তারুণ্য নির্ভর নতুন সরকারে পরিবর্তনের ছোঁয়া
-মুহাম্মদ তাফহীমুল ইসলাম

সব শঙ্কা, উৎকন্ঠা চাপিয়ে সহিংসতাপূর্ণ উৎসবের মধ্য দিয়ে গত ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। অন্যদিকে ভরাডুবি হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের। যদিওবা ঐক্যফ্রন্টসহ বিরোধীদলগুলো দাবি করছে, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। জনগণ ভোট দিতে পারেনি। যার কারণে তাদের পরাজয় হয়েছে। এদিকে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন ও মহাজোট নেতারা দাবি করছে নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হয়েছে। বাংলাদেশে এমন সুষ্ঠু নির্বাচন তারা আর দেখেনি। যাই হোক- সুষ্ঠু, অসুষ্ঠু নির্বাচনের বাকযুদ্ধ এখনো চলছে টকশো, বক্তৃতায়। তবে ইতিমধ্যে নতুন সরকার তথা সরকার প্রধানকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান অভিনন্দন জানানোর মাধ্যমে বৈধতা দিয়েছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার দিকটি পরিষ্কার।
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার চারদিনের মাথায় শপথ গ্রহণ করেছে নতুন সংসদ সদস্যরা। এর তিনদিন পরেই গঠিত হয় নতুন মন্ত্রীসভা। নতুন মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়েছেন গতবারের তিন ডজন মন্ত্রী। যাদের বেশির ভাগই বয়োবৃদ্ধ হলেও সিনিয়র নেতা। নতুন মন্ত্রীসভায় যুক্ত হয়েছেন একত্রিশ জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাদের মন্ত্রীসভায় যুক্ত করেছেন তাঁদের বেশির ভাগই তরুণ এবং কম বিতর্কিত। নতুন মন্ত্রীসভায় যুক্ত অনেকেই ওঠে এসেছেন আঞ্চলিক রাজনীতি থেকে। আঞ্চলিক রাজনীতি থেকে ওঠে এলেও তাঁরা যোগ্য, দক্ষ। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রনালয়গুলোর দায়িত্বে রেখেছেন তরুণদেরই। যদি চট্টগ্রামের কথা বলা যায়- বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে মন্ত্রীসভায় স্থান পেয়েছেন চারজন। তাঁরা হচ্ছেন যথাক্রমে- ডক্টর হাসান মাহমুদ (তথ্য মন্ত্রনালয়), সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (ভূমি মন্ত্রনালয়), বীর বাহাদুর (পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়), ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (শিক্ষা মন্ত্রনালয়- উপমন্ত্রী)। চট্টগ্রামের এই চারজনের মধ্যে তিনজনই তরুণ। এরা বাইরের দেশ থেকে লেখাপড়া করে এসেছেন। যার কারণে এদের রয়েছে বাড়তি অভিজ্ঞতা। তাছাড়া তারুণ্যের শক্তি লক্ষ্যপানে ছুটে চলে অদম্য গতিতে। যার প্রমাণ আমাদের নতুন মন্ত্রীরা প্রথমদিনেই দিয়েছেন- ভূমিমন্ত্রী প্রথম কর্মদিবসে মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের বলেছেন- ‘যদি দুর্নীতি ছাড়তে না পারেন মন্ত্রনালয় ছেড়ে যান’। তথ্যমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছেন- ‘ভূঁইফোড় অনলাইনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে’। আজকাল মোবাইল খুললেই কথিত অনলাইন পত্রিকা। এসব পত্রিকায় বানানের ঠিক নেই, মানহীন লেখার ধরণ। টাকার বিনিময়ে ব্যবহৃত হচ্ছে গুজব রটানো ও অপপ্রচারের কাজে। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সময়ের দাবি। শিক্ষা উপমন্ত্রী তাঁর ফেসবুক পেইজে লিখেছেন- ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ক্ষমতা নয় দায়িত্ব। আমার কাছে এর মানে দাঁড়ায়, শাসক নয় সেবক’। জয়পুরহাট- ০২ আসনের সংসদ সদস্য তাঁর ফেসবুক পেইজে নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন দিকনির্দেশনামূলক স্ট্যাটাস। এতে তিনি সম্মানের নামে ফুলের তোড়া, তোরণ ইত্যাদি বর্নাঢ্যতার ব্যাপারে নিষেধ করেছেন। এগুলোকে তিনি চাটুকারিতা উল্লেখ করে এসব করলে অনুষ্ঠান বর্জন ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন। এসব দিক বিবেচনা করলে প্রতীয়মান হয়- এক নতুন অধ্যায় রচনার পথে বাংলাদেশ। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দুর্দান্ত সাহসী কর্মদক্ষতায় এসব সম্ভব হয়েছে। যেই পদক্ষেপটি দল, মত, নির্বিশেষে কুঁড়িয়েছে সকলের প্রশংসা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সহচর খ্যাত তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুদের মতো নেতাদেরকেও হার মানিয়েছেন সময়ের কাছে। নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবুল মাল আব্দুল মুহিতদের মন্ত্রীসভা থেকে বিদায় করে হয়েছেন বিতর্কমুক্ত। তাছাড়াও প্রধানমন্ত্রী দলীয় মনোনয়ন প্রধানের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দিয়েছেন তরুণদের। মাশরাফি বিন মর্তুজা, শেখ তন্ময়, ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলদের মতো তরুণ রাজনীতিকদের হাতে তুলে দিয়েছেন দলীয় মনোনয়ন ফরম। তরুণদের গুরুত্ব দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী যেমনি তরুণদের আস্থায় এসেছেন ঠিক তেমনি তরুণরাও হয়েছে আত্মবিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ তরুণদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলবে, স্বপ্ন দেখাবে। রাজনীতিবিমুখ নতুন প্রজন্ম উৎসাহিত হবে রাজনীতির মাঠে পদচারণায়। আর যদি তরুণরা রাজনীতি তথা দেশের হাল ধরে তাহলে বদলে যাবে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ।
২০২১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী। যা বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যে পড়ে। বর্তমান সরকার টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে ইতিমধ্যে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছেন। আশা করা যায়- স্বাধীন বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ গিয়ে দাঁড়াবে অনন্যা এক উচ্চতায়। বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের শুরুতে আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখবো- যেখানে থাকবে না দুর্নীতি, দুঃশাসন। বর্তমান সরকার ক্ষমতা লাভের পরপরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছেন। তাছাড়া আমাদের তরুণ নেতাদের সম্বন্ধিত মন্ত্রীসভা থেকে ভালো কিছু আশা করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী যাদের উপর আস্থা রেখে মন্ত্রনালয়ের মতো গুরু দায়িত্ব প্রদান করেছেন। আমাদের প্রত্যাশা, তাঁরা দায়িত্ব ও ওয়াদার বরখেলাপ করবেন না। তাঁদের হাত ধরেই বদলে যাবে, যাক বাংলাদেশ।
লেখক: ছড়াকার, প্রাবন্ধিক
@বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
@০১৮৫৯৩৪৪৭৭৩