BanshkhaliTimes

তথাকথিত গলদ ও তিন কিসিমের বয়ান || রহিম সৈকত

BanshkhaliTimes

শিক্ষকতায় আসা ও সেই সুবাদে বহুভাষী মানুষের সাথে কাজ করার অল্পস্বল্প অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। ইটালির একজন স্কুল শিক্ষিকা যিনি আমার কাছ থেকে বাঙলা ভাষা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাকে যুক্ত করে দিই যারা বাঙলা ভাষার শুদ্ধতা নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকজনের সাথে। এই ম্যাডাম আমাকে সপ্তাহে (৭*২) ঘন্টা সময় দিচ্ছে স্প্যানিশ, ইটালিয়ান ভাষার ‘অ’ “আ” শিখানোয়। এত ভুল করি কিন্তু উনার বিরক্তির লেশমাত্র নেই। বারবার উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে, Good job, you have done well.
এতে হয়েছে কি আমার ভেতর যে জড়তা ছিল তা কেটে যাচ্ছে। ফ্রেন্ডলি জিজ্ঞেস করছি যা জানার তা।

এ ব্যাপার বঙ্গদেশে দিকে ফেরা যাক। এখানে তিন শ্রেণীর মানুষ আছে।
প্রথম শ্রেণী :
এই দল উঁচুনাকের, কোন ভুল ভ্রান্তি চোখে পড়লেই অভিব্যক্তি ” আঁমর ছুঁয়ে দিলে নাকি?” জাত গেল জাত গেল বলে রি রি করে উঠে। এদের চোখে সাহিত্য চর্চা করার জন্য বিদ্যেবোঝায় জাহাজ হতে হবে। ভারী ভারী সনদের ভারে ভারাক্রান্ত হওয়া দরকার। এদের চোখে বাকি মানুষ “সি” “ডি” গ্রেডের। উন্নাসিক এক শ্রেণী, বিদ্যের অহমে মাটিতে পা পড়েনা এমন। ভাবটা এমন, সাহিত্য চর্চা, লেখালেখি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি, দাদার আমলের জমিদারি।

দ্বিতীয় শ্রেণী:
খেয়াল খুশিমতো অখাদ্য প্রসব করে, নামের পাশে কবি, সাংবাদিক ইত্যাদি সেঁটে দেন। আবার সমমনার দল তৈরি হয়। তুমি আমারটা কিনলে আমি তোমারটা কিনব এই চুক্তির ভিত্তিতে প্রতি বছরে গ্রন্থপ্রসব করে জাতি উদ্ধারের অর্গাজমের আনন্দ খুঁজে পায়। যদিও পাঠকের দৃষ্টিতে নিজের বহুকষ্টে প্রসবিত সৃষ্টি কর্ম দেখে মূল্যায়ন করে কিনা সন্দেহ। এরা ভড়ংদারিতে প্রথম শ্রেণীর কাছাকাছি।

তৃতীয় শ্রেণী : সস্তাদরের যুগে খেয়াল খুশিমত চলে, শুদ্ধতার ধারও ধারেনা। আবার কেউ বলতে গেলে তেড়ে আসে। বাঙলা ভাষার বলৎকার হচ্ছে ওদের হাত ধরে বেশি।

উপরের কথা গুলো আমার ব্যক্তিগত অভিমত ও পর্যবেক্ষণ। দ্বিমত পোষণ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে বলে বিশ্বাস করি। সনদ আর বিদ্যের ওজনে পরিমাপ হলে নজরুল সৃষ্টি হতনা। আরজ আলী মাতব্বর তৈরী হতনা। কায়কোবাদ এর জন্ম হতনা। কারো ভেতর সৃষ্টির উন্মাদনা থাকলে তাতে জল ঢেলে দেয়ার অধিকার কারো নেই। শুদ্ধ বানানে বাঙলা লেখার পরিশীলিত আন্দোলন চালান, ভালবাসায় সংশোধন করার মমতা নিয়ে এগিয়ে আসেন। পরিবর্তন আসতে বাধ্য। আর তৃতীয় শ্রেণীর যারা আছে তাদের ছেড়ে দেন
এরা এমনিতে হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে।

লেখক: শিক্ষক ও লেখক

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *