তান্নি চৌধুরীর গল্প- ‘প্রাক্তন প্রেমিকের গল্প’

প্রাক্তন প্রেমিকের জন্য
তান্নি চৌধুরী

আমার প্রাক্তন প্রেমিকের নাম ছিল শীষ। তাকে দেখলেই আমি পাখির মতো শিস দেয়ার চেষ্টা করতাম। ন্যাকা স্বরে ‘শিশু’ বলে ডাকতাম। সে ক্ষেপে যেত। ক্ষেপে গেলে মেয়েদের সুন্দর দেখায়। আর পুরুষদের চোখে মুখে ফুটে ওঠে এক ধরণের চাপা অসহায়ত্ব।

শীষ ক্ষেপে গেলেই অসহায় শিশুর মতোই মায়াবী হয়ে উঠত। আমি তৎক্ষণাৎ করুণার সবকটা জানালা খুলে দিতাম ওর কাছে। পুরুষ নদী পছন্দ করে, সাঁতরাতে ভালোবাসে। অথচ আমার মেলে দেয়া মায়া নদী চোখ উপেক্ষা করে সে দাঁতে নখ কাটতো।

চারিত্রিক অসংগতি হতে কতো রাজা মহারাজার মুক্তি মেলেনি। কতো সাধু কিংবা সন্ন্যাসীদের ও শেষ রক্ষা হয়নি। অথচ ছলকে উঠা অজস্র ঢেউয়ের কাঁপুনিও যেন এতটুকু আন্দোলিত করেনি শীষকে! নিরুত্তাপ অনুভবে শিহরনের ফুঁৎকারে কোনও শিখা জ্বলে ওঠেনি! এমন মহাপুরুষ ধরণের ছেলেকে কেবল ভালোবাসাই যায় না, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের চাদরে মুড়িয়ে রাখা যায় আজীবন।

ভালোবাসার উলটো পথে জন্মানো মানুষের প্রেমিক/ প্রেমিকা খুব বেশিদিন টিকেনা। আমি জন্মেছি ভালোবাসায়, তবু ভাগ্য বিড়ম্বনায় আমার পথ সৃষ্টি হয়েছে সেই ভালোবাসার উলটো পথেই। আমার অর্ধশত প্রেমিকের মধ্যে কেউ টিকেনি। তবু শীষের সাথে আমার সম্পর্কটা ছিল একই ফুলদানিতে রাখা দুটো গোলাপের মতো। চাইলে আমাদের সম্পর্কটা টিকে থাকতো পারতো। দুটো মানুষের চাওয়া এক হয়ে একটি অবিচ্ছিন্ন ছাদ হতে পারতো। তবু কখনো-সখনো আমরা যা চাই, তা যেন আমরা আসলেই চাই না। প্রেমিক ভালোবাসি, এক সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে ভালোবাসি। এক আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন বুনতে ভালোবাসি। অথচ অবচেতন মনে সেই স্বপ্নের ‘ঘর’টাকেই দুজনার করে চাই না। একই ছাদের নীচে বসবাস করাটাকে ঠিক গ্রহণ করতে পারি না। উলটো পথেই পথ চিনেছি বলেই হয়তো আমি চাইনি শীষ আর আমার গন্তব্য এক হোক। একটা চিনচিনে ব্যথার উৎপত্তিস্থল সৃষ্টি করে আমাদের পথ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। দ্বিতীয় এবং শেষবারের মতো আমিও কেঁদেছিলাম একদিন আমার প্রাক্তন প্রেমিকটির জন্য।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *