জলকদর: সম্ভাবনার নয়া সম্ভার!

জালাল উদ্দীন ইমন: পিছিয়ে নেই বাঁশখালীর ঐতিহ্য ইতিহাস নিদর্শন দর্শনীয় স্থান; এমনকি আমদানি রপ্তানির দিক দিয়েও সফলতার ঘুড়ি উড়ছে প্রিয় বাঁশখালীতে।
কক্সবাজারের কুতুবদিয়া চ্যানেলমুখী হয়ে খাটখালীর ত্রিমুখীতেই জলকদরের ছুটাছুটি। এই জলকদরের তীরবর্তী উপকূলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে শেখেরখীল ছনুয়া ও গন্ডামারায় নতুন এক নগরী। বর্তমানে এখানে পাওয়া যায়না এমন জিনিস খুবই কম। যার একমাত্র প্রধান শিল্পখাত ট্রলার (বোট) শেখেরখীল ফাঁড়ির মুখ, সরকার বাজার, চাম্বল বাংলা বাজার, এসব উপকুলীয় এলাকাতে এখন চলছে বিভিন্নখাতের রমরমা ব্যবসা।

এখানে প্রায় এক হাজারের বেশি ট্রলার আছে, একটি ট্রলার নির্মাণ করতে খরচ হয় এক কোটিরও বেশি অর্থ। একটি ট্রলারে জেলের প্রয়োজন হয় ৩০ জনের অধিক। শুধু বাঁশখালীর বেকার সমস্যা নিরসন করছে তা নয়, সারা বাংলাদেশ থেকে যেমন নোয়াখালী বরিশাল ভোলা পিরোজপুর কুতুবদিয়া মহেশখালী টেকনাফ ইত্যাদি জেলা ও উপজেলার মানুষ জেলে হিসেবে ট্রলারে মাছ ধরে জীবিকানির্বাহ করছে।
স্থানীয় জনগণ এখন মাছ ধরতে কমই যায়। আগে যারা জীবিকা নির্বাহ করতে সাগরে যেত এখন সবাই একেকটি ট্রলারের মালিক হয়ে উঠেছে। বিশাল আকারের ২০টির বেশি উন্নতমানের আইস ফ্যাক্টরী। একটি ফ্যাক্টরীর উৎপাদন প্রতিমাসে ২০ লক্ষ টাকারও বেশি, প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল আসে ৬-৭ লক্ষ টাকা।

মাছ ব্যবসায়ীদের গ্রুপ সংখ্যা ২০টির অধিক। একটি গ্রুপে ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৬০-৬০ জনের অধিক। এসব গ্রুপ থেকে প্রত্যেক দিন ২০-২৫টি পরিবহণকারী ট্রাক বিভিন্ন স্থানে রফতানি হচ্ছে প্রতিদিন ঢাকা চট্টগ্রাম নোয়াখালী সহ ইত্যাদি জেলায়। এক কোটি টাকার বেশি ইলিশ মাছ বিক্রি হয় এতে। দোকানপাট গড়ে উঠেছে উপকুলীয় অঞ্চলভেদে ছনুয়া ডক ইয়ার্ড থেকে শেখেরখীল ফাঁড়ির মুখ থেকে দুপাশের সারি সারি সরকার বাজার পর্যন্ত বৃহত্তর দোকানপাট। আবার চাম্বল বাংলা বাজারের উত্তরের চেয়ে দক্ষিণ মাথা এখন বেশি জমজমাট হয়ে উঠেছে ট্রলার আর মাছ ব্যবসায়ীদের কারণে যেখানে প্রতিদিন ছোট বাজারে যাওয়ার জন্য ট্রাক ছাড়া ভেনগাড়ির প্রয়োজন হয় ১০০ টির বেশি। মাছ নামানোর জন্য নির্মাণ করা হয়েছে অনেক বড় ঘাট।

বর্তমানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব প্রচুর হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু শিল্প কারখানা যত বাড়ছে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তার দিগুণ কমছে। লেখাপড়া করার মত পরিবেশ ও নেই। দিনরাত শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা বিশ্রী অসভ্য গালিগালাজ। বর্তমানে এসব এলাকায় চোখ বুলালে পাওয়া যাবেনা এস এস সি উপরে শিক্ষিত ৫০ জনও। কেনইবা পাওয়া যাবে, চট্টগ্রাম ঢাকা বড় বড় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেও চাকরী নিতে ঘুষ দিয়েও ২০-২৫ হাজার টাকার বেতন পায়। আর অজ্ঞ হয়েও তাদের চেয়ে দিগুণ রোজগার করতে পারে জেলেরা সাগরে মাছ ধরে। ৬ মাসে কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়নে চলেও তাদের বেতন ১ লক্ষ থেকে ১লক্ষ ১০ হাজার। মাঝি হতে পারলে ২ লাখের বেশি। টাকার ঘ্রাণে নিয়মিত বাড়ছে শিশুশ্রমের মাধ্যমে শিশু জেলে। একজন শিশু জেলের বেতন হয় ৬ মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা। গড়ে উঠেছে ঘনবসতি কলনী ঘরবাড়ি। নোয়াখালী বরিশাল কুতুবদিয়া থেকে ঘর উঠে এসে এখানে ভিটেবাড়ি তৈরি করে। ভোগান্তির সীমা নেই পথচারীদের রাস্তাঘাটে যান চলাচলের বদলা ঠাসা থাকে ইলিশ জাল তুনার কাজ। রশি দিয়ে ট্রলার বেঁধে রাখায় রাস্তার উপরে রশিতে নিয়মিত হোঁচট খায় পথচারীরা। মাঝেমাঝে রাস্তা ব্লক করে বেড়িবাঁধ কেটে ট্রলার নামিয়ে। কিন্তু রাস্তা পুনরায় সংস্কার করার কাজে দেখা মিলেনা ট্রলার মালিকদের।

সরকারের সুনজর পড়লে অচিরেই বদলে যাবে বাঁশখালীর এই শিল্পখাত।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *