মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন: চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর নামাজে জানাজা লাখো মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।
বুধবার (৯ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় চট্টগ্রাম নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে ২য় জানাজা, দুপুর ২টায় বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৩য় জানাজা, বিকাল ৩টায় বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজের মাঠে ৪র্থ, ৫টায় কালীপুর ২নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গুণাগরী নিজ গ্রামের মসজিদে ৫ম জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন শেষে পিতা মৃত মোহাম্মদ মিয়া চৌধুরীর পাশে মরদেহ সমাহিত করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাত ৮টায় চট্টগ্রামের নিজ বাসভবনস্থ পাথরঘাটা মহল্লা কমিটির তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ১ম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারাসহ হাজার হাজার সর্বস্তরের মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
২য় দফা নামাজে জানাজা মহানগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে বুধবার (৯ নভেম্বর) সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা আহমদুল হক।
জানাজায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন, সাবেক মেয়র মনজুর আলম, বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, আবদুল্লাহ কবির লিটনসহ অনেকে অংশ নেন।
এ ছাড়া বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জানাজায় অংশ নেন। পরে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে এ বিএনপি নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।
২য় জানাজা শেষে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। সেখানে দুপুর ২টায় তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন চাম্বল মাদরাসার মুহতানিম মাওলানা আবদুল জলিল। পরে বিকাল ৩টায় গুনাগরী ডিগ্রি কলেজ মাঠে ৪র্থ জানাজা ও গ্রামের মসজিদে ৫ম জানাজা শেষে মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে পিতা-মাতার পাশে দাফন করা হয়।
জানাজায় বক্তারা বলেন- ‘জাফরুল ইসলাম চৌধুরী মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন, বাঁশখালীবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে নিবেদিত ছিলেন। বাঁশখালীর গণমানুষের কাছে তিনি আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন’
৭২ বছর বয়সে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।
জানা যায়, সোমবার (৭ নভেম্বর) জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ শেষে হঠাৎ অসুস্থতা অনুভব করেন জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। তাৎক্ষণিক তাকে চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি দুই ছেলে, দুই কন্যা ও এক স্ত্রী সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৫০ সালের ১৪ অক্টোবর বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাণিজ্য বিষয়ে স্নাতক পাস করেন। জাফরুল ১৯৯৬-৯৭ সালে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) এর সভাপতি ছিলেন।
জাফরুল ইসলাম চৌধুরী অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাঁশখালী আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হয়ে বাঁশখালী থেকে চারবার সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনে বিএনপি থেকে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের জুনে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ২০১০ সাল থেকে তিনি বিএনপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ-জাতীয় সংসদীয় ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একমাত্র সংসদ সদস্য। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবেরও আজীবন দাতা সদস্য ছিলেন তিনি।
জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, সাবেক সাংসদ ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, বাঁশখালীর বর্তমান সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালীব সাদলী প্রমুখ শোক প্রকাশ করেছেন।