জলকদরের রাজনৈতিক কদর
মুহাম্মদ মোখতার হোছাইন সিকদার
পর্ব-০৩
রাজনৈতিক প্রয়োজনেও জলকদর খালের ব্যবহার হতো ব্যাপক। যেহেতু পুরো বাঁশখালীতে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এই জলকদর। তাই রাজনৈতিক প্রয়োজনেও জলকদরের ব্যবহারে কমতি ছিল না। একটা সময় ছিল যখন রাজনৈতিক সমাবেশের জন্য নেতাদের নিকট পছন্দের জায়গা হিসাবে- হাটখালী বাজার, বাংলাবাজার (এক সময়ের পাকিস্তানবাজার), বড়ঘোনা-গন্ডামারা হাইস্কুল, গন্ডামারা বাজার, বঙ্গবন্ধু হাইস্কুল, সরল আমিরিয়া উচ্চবিধ্যালয়, চুনতি বাজার, রত্নপুর স্কুল, ছাপাছড়ি স্কুল মাঠ ইত্যাদি। বিভিন্ন রাজনৈতিক জনসভাসমূহের আয়োজন করতেন স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা। এসব সমাবেশের মাধ্যমে জানান দিতেন নিজ নিজ দলের শক্তি ও সামর্থ্যের। দলসমূহ তাদের সমর্থক গোষ্ঠিকে এসব জায়গায় রাজনৈতিক সমাবেশে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। বিশেষ করে একটা কথা না বললে নয়, আর তা হলো আমাদের এই প্রিয় বাঁশখালীতে রাজনৈতিক অঙ্গণে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিপূর্ণ অবস্থান বরাবরের মতই মজবুত ছিল এবং এখনও আছে। তবে আগেকার দিনের মত আন্তরিকতা ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আছে কি না চিন্তা করা দরকার। এই অঙ্গণের দায়িত্বশীলগণ এবিষয়ে নজর দিলে আমাদের অনাগত প্রজম্মের জন্য এই সুন্দর অবস্থা রেখে যাওয়া সম্ভব। আমাদের সম্প্রীতিপূর্ণ এই অবস্থা সারা দেশের প্রতিহিংসাপূর্ণ ও সংঘাতমূলক রাজনৈতিক ধারার সম্পূর্ণ বিপরীত। আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের তুলনায় বাঁশখালীকে রাজনৈতিক দিক থেকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করতে পারে। অবশ্যই ইতিহাসের কলম কিন্তু ছোট-বড় সব সমস্যাকে তুলে ধরতে ভুল করেনি। এমনও রাজনৈতিক নেতাদের আমরা দেখেছি, যারা বিভিন্ন গোত্রের লোকদের মধ্যে উভয় পক্ষের হয়ে উসকানি দিয়ে নিজ স্বার্থ হাসিল করতেন। তারা মূলত রাজনৈতিক দাঙ্গা লাগাতে সক্ষম না হলেও বিভিন্ন অঞ্চল ও উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্যবাহী পরিবার এবং গোত্রে নানা স্বার্থগত বিষয়ে হামলা-মামলাতে ইন্দন দিতেন। অতি সম্প্রতি একটা উল্ল্যেখযোগ্য ঘটনা আমদের সামনে আছে, যাতে নতুন পুরাতন মিলে অভিশপ্ত রাজনীতির কুশীলবরা স্বার্থসিদ্ধির রাজনীতি করতে দেখলাম। বিনিময়ে তাদের কিছু স্বার্থ হাসিল হলেও কয়েকজন নিরীহ মাথাগরম মানুষদের লাশ আমরা পেলাম। এইসব কু-রাজনীতিকরা স্বার্থ পেলেও এই মানুষদের পরিবার হারিয়েছে তাদের অভিাবকদের। তাদের সন্তানগণ আর কখনো বাবার আদর-সোহাগ পাবে না। পাবে না তাদের পিতাকে অভিভাবকের স্থানে। এই সব কু-রাজনীতির কবল থেকে আমাদের প্রিয় বাঁশখালীবাসীকে উদ্ধার করতে হলে আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে।
জলকদরের জলজ আকুতি:
__________________________
অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিকাশ ও আদান-প্রদানের বাহন আমাদের এই জলকদর। এই জলকদর আমাদের ডাক দিয়ে বলে যায় ওহে জনপদবাসী, আমি এখনো তোমাদের সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারি। যদি তোমরা আমার যত্ন-আত্তিতে এগিয়ে আস। চুনতি বাজার থেকে ঈশ্বরবাবুর হাট পর্যন্ত আমার বুকে গেড়ে বসা মাটিগুলো খালি করে দিলে আমি জলকদর এখনও বাঁশখালীর উন্নয়নে আগের মতই ভূমিকা রাখতে পারি, তা হবে সময়ে চাহিদার আলোকে একটু ভিন্নভাবে। বাংলাবাজার ব্রীজে একটা রাবারডেম করা হলে আমি মিষ্টিপানির জলাধার হয়ে, মাছ চাষ ও শুষ্ক মওসুমে ব্যাপক কৃষি উৎপাদনে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারি।
জামানার এমন কোনও মুয়াজ্জিন আছে কি, যে কিনা আমাকে পূর্বের ন্যায় এই জনপদবাসীর সময়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ খেদমতের সুযোগ করে দেবেন। সেই উজ্জীবিত কাণ্ডারী কে, যে আমাকে আবারও সমোজ্জ্বল করে তুলতে পারে নবরুপে। কে আছো? আমার যৌবন ফিরিয়ে দিতে পারে। কোন সে স্বারতী, তোমার অপেক্ষায় একবুক আশা ধারণ করে আমি দিনাতিপাত করছি। এসো তুমি এগিয়ে এসো, সুযোগ করে দাও, জনপদের এই পুরনো খাদেমকে- জনপদবাসীর অবিরাম সেবা দেবার সুযোগ করে দাও, এই আকুতি-মিনতি আমার। (চলবে…)