জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী নয় : জাতিসংঘ

জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী নয় : জাতিসংঘ

অবশেষে সারা বিশ্ব রায় দিল জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী নয়। যুক্তরাষ্ট্রের জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি জাতিসংঘে ১২৮-৯ ভোটে বাতিল হয়েছে।১৯৩ দেশের মধ্যে ১২৮ টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। মাত্র ৯ টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দেয়।বাকি দেশ গুলি ভোট দানে বিরত ছিল।

জেরুজালেম ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। জরুরি অধিবেশনে সদস্য দেশগুলোর এমন সিদ্ধান্ত একটি নতুন ইতিহাস হয়ে রইল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৬ই ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেন। সেই প্রস্তাব বাতিল করতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোট হয়েছে। তাতে পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে উত্থাপিত প্রস্তাবই বাতিল হয়ে যায়। এরপর পরিষদ বিরল এক অধিবেশনে বসে বৃহস্পতিবার।

এতে ঝাঁঝালো বক্তব্যের পর ওই একই রকম প্রস্তাব ভোটে দেয়া হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণাকে বাতিলের পক্ষে ১২৮ ভোট পড়ে। বিপক্ষে পড়ে ৯ ভোট। আর ভোটদানে বিরত থাকে ৩৫ টি দেশ।

বিপক্ষে ভোট দেওয়া নয় দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, গুয়াতেমালা, হুণ্ডরাস, মাক্রেসয়া, নাইরু, পালাও, টোগো, মার্শাল দ্বীপ। মজার ব্যাপার হলো এগুলো কোন পরিচিত দেশ নয় । সবাই আমেরিকার দান খয়রাতে চলে । সুতরাং বলা যায়, পরিচিত কোন দেশ ইসরাইল আমেরিকার পক্ষে নাই ।

এর মাধ্যমে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে বলে রায় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিষদের ভিতর উল্লাস দেখা দেয়। এর আগে কড়া বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। তিনি বলেন, পরিষদ যে প্রস্তাব ভোটে দিচ্ছে তা আরো সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতাকে উৎসাহিত করবে। আমরা জানি জেরুজালেম হহলো সারা বিশ্বের শত শত কোটি মানুষের কাছে পবিত্র স্থান। ইসরাইল সব ধর্মে শ্রদ্ধা করে। সবাইকে এই পবিত্র শহর সফরে যেতে ও সেখানে প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করে।

আমার কোনো সন্দেহ নেই যে, এই প্রস্তাব একদিন ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একদিন চূড়ান্তভাবে জেরুজালেমকে ইসরাইলের পবিত্র রাজধানীর স্বীকৃতি দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেন, জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন এজেন্সিতে সবচেয়ে বেশি অর্থ দানকারী যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়টি এখন সবাই ভালভাবে জানেন। যুক্তরাষ্ট্র এই দিনটিকে স্মরণে রাখবে। স্মরণে রাখবে যে, আমাদের সার্বভৌম অধিকার চর্চার বিরুদ্ধে এটা একটি বড় আক্রমণ হিসেবে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, বহুবার আমরা এখানে এসেছি। বলেছি, বাকি আমাদের সবার মতোই ফিলিস্তিনিদেরও বাঁচার অধিকার আছে। তাদেরও মুক্ত হওয়ার, নিরাপদ অধিকার আছে। তাদেরও সমৃদ্ধি অর্জনের অধিকার আছে।

তাদের মতো করে তাদের আনন্দ করার অধিকার আছে। কিন্তু আমাদের কথায় কান দেয়া হয় নি। অবৈধ দখলদারিত্ব অব্যাহত আছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের মৌলিক অধিকার চর্চা করতে পারে না। আল কুদসের পতন হতে দেবে না তুরস্ক কখনো। ফিরিস্তিনি জনগণ আর কখনও একা নন। পরিষদে বক্তব্য রাখেন ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াল আল মালকি। তিনি বলেন, (যুক্তরাষ্ট্রের) এই সিদ্ধান্ত কি দিল আমাদের। এই বিষয়টি জিজ্ঞাসা করা ছাড়া কোনো সাহায্য করতে পারছি না। এর মধ্য দিয়ে ইসরাইলকে তার ঔপনিবেশিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে ও বিশ্বে সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার ধারাকে লালন করা হয়েছে।

জেরুজালেমকে বাদ রেখে কে একটি বিশ্বাসযোগ্য শান্তি পরিকল্পনা ভাবতে পারে। তাদের এমন শান্তি প্রচেষ্টায় কি কোনো সমর্থন আছে? অধিবেশনে কড়া বক্তব্য রাখেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান। তিনি বলেছেন, তুরস্কের সমর্থন কিনতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। তার ভাষায়, আমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ থেকে যে ফল প্রত্যাশা করেছে তা পাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব আরো একটি বড় ভুল করলো। তারা পরিষদে ভোটের আগে বিভিন্ন দেশকে হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়েছে।

শেষ মুহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ভোট দিল সৌদি, ভারত ও আমিরাত!

শেষ মুহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মিত্র সৌদি আরব, ভারত ও আমিরাত। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতি ঘটনায় এতদিন নীরব ছিল সৌদি আরব, আমিরাত, ভারতসহ বেশ কিছু দেশ। সবশেষ ট্রাম্পের হুমকির কারণে ইসরায়েলের মিত্র হয়ে ওঠা এসব দেশের অবস্থান জেরুজালেম ইস্যুতে আরো নড়বড়ে হয়ে ওঠে। এবং তার প্রমাণ রাখে আজ সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানাচ্ছে, ভোটাভুটির আগে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছিল সৌদি আরব ও ভারত। শেষ মুহুর্তে যখন দেখা গেছে পশ্চিমা অনেক দেশও মার্কিন সিদ্ধান্তের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে তখন তারাও বিপক্ষে ভোট দেয়।

 

আরও পড়ুন :

জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাষ্ট্র

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *