বন্ধু,
কেমন আছিস তুই ?
কাল মনসা পুজো নিশ্চয়ই হাওড়ার বাজার থেকে এক বড় ছাগল কিনে তোর ছেলেকে রশি হাতে দিয়ে পেছন পেছন হাঁটতেছিস। যেমন করে তোর বাবা রামদাস হাট হইতে ছাগল নিয়ে আসত। মনে আছে তোর আমরা মুসলিম বলে কেউ পাঁঠার মাংস খেত না কিন্তু ইন্দিরা দিদির চাপাচাপি তে আমাকে খেতে হত। তুই ঢং করে বলতিস স্কুলের সবাই কে বলে দিবি।তোকে আমি চেপে ধরতাম তোর মূখ দিয়ে রাম লক্ষণের দিব্বি আদায় করে ছেড়ে দিতাম।ইন্দিরা দি কে বলতাম দিদি তুমি আমাকে এত ভালবাস কেন সে তোকে আর আমাকে একজোড়া করে সামনে আয়না ধরত আর বলত আমার ছোট ভাই নকুল আর তোর মধ্যে তফাৎ দেখা তো? দিদির প্রশ্নে তোর হিংসে হত কিনা জানিনা কিন্তু তুই কিছু একটা ভাবতিস।
একদিন খুব ভোরে আমি তোকে ডাকতে ডাকতে একেবারে তোদের ঠাকুর ঘরে উপস্থিত কাকিমা পুজোয় ব্যস্ত হাতের ইশারায় আমাকে থামতে বলে পুজো শেষ করে আমার মুখে ধূপ দিয়ে একটু করে প্রসাদ খাইয়ে দিল তোকে যেমন খাওয়ায় আমি কাকিকে প্রণাম করলাম তুই যেভাবে করতিস।আচ্ছা নকুল কাকি কি এখনো আছে? নকুল কাল মনসা পুজো ছাগল কাঁটার আগে আমি যেখানেই থাকি তুই আমাকে খুঁজে নিয়ে আসতি কাল কি আমাকে মনে পড়বে তোর। তুই ইন্দিরা দি কাকি যে ঢাকা যাওয়ার নাম করে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছিস সে দিন আমি বাড়িতে ছিলাম না দুদিন পর এসে শুনি তুই নেই বিশ্বাস কর অনেক কেদেছি ।
যেদিন তুই ইন্দিরা দি সহ কোকদন্ডী আশ্রমে গেলাম ঐদিন একদল মৌলবী আশ্রমের গেইটের উপর থাকা গরুর মূর্তি টা ভেঙে ফেলে । ইন্দিরা দি খুব কাঁদছিল তুই আর আমি ভয়ে জড়সড় । ঐ মৌলবীদের দলে আমাদের হুজুর ও ছিল তুই আমাকে বলেছিলি দেখ তোদের হুজুর ও আছে।আমি ইন্দিরা দির মুখের দিকে চেয়ে বিব্রত হচ্ছিলাম। ইন্দিরা দি আর তোকে হেচঁকা টানে নিয়ে এসেছিলাম । তোর মনে পড়ে দিদি যখন হারমোনিয়াম শিখাত আমি বার বার এলোমেলো চাপতাম দিদি সাতটি কাগজের টুকরোয় সারেগামা লিখে কাগজ গুলি হারমোনিয়াম এর ব টমে সেট করে দিত । তুই হাসতি আর দিদি সরে পড়লে কাগজ গুলি এলোমেলো করে দিতি আমি বটম চাপলে এলোমেলো সুর উঠত দিদি দৌড়ে এসে তোকেই কিন্তু বকে দিত। দিদির সাথে কিন্তু পরশদার একটা সম্পর্ক ছিল ।
জানিস পরশ দা তোরা চলে যাওয়ার পর হইতে সে যে গেল আর ফিরে আসেনাই। কাল নিশ্চয় ইন্দিরা দি আসবে ওকে প্রণাম জানাবি।তোর মনে পড়ে দুজন পালেগ্রামে দূর্গা পুজায় গেলাম ধুপের কলকি নিয়ে আমাকে নাচতে বলেছিলি আমি নাচলাম তোর পায়ের সমস্যা তাই তুই দাঁড়িয়ে রইলি তোর পিসির মেয়ে চৈতি বলেছিল মুসলিমের ছেলে হয়ে ও নাচ্চে চৈতিকে থাপ্পড় মারলি । চৈতির সাথে দেখা হয় ও সীতাকুণ্ড একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে নকুল এঁরা দেশে আছে খুব ভাল আছেন কাকা চলে গেল কেন আমার মাথায় আসেনা।
ওই দেশকে কি তোর দেশ বলিস? আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি এর পরিবর্তে কি সারা জাহা মে আচ্ছা ভারত হামারা এটা বলিস খুব জানতে ইচ্ছে করে রে নকুল! তোর মনে পড়ে আমাদের বাসায় গেলে মা নামাজ পড়বার সময় আমি উচু গলায় কথা বল্লে তুই বলতিস”আস্তে কথা বল কাকি নামাজে “। তোর হাজার স্মৃতি এখনো মনে পড়ে । নকুল ধর্ম ,সম্প্রদায়, আমাদের আলাদা করেনি নষ্ট রাজনীতির স্বৈরাচারী মনোভাব আমাদের আলাদা করেছে । জানিনা এই চিঠি তোর নজরে আসে কিনা যদি আসে মনে করবি এই এক বিরহ গাঁথা । ভাল থাকিস ।
ইতি
তোর ফেলে যাওয়া বন্ধু, দিদার, বাঁশখালী চট্টগ্রাম।