শরীর মায়ের গর্ভে থাকাকালীন যে পানিটা থাকে (অ্যামনিওটিক ফ্লুইড) সেটি দিয়ে ভেজা থাকে। কাজেই সেই পানিটা যদি ভালোভাবে মুছে দেওয়া না হয়, তাহলে বাচ্চার ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া কিন্তু বাচ্চার মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ।

এখনও গ্রামাঞ্চলে একটি বিষয় প্রচলিত রয়েছে, সেটা হলো বাচ্চার জন্মের পরপরই গোসল করিয়ে দেওয়া। অন্তত প্রথম তিন থেকে চার দিন গোসল করানো উচিত নয়। এরপর আস্তে আস্তে উষ্ণ গরম পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে পানি নিংড়ে নিয়ে শরীর মুছে দিতে পারেন।

জন্মের পর বাচ্চাদের শরীরে সাদা চামড়ার মতো থাকে। অনেকেই দেখা যায়, জানা না থাকার কারণে, তেল বা লোশন দিয়ে এই চামড়াগুলো ঘষাঘষি করে তুলতে যান। এটা করা উচিত না। এই সাদা চামড়া নতুন পরিবেশে বাচ্চাকে প্রটেকশন দেয়। কয়েকদিন পর এগুলো নিজ থেকে চলে যায়।

বাচ্চাকে কোলে নেয়ার আগে প্রতিবার সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে জীবাণু মুক্ত করে নিতে হবে।

বাচ্চার খাবারঃ

নবজাতক বাচ্চার প্রথম খাবার মায়ের বুকের শালদুধ। জন্মের পর এক ঘণ্টার মধ্যে অন্তত মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। সিজার করা শিশুকেও এক ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো যেতে পারে।

আরেকটি বিষয় দেখা যায় জন্মের পরপরই বাচ্চাকে মধু খাওয়ানো হয়। আজকাল ডাক্তাররা এটা নিষেধ করেন। বাচ্চা জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু দেবেন না। এমনকি পানিও না দিতে বলেন।

যদি বাচ্চা পর্যাপ্ত মায়ের দুধ না পায় সেক্ষেত্রে ডাক্তারই পরামর্শ দেবেন, বাচ্চাকে কী খাওয়াবেন, কীভাবে খাওয়াবেন।

বাচ্চাকে খাওয়ানোর পর অবশ্যই ঢেঁকুর তুলে দিতে হবে। যেটাকে ডাক্তারি ভাষায় বার্পিং বলে। কমপক্ষে দশ মিনিটের জন্য এটা করতে হবে। বাচ্চাকে সোজা করে ধরে তার পেট আপনার বুকের সাথে লাগিয়ে ক্রমাগত পিঠে হালকা চাপড় দিতে হবে। বাচ্চা দুধ খাওয়ার সময় অতিরিক্ত বাতাস তার মুখের ভেতর ঢুকে যায়। আর এই বাতাস পেটে গিয়ে পেট ব্যথা করতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায় নবজাতক বাচ্চা দিন-রাত শুধু কাঁদছেই। বাচ্চা কাঁদলেই সবাই মনে করেন, খিদে পেয়েছে। ‘বাচ্চার খিদে পেয়েছে, ওকে দুধ দাও’ এই কথা বলে বলে বাচ্চার মাকে অস্থির করে ফেলা হয়।

অথচ বাচ্চার কান্নার কারণ শুধু খিদে লাগাটাই নয়। পেটে গ্যাস জমলেও বাচ্চা পেট ব্যথায় খুব কান্নাকাটি করে। তাই প্রতিবার খাওয়ানোর পর অবশ্যই ঢেঁকুর তুলে দিতে হবে। মা দুধ খাওয়ানোর পর বাবা বা পরিবারের যে কেউই এই কাজটা করে দিতে পারেন। তাহলে, সদ্য বাচ্চা জন্মদাত্রী মায়ের কষ্ট একটু কম হবে।

নবজাতকের যত্ন ও লালন-পালনে প্রচলিত বেশকিছু ভ্রান্ত ধারণা ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করব আগামী পর্বে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, আপনার শিশুর যথাযথ যত্ন নিন। ধন্যবাদ।

 

আরো পড়ুন – নারী স্বাধীন নাকি পরাধীন || সোহা চৌধুরী

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *