মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী টাইমস: চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভা মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগ আহ্বায়ক সেলিমুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিধি নিষেধ পরিপন্থী কার্যকলাপ, অনিয়ম-দুর্নীতি, পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, ইচ্ছাকৃত অপশাসন স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে অনাস্থা জানিয়েছেন ৮ কাউন্সিলর। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি, টেন্ডারে অনিয়ম, ঘুষ গ্রহণ ইত্যাদি। এসব অভিযোগ তদন্তে কিছুদিন পূর্বে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ চট্টগ্রামের নির্দেশে উপ-পরিচালককে ইয়াছমিন পারবীন তিবরীজিকে। তিনি এসব অভিযোগ সরেজমিনে তদন্তে গত ২২ অক্টোবর পৌর কার্যালয়ে শুনানী গ্রহণ করে। গত (১৮ নভেম্বর) অভিযোগের তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এসব ১২ টির অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন।”প্রথম অভিযোগ’ পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪টি দোকান নির্মাণ কোন প্রকার পেপার বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে কোন কমিটি না করে নিজের ক্ষমতাবলে দোকান বরাদ্দ ও সরকারী রাজস্ব তহবিলে টাকা জমা না দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত। “দ্বিতীয় অভিযোগে” অভিযোগ নাই। “তৃতীয় অভিযোগ” ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মিয়ার বাজার ইজারার ১৩ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে আত্মসাৎ। তদন্ত প্রতিবেদন রিপোর্ট বলা হয়, ইজারাদার কতৃর্ক সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। সরকারী হাট – বাজারসমূহের ব্যবস্থাপনা, ইজারা পদ্ধতি প্রাপ্ত আয় বন্টন সম্পকির্ত নীতিমালা -২০১১ অনুসরণ না করে পৌরসভার অপরিশোধিত টাকা আদায়ে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। “চতুর্থ অভিযোগ” ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মিয়ার বাজার ইজারার মূল্য ১৬ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭ শত ৫০ টাকার মধ্যে ১০ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা ইজারাদার জামালের সাথে আঁতাত করে নিজ ক্ষমতাবলে টাকা আত্মসাৎ। এ বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়। “পঞ্চম অভিযোগ ” ২০১৯-২০ অর্থ বছরে গ্যাস প্রকল্পের টাকা রাজস্ব তহবিলে জমা না দিয়ে বাঁশখালী প্রাইম ব্যাংক শাখায় ২২ লক্ষ ২৭ হাজার টাকার চেক জমা করে মেয়র একক স্বাক্ষরে ১০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে জরুরী ভিত্তিতে রাস্তার কাজ করার জন্য ৬ নং ওর্যাড কাউন্সিলরের নামে চেক ইস্যু করে টাকা আত্মসাৎ। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়,গ্যাস লাইনের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণবাবদ প্রাপ্ত ৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মাসিক মিটিং এ আলোচনা ছাড়াই বেআইনীভাবে গ্রহণ করে আত্মসতের অভিযোগ প্রমানিত হয়। ”৬ষ্ট অভিযোগ” সৈয়দ শাহ মাজারের কাভার ড্রেন এর কাজ দেখিয়ে ৩ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তাহার সত্যতা পাওয়া যায়নি। “সপ্তম অভিযোগ” ৩০ লক্ষ টাকার বৈদ্যুতিক মালামালের কোটেশন ও টেন্ডার দেওয়া হয়েছে,তার মধ্যে ১২ লক্ষ টাকার মালামাল ক্রয় করে অবশিষ্ট ১৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। “অষ্টম অভিযোগ” ২০১৮-১৯ ও ১৯-২০ অর্থ বছরে রাজস্ব তহবিল হতে বেতন দেওয়ার পর বিভিন্ন ভুয়া খরচের ভাউচারের মাধ্যমে ৪৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ, ২০১৮-১৯ হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়, তা ভুয়া খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পৌরসভার সচিব কতৃর্ক উপস্থাপিত ক্যাশ বই ও অনুধান রেজিস্টার অনুদানের অর্থ ব্যক্তির নামে চেক প্রদান করা হয়েছে। এসব অভিযোগে ৪৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে পরবর্তীতে কাউন্সিলরের সুপারিশের ভিত্তিতে অনুদান জন্য বলা হয়েছে। “নবম অভিযোগ” পৌর বাস টার্মিনালের জন্য জায়গা নির্ধারন ও জমি অধিগ্রহণের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর জমির মালিকের সাথে আঁতাত করে ৭ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে, জায়গা অনুপযোগী বলে জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রত্যয়ন দিয়ে বাস টার্মিনাল নির্মান কাজ বন্ধ করে দেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। তবে মেয়র কাউন্সিলেরর মতামতের মাধ্যমে একমত পোষন করে অনাগ্রহতার কারনে বাস টার্মিনাল নির্মানের কোন অগ্রগতি হয়নি মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে ভূমি মালিকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। “দশম অভিযোগ” পৌর ভবনের উত্তর পার্শ্বে আধুনিক হাসপাতালের ২ টি ভবনে সরকারী খাস জায়গায় (রাস্তা) পড়ায় পৌর পরিষদ থেকে বাঁধা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মেয়র ভবন মালিকের সাথে যোগসাজশে ভবন নির্মানের অনুমতির জন্য ৫ লক্ষ টাকা ও সরকারী খাস জায়গা (রাস্তার) জন্য ১০ লক্ষ টাকা সহ সর্বমোট ১৫ লক্ষ টাকা গ্রহন করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়নি। “একাদশতম অভিযোগ”২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মেয়র ইসলামী ব্যাংক বাঁশখালী শাখা হতে ১২ লক্ষ টাকার সিসি লোন গ্রহণ করেন। ইসলামী ব্যাংক উক্ত টাকা পরিশোধের জন্য তাগিদ দিলে মেয়র, সচিব ও কার্য সহকারী আলী হোসেনের যোগসাজশে আলী হোসেনের নামে ১২ লক্ষ টাকার চেক ইস্যু করে। পরবর্তীতে ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংক বাঁশখালী পৌরসভার রাজস্ব তহবিল হতে উত্তোলন করে ইসলামী ব্যাংকের সিসি লোন পরিশোধ করে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়নি। “দ্বাদশতম অভিযোগ ” মেয়র চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে ৬৮ জনকে নিয়োগ দেন। তারি ধারাবাহিকতায় প্রতিজনের কাছ থেকে ২-৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকুরী দেন, তারমধ্যে ১৬ জনের কাছ থেকে চাকুরী স্থায়ীকরনের নিমিত্তে ৪-৫ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দৈনিক ভিত্তিতে লোক নিয়োগ পৌরসভার বিধিবিধান মোতাবেক পৌরসভার স্থায়ী কমিটি গঠন ও কমিটির কার্যাবলী সংক্রান্ত উপ- আইনমালা ২০১৩ এর প্রথম তফশীল, অনুচ্ছেদ -৩ অনুযায়ী পৌরসভার নিয়োগ, সংস্থাপন ও অর্থ বিষয়ক কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের কথা থাকলে ও মেয়র একক ভাবে দৈনিক ভিত্তিক লোক নিয়োগ করেছেন যা আইনানুগ হয়নি।
এছাড়া প্রসুন দাশের বক্তব্য ও অডিও রেকডিং হতে এবং অন্যান্যদের প্রদত্ত বক্তব্য হতে নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে স্থানীয় সরকার উপ- পরিচালক ইয়াছমিন পারভীন তিরবীজি ৬ টি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেছেন। এদিকে গতকাল (২৪ নভেম্বর) রবিবার বিকেলে বাঁশখালী পৌরসভার ৮জন কাউন্সিলর লিখিত ভাবে বাঁশখালী পৌরসভা মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগ আহ্বায়ক সেলিমুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিধি নিষেধ পরিপন্থী কার্যকলাপ,অনিয়ম-দুর্নীতি, পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, ইচ্ছাকৃত অপশাসন স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে অনাস্থা দিয়েছেন ৮ কাউন্সিলর। অনাস্থা প্রস্তাবকারী প্যানেল মেয়র-১ মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, মেয়র সাহেবের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছি। মেয়রের দুর্নীতির দায়ভার আমরা কেনো নেবো। জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছেন একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আলোকিত শহর উপহার পেতে। কিন্তু পৌর মেয়রের দুর্নীতির কারণে জনগণকে আমরা তাদের উপহার হাতে তুলে দিতে পারছিনা। এ বিষয়ে বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র সেলিমুল হক চৌধুরী মুটোফোনে বারবার রিং দেওয়া হলেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায় নি ।
পৌরসভার যে ৮ জন কাউন্সিলর অনাস্থা দিয়েছেন তারা হলেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ দেলোয়ার হোছাইন, ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র-২ রুজিনা আক্তার, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দীলিপ চক্রবর্তী, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল কবির সিকদার, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাবলা কুমার দাশ , ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তপন কান্তি বড়ুয়া, ১ নং কাউন্সিল ওয়ার্ডের আব্দুর রহমান এবং ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর নার্গিস আক্তার।
