জালাল উদ্দীন ইমন: আমি গুমরে গুমরে কেঁদে উঠি বাজে কার ধ্বনি
ছিলে সবে এই বাঁশখালীর হৃদয়ের নয়নমণি।
তুমি নেই বলে হাহাকার করে কেঁদে উঠে বুক
আজ কে দিবে এই শূণ্য হৃদয়ে একটুখানি সুখ।
বাঁশখালীতে এক ভয়াল লাশের ঘূর্ণিঝড় এসেছিল। জলদস্যু রুপে নিয়ে গেছিলো ভাঙ্গা খড়ের চালে বসবাসকারী কিছু অসহায় মানুষের তাজা প্রাণ এমন এক পাশবিক হত্যাকান্ড শুধু বাঁশখালীর নয় সারা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ন্যাক্কারজনক হৃদয় বিদারক অনিয়ন্ত্রিত দুঃখজনক ঘটনা।
৩১ জন জেলের অসহায়ের কান্নার হাহাকারের চিৎকার আমরা শুনিনি। শুনেছে উত্তাল তরঙ্গের বাঁধ ভাঙ্গা ঢেউ। জানিনা ঐ বঙ্গোপসাগর কিভাবে এমন দৃশ্য সহ্য করেছিল। জীবিকার তাগিদে বঙ্গোপসাগরে ট্রলার নিয়ে ছুটে গিয়ে বাড়ি ফিরলেন লাশ হয়ে আবার কেউ বাড়িতে আজীবনের জন্য ফিরলনা। আজো জলকদরের তীরবর্তী গ্রামের মানুষ গুলোই চোখের জলে জলকদরকে মহাসমুদ্র বানিয়ে দিচ্ছে। পিতাহারা অবুঝ কচি খোকাখুকুরা আবেগপ্রবণ হয়ে হঠাৎ কেঁদে উঠে।
আমরা আব্বু বলে কাকে ডাকবো, কথা বল আব্বু তুমি ঘুমিয়ে আছো কেন আমার জন্য লাল টুকটুকে জামা আনবেনা। আরো কত কথা বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কান্নার ঝড় বইয়ে দেয়। চোখের কোণায় জমে যায় টগবগ করতে থাকে অশ্রুর সাগর। সন্তান হারা বৃদ্ধ পিতার অশ্রুজলে বালিশ ভিজাতে ভিজাতে আজ নিজের দুই আঁখি অন্ধ হয়ে গিয়েছে। মা তার আদরের সন্তান সাত রাজার ধন হীরা মানিককে না পেয়ে প্রতিদিনই সন্তানের স্মৃতিময় জিনিষপত্র ইত্যাদি বুকে জড়িয়ে অঝরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। যদিওবা মায়ের কান্নায় কারো কোন সান্ত্বনায় কাজ হয়না।
কোন কোন মায়ের এক মায়ের দুই সন্তান আবার কারো স্বামী সন্তান দুটোই কেড়ে নিয়েছিল এই মহা মৃত্যুর ঘূর্ণিঝড়। স্বামী হারা স্ত্রী যুবতী বয়সে নিস্তব্ধ হয়ে গম্ভীরভাবে মাটিতে বসে মলিন ফ্যাকাসে মুখ আজো দেখা যায়, বাচ্চা সন্তানের মুখ না দেখিয়েই সারা জীবন দুঃখের জোয়ারে ভাসিয়ে তার ভালোবাসার প্রিয় মানুষটি আগেই অভিমান করে একা একা শূন্য হাতে ওপারের বাসিন্দা হয়ে শুয়ে আছেন। সাথে নিয়ে গেছেন পরিবারের আশা ভরসা স্বপ্ন হাসিখুশি এবং বেঁচে থাকার আশ্বাস স্বজনদের কানে আজো মৃদু কণ্ঠে বারবার বেজে উঠে স্মৃতিময় দিনগুলি যা কখনো ভুলবার নয়।
বলছি ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ কুতুবদিয়া-মহেশখালী চ্যানেলের ধরঘাট এবং কুতুবদিয়ার বাতিঘর এলাকায় সশস্ত্র জলদস্যুদেরা বাঁশখালীর ৩১ জেলেকে বেঁধে নির্মমভাবে খুন করে সাগরে ডুবিয়ে মারার ঘটনা। বাঁশখালীর শেখেরখীল, ছনুয়া ও গন্ডামারা ইউনিয়নের টেকপাড়া, বলই মাঝির পাড়া, গুইল্যাখালী, বোচার পাড়া, খুদুকখালী, পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা ছিল নিহতরা। আর বাকিরা ছিল ভোলার রামগতি উপজেলার,যাদের নাম জানা যায়নি।
একসাথে হাজার হাজার মানুষ জানাজা পড়েছিল, ১৮ জন নিহত লাশের বাঁশখালীর ইতিহাসের এটিও একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
নিহতরা হলেন—-
মো. ছগির (৩৫),
মোঃ খলিলুর রহমান (২২),
মোঃ আব্দুর রহিম (২০)
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৩৫),
মোঃ আব্দুন নুর (২০),
মোঃ নেজাম উদ্দিন (৩২),
মোঃ আজম (২৬),
মোঃ মিজানুর রহমান (২২),
মোঃ দেলোয়ার হোসেন (২৮),
মোঃ নুর হোসেন (২২),
মোঃ ইউনুস (২৮),
মোঃ আব্দুল আলিম (২২),
মোঃ ছগির (৩২),
মোঃ নুরুল ইসলাম (৩৬),
মোঃ আমির হোসেন (৫০),
মোঃ ইসলাম (৪২),
মোঃ সাকের উল্লাহ (৩৫),
মোঃ জসিম উদ্দিন (২২),
মোঃ রফিকুল ইসলাম (২০),
মোঃ কাইয়ুম চৌধুরী (২০),
মোঃ এনাম (২২),
মোঃ আব্দুল মতিন (৪৫)
মোঃ রইজুল ইসলাম (৪২)।
লেখক
সম্পাদক- সবুজ বাংলা