আকাশ দে: বাঁশখালী উপজেলার ২নং সাধনপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পেঁয়াদা পাড়ায় জন্ম এই যুবকের। সাত ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় এই ছেলেটির নাম দেলোয়ার হোসেন। তৃতীয় শ্রেণীতেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি টানতে হয় পরিবারের অভাবের জন্য। বাবা মানসিক রোগী আর মা গৃহিনী। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ছোট্ট দেলোয়ার মামার বাড়িতে চলে যায় মামার চায়ের দোকানে কাজ করতে। যে বয়সে বাচ্চারা ছুটে প্রজাপতির পেছনে সেই বয়সে ছোট্ট দেলোয়ার ছুটেছে পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য। মা বাবাকে দুই বেলা খাওয়ানোর জন্য সে ছুটতে থাকে। কখনো বাস কন্ট্রাক্টর, কখনো বা মুদি দোকানের কর্মচারী। আবার কখনো দিনমজুরী।
এদিকে বড় হতে থাকে তাদের পরিবার। সবার মুখে দুইবেলা খাবার তুলে দিতে দেলোয়ারকে দিনরাত খাটতে হয়। ইতিমধ্যে তার পৈতৃক সম্পত্তি প্রায় শেষ হয়ে যায় দুটো বোনের বিয়ে এবং সংসার চালাতে গিয়ে।দেলোয়ারের বয়স যখন ১৮ তখন তার মামার হোটেলে পুনরায় যোগ দেয়। ছোটবেলা থেকেই দেলোয়ারের স্বপ্ন ছিল ব্যবসা।
তাই তো জীবনযুদ্ধে হার না মানা এই যুবক ২২ বছর বয়সে এসে নিজের পাড়ায় ছোট্ট পরিসরে চায়ের দোকান দিয়ে বসে। এনজিও থেকে মাত্র পাঁচ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে তার ব্যবসার শুরু। ভোরে ঘুম থেকে জেগে দোকানে কাজ করে আর মধ্যরাতে যায় ঘুমাতে। পড়াশোনায় একেবারে অমনোযোগী দেখে তার ভাই ইকবালকে তার সহকারী হিসেবে দোকানে রাখেন। বড় হতে থাকে তার ব্যবসা। বাড়তে থাকে তার আয়। তার অপর দুই ভাই এবং ছোট বোনের পড়াশোনা, বাবার চিকিৎসা, সংসারের সমস্ত চাহিদা মিটিয়ে দেলোয়ার একটু একটু সঞ্চয় করতে থাকে। ২৬ বছর বয়সে দেলোয়ার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দেলোয়ারের বয়স এখন একত্রিশ। এক কন্যার পিতা এখন দেলোয়ার। তার ভাই ইকবালকে মাস দুয়েক আগে চার লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ পাঠিয়েছে। অপর দুই ভাই এবং এক বোন পড়াশোনা করছে। দেলোয়ারের এখন মাসিক ইনকাম কমপক্ষে ত্রিশ হাজার। যে ছেলেটি একটা সময় দশ টাকার জন্য সারাদিন পরিশ্রম করেছে সেই ছেলেটি এখন মাসে দশ হাজার টাকার ডিপিএস করেছে। যেই দেশে হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার তাদের হতাশার গল্প শোনায় সেই দেশে দেলোয়ার বলে তার সফলতার গল্প। পুরো ওয়ার্ডে বিখ্যাত তার চা। সেদিন চা খেতে খেতে এসব গল্প শুনছিলাম তার মুখ থেকে। মানুষটি খুবই উচ্ছ্বসিতভাবে বলছিল এসব কথা। আমি চায়ে শেষ চুমুকটা দিয়ে নিজেকে নিজে এইটাই বললাম- আসলেই তো, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। জীবনে কিছুনা কিছু অপেক্ষা করে সবার জন্য। চোখ কান খোলা রেখে লক্ষ্য স্থির করে স্বপ্নের পিছনে শ্রম দিলে সফলতা আসবেই।