ইসলামী ডেস্ক: জুমাবার হচ্ছে মুসলমানের জন্য সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন । এই জুমা’র নামাজে ইমাম সাহেবের খোতবার গুরুত্ব অনেক বেশী ফজিলতপূর্ণ অথচ কিছু যুবক বা মুসল্লিকে দেখা যায় জুমা’র নামাজে মসজিদকে আড্ডার স্থান বানিয়ে ফেলতে । যা খুবই গুনাহ’র কাজ।
প্রসঙ্গ: সূরা জুমুআ
___________________________________________
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
৯) মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
১০) অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
তাফসির: ৯নং আয়াতে জুমার আযান হবার পর সবকিছু ছেড়ে ত্বরা করার কথা বলা হয়েছে।তার মানে এটা নয় যে সবকিছু ফেলে দৌড়ে চলে আসা।
কারণ নামাযের জন্যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দৌড়ে আসতে নিষেধ করেছেন। এই আয়াত দ্বারা বুঝানো হয়েছে-নামায ও খোতবার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শান্তি ও গাম্ভীর্যের সাথে মসজিদে গমন করা। (ইবনে কাসীর)
কোরআনে যা একবার হুকুম হয়ে যায় তা পালন ফরয, অমান্য করা হারাম।
জুমার আযানের পর বেচাকেনাকেও এই আয়াত দ্বারা হারাম করা হয়েছে।যা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য পালন করা ফরয।
(তাফসিরে মা’আরেফুল কোরআন)
১০) তখনকার সময়ে এক শুক্রবার জুমুআর নামাযের পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খোতবা দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় খবর আসে যে, সিরিয়া থেকে মদিনায় দেহইয়া ইবনে খলফ কালবীর একটি বানিজ্যিক কাফেলা/কেরাভান এসেছে।
মদিনায় তখন নিত্য পন্যের দুষ্পাপ্য থাকায় অনেকেই চলে যান খোতবা থেকে।মাত্র ১২জন সাহাবি অবশিষ্ট ছিলেন। এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে সুরা জুমুআ নাযিল হয়। এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মাধ্যমে তাঁর উম্মাহকে সতর্ক করা হয়।
নোট: মূলত এ ঘটনার পর থেকে জুমার খুতবাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামাযের আগে নিয়ে আসেন।(ইবনে কাসির)
এর পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে-
নামাযের পর কেনা বেচা ও রিযিক তালাশ করতে। সে অবস্থায়ও সাফল্য এবং বরকতের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা ও সাহায্য চাইতে।
ওসব বানিজ্যের পিছে বৃথাশ্রম না দিয়ে আল্লাহর নির্দেশনামত কাজ কর। কারন
(শেষ আয়াতে বলা হয়েছে)”আল্লাহই সর্বোত্তম রিযিকদাতা”।
আল্লাহর কাছে যা আছে তা ঐ বানিজ্য থেকে উত্তম।
সিদ্ধান্ত:
ক) জুমার আযানের পর কেনাবেচা হারাম
খ) যারা জুমা ও খোতবার জন্য ব্যবসা থামিয়ে দেয় তাদের বিশেষ বরকতের জিম্মাদার স্বয়ং আল্লাহই নিয়েছেন।
গ) খোতবাকালীন কাউকে চুপ করো কথাটি বলাও হারাম ও গুনাহে কবিরাহ। (হাদিস)
ঘ) ৯ নম্বর আয়াত দ্বারা জুমা আদায় ও খোতবা শোনা ওয়াজিব প্রমানিত হয়েছে।
(তাফসিরুল উশরিল আখীর)
বিশেষ তথ্য: জুমা নিয়ে আল কুরআনে পূর্নাঙ্গ একটা সূরা নাযিল হলেও এর নিয়ম কানুন কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।
স্বয়ং রাসুলুল্লাহই (সাঃ) জুমার নিয়ম সাহাবীদের শিখিয়ে দেন।
কুরআনে এমন বহু প্রসঙ্গ আছে। যা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পরে স্পষ্ট করেছেন।
সুতরাং এটা থেকে বুঝা যায় প্রকাশ্য ছাড়াও আল্লাহ তাঁর রাসুল সাঃকে পরোক্ষ নির্দেশনা দিতেন।
আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে,রাসুল সাঃ নিজ থেকে কিছুই বলেন নি,আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া।
“তিনি যা বলেন,তা তো কেবল ঐশি নির্দেশ,যা তাঁর কাছে ওহী করা হয়”
(সুরা নাজম)
জুমা’র এই দিনে :
● হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
“যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করার পর জুমা’র নামাযে এলো, নীরবে মনযোগ সহকারে খুতবা (আলোচনা) শুনলো, তার পরবর্তী জুমুআ পর্যন্ত এবং আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) একটি কঙ্কর (পাথর) স্পর্শ করলো সে অনর্থক কাজ করলো।”-[মুসলিম;৩য় খন্ড – ১৮৬৫]
● হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
“ইমামের খুতবা দেয়ার সময় যদি তুমি কাউকে চুপ থাকতেও বল তবে তুমি বেহুদা কাজ করলে।”-[বুখারী; ২য় খন্ড – ৮৮৭, মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ; ২য় খন্ড – ১১১২]