তাফহীমুল ইসলাম, বাঁশখালী টাইমস: বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের মৃত মোহাম্মদ আলীর নয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে তৃতীয় বাইশ্যা। প্রথমে সাগরে মাছ ধরার কাজ করতো সে। এসময় তার সঙ্গে পরিচয় হয় খুদুকখালী বাহিনীর। এরপর আস্তে আস্তে সে জেলে থেকে হয়ে উঠে জলদস্যু। তবে তার উত্থান হয় ১৯৯২ সালে। গড়ে তুলে নিজস্ব বাহিনী। শুধু বাঁশখালী-কুতুবদিয়া নয়; নোয়াখালী, সন্দ্বীপ অঞ্চলের ডাকাতরাও ‘গুরু’ মানতে শুরু করে বাইশ্যা বাহিনীকে। বাইশ্যা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে তার কাছে এসে নিয়মিত মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে যেত জেলেরা। এভাবে বঙ্গোপসাগরে ‘বাইশ্যা ডাকাত’ হয়ে উঠে এক আতঙ্কের নাম।
২০১৩ সালের ২রা এপ্রিল কুতুবদিয়ার জাহাজখালী এলাকায় সংঘটিত ৩১ জেলে হত্যার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বাইশ্যা বাহিনীর বিরুদ্ধে! রয়েছে বাঁশখালীর ১১ জেলে হত্যার অভিযোগও! বাঁশখালী, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন থানায় রয়েছে অসংখ্য মামলা। বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে ফিরিয়ে গেছেন আগের পথে। ৬ সন্তানের জনক বাইশ্যা জীবনের ৫২ বছর বয়সে উপনীত হয়ে এবার নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। উপলব্ধি করলেন, তিনি ভুল পথে আছেন। র্যাবের পক্ষ থেকে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেননি। গতকাল বাঁশখালীতে বাহিনীর আহমদ উল্লাহ ও আবদুল গফুরকে সাথে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে আত্মসমর্পণ করেন। জমা দেন ৪১ টি এলজি অস্ত্র।
অনুষ্ঠানে জলদস্যুদের পক্ষে বক্তব্যে আবদুল হাকিম বাইশ্যা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘জীবনে আমরাও ভালো মানুষের সন্তান ছিলাম। ভালো পথে চলাফেরা করেছি। ভালো জীবন যাপন করেছিলাম। কিছু ভুল বুঝে, খারাপ মানুষের ফাঁদে পড়ে আমরা অন্ধকার পথে চলে গিয়েছি। মানুষ আমাদের ঘৃণা করে, আমাদের সন্তানদের ঘৃণা করে। প্রশাসনের ভয়ে আমরা রাস্তায়, বাজারে যেতে পারি না। এই ভুল বুঝতে পেরে আমরা ভালো পথে আসার চেষ্টা করি। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র্যাব আমাদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়েছে। অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসার সুযোগ পেয়ে র্যাবের নিকট আমরা আত্মসমর্পণ করি। আমরা র্যাবের কাছে অনেক ভালো আচরণ পেয়েছি। সকল জলদস্যুর পক্ষ থেকে আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ভালোভাবে ভালো পথে জীবন যাপন করবো। খারাপ পথে আর যেতে চাই না। যারা আত্মসমর্পণ করেননি সুযোগ কাজে লাগিয়ে আত্মসমর্পণ করুন।’ এসময় পরিবার, পরিজনের খোঁজ রাখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান সাবেক দুর্ধর্ষ এই ডাকাত সর্দার। পাশাপাশি দু’হাত উঁচিয়ে সকলের কাছে জলদস্যুদের পক্ষে ক্ষমাও চান তিনি।
গতকালের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মোট ১১ বাহিনীর ৩৪ জন জলদস্যু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। তারা জমা দেন দেশী বিদেশি ৯০ অস্ত্র ও ২০৫৬ রাউন্ড গোলাবারুদ।