জলকদরের অবয়চিত্রঃ যেখানে যেমন (১০-২০)
মুহাম্মদ মোখতার হোছাইন সিকদার
বাংলাবাজারসহ জলকদরের উপর ৭টি ব্রিজ (১০)
আমার প্রিয় জন্মভুমি বাঁশখালী বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চল হিসাবে ১৯৯১ সালে প্রললয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে লন্ডভন্ড চয়ে পড়ে। সেই সময় পশ্চিম বাঁশাখালীর মানুষ জলকদর পেরিয়ে পূর্ব পাড়ে আসার জন্য ঘাটের নৌকা ছাড়া যাতায়াতের বিকল্প কোনো বাহন ছিল না। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থর কারণে আমরা উপকূলবাসী বড়ই অসহায়ের মধ্যে ছিলাম। সেই কঠিন সময়ে জলোচ্ছাসের পরের দিন জলকদরের যতঘাট ছিল সব ঘাট সকল শ্রেণির মানুষের যাতায়াতের ফ্রি করে দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র জননেতা আলহাজ মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। আর ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উপকূলবাসীর দুর্দশার কথা বিবেচনা করে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী জননেতা কর্ণেল অলি আহমদ বীর বিক্রম বাংলাবাজার, গন্ডামারা বাজার, সরল বাজার, চুনতি বাজার, বশিরুল্লাহ মিয়াজীর বাজার, মোশাররফ আলী হাট, করিম বাজার ও চৌধুরী হাট এলাকায় একটি ব্রিজ নির্মাণ করেন। অবশ্য কয়েকটা প্রথমে, বাকি কয়েকটা পরে নির্মাণ করা হয়। এসব ব্রিজ হওয়ার ফলে আর ঘাটের ব্যবহার খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। তবে এখনো কয়েকটি স্থানে পারাপারের জন্য সেই পুরনো তরিকায় ঘাটের ব্যবহার চালু আছে।
মধুখালী স্লুইচগেইট (১১)
মূলত বাংলাবাজার থেকে পশ্চিম দিকে যে বিস্তীর্ণ বিল সেই বিলটাকে মধুখালী বিল নামে ডাকতেন স্থানীয় লোকজন। কেন এটা মধুখালী সেই ইতিহাস উদ্ধার করা গেলে অবশ্যই ভাল হতো। কিন্তু এটা উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। এই মধুখালী বিলের ঠিক মাঝখান বরাবর বিলের বর্ষাকারীন পানি নিষ্কাসন ও শুষ্ক মওসুমে লবণ চাষের জন্য নদী পানির সরবরাহে এই স্লইচ গেইট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এলাকার অধিবাসীরা এই গেইটের কারণে নানাভাবে উপকৃত হতেন, এখনো হচ্ছেন। এক সময় এমন ছিল এই মধুখালী বিলের মাঝ দিয়ে দিনে-দুপুরেও মানুষ ভয় করতেন। রাতের বেলায় নাকি এই বিলের মাঝে কত কিছু খেলা করতেন, কত ভয়ংকর ঘটনার কথা শুনেছি, যা রীতিমত গা শিউরে উঠার মত। এইবিলের জমিগুলো বেশিরভাগ অনাবাদী ছিল। সময়ের আবর্তে আজ আর অনাবাদী নেই।
ডেপুটিঘোনা স্লুইচ গেইট (১২)
মধুখালী স্লুইচ গেইটের ঠিক বিপরীতে জলকদরের পূর্ব পাড়ে ডেপুটিঘোনা এলাকায় এই স্লুইচ গেইট অবস্থিত। চাম্বলের ডেপুটিঘোনা হয়ে শীলকূপের ছড়ার একটি শাখা চলে আসছে সেই ছড়ার মুখে এই স্লুইচ গেইট স্থপন করা হয়। এর মাধ্যমে পশ্চিম চাম্বলের লোকজন জলাবদ্ধতার পানি নিষ্কাশ করে চাষাবাদের উপকার ভোগ করে থাকেন এখনো।
হমর আলী ঘাট (১৩)
বর্তমানে জলকদরের পশ্চিমপাড়ে মধুখালী বিলের স্লুইচ গেইট থেকে আর একটু সামনে এগুলেই হমর আলী বাড়ি। এই জায়গায় একটি পারাপারের ঘাট ছিল। বর্তমানে নাই বললে চলে। এই ঘাট দিয়েও পূর্ব পশ্চিমের মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে পারাপার করতেন। এই জায়গায় নৌকা সাম্পান নিয়মিত অবস্থা করতেন।
লালপুরী ঘাট (১৪)
উত্তর বড়ঘোনা ও দক্ষিণ গন্ডামারার সীমান্তে অবস্থি লালপুরীর পুরাতন ও নতুন বাড়ি। এই বাড়ির নামে এই ঘাটের নামকরণ করা হয়। শীলকুপ ইউনিয়নের মনকিচর এলাকার সাথে যোগাযোগ সহজ মাধ্যম হিসাবে এই ঘাট দু-কুলের মানুষেরা ব্যবহার করতেন।
ছিবাখালী গোদা সংলগ্ন স্লইচ গেইট বা শীলকুপের ছড়া (১৫)
লালপুরী বাড়ি ঠিক পূর্ব পাশে চাম্বল শীলকূপের সংযোগ স্থল এই গোদা বা স্লুই গেইট। শীলকূপের ছড়া জলকদরের সাথে যেখানে মিলিত হয়েছে তার নামই ছিবাখালী গোদা বা স্লুইচ গেইট। বর্ষার মওসুমে হরেক রকম মাছের আখড়া হিসাবে সমধিক পরিচিত ছিল এই ছিবাখালী গোদা বা স্লুইচ গেইট। শীলকূপের ছড়ার নিত্য দিনের পানি নিষ্কাসনে এই গেইট ব্যবহার হতো।
কাটা খালী স্লুইচ গেইট (১৬)
লালপুরীর নতুন বাড়ির উত্তর পাশে জলকদরের পশ্চিম পাড়ে এইস্লুইচ গেইটটি অবস্থিত। স্থানীয় নামে গুইল্ল্যা মাছের জন্য বিখ্যাত ছিল এই গেইটটি। সংশ্লিষ্ট লবণ মাঠে বর্ষা মওসুমে চিংড়ি মাছের চাষ করতেন। হরেক রকমের মাছ পাওয়া যেত এই মাছের ঘেরে। এসব স্লুইচ গেইটের পাশে কোন কোন যায়গায় সরকারী একটা বাড়িও ছিল। যাতে সরকারে পক্ষে গেইট দেখভালকারী কর্মকর্তারা থাকতেন।
গন্ডামারা বাজারস্থঘাট বা ব্রীজ (১৭)
গন্ডামারা বাজারে ও পশ্চিম বাঁখালী রহমানিয়া মাদ্রাসায় লেখা পড়ার প্রয়োজনে পূর্বের লোকজন এই ঘাট ব্যবহার করতে। এখনো এই ঘাটের সামান্য করে হলেও চালু আছে। এটা গন্ডামারা বাজার থেকে পূর্বপাড়ে মিনজিরিতলা-কাহারঘোনা এলাকার লোকজনের যাতায়াত সুবিধার জন্য ব্যবহার করতেন। আবার মনকিচরের মানুষ জনের যোগাযোগের বাহন হিসাবেও চলত। ১৯৯০এর দশকে এই জায়গায় ব্রীজ হওয়ায় এই ঘাটের ব্যবহার এখন আর নেই বললেই চলে।
মনকিচর এমদাদিয়া মাদ্রাসা, মহিলা মাদ্রাসা ও হিফজ খানা (১৮)
মনকিরচরের আইয়ুব আলী হাজীর বাড়িটি অতি পরিচিত বাড়ী। এই বাড়িরই বাসিন্দা দু সহোদর বিশিষ্ট্য ওয়ায়েজদ্বয় হযরত মওলানা আবু বকর ও মরহুম মওলানা আবুল কাশেম র. বাঁশখালীসহ পুরো চট্টগ্রামে পরিচিত নাম। মনকিরচর এমদাদিয়া মাদ্রাসাটি তাদেরই হাতে গড়া দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই মাদ্রসাটি মওলানা আবু বকরের মাদ্রাসা নামেও পরিচিত আছে। সাথে একটি হিফজখানাও চলমান আছে। এই মাদ্রাসা ও হিফজখানা থেকে বহু আলেম-হাফেজ তৈরী হয়ে সমাজে দ্বীনের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন আজঅবধি। পরে মরহুম মওলানা আবুল কাশেম রহ. একক প্রচেষ্টায় একটি মহিলা মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা হয়। হয়ত তাহার মৃত্যুর বছর তিনেক আগে এই মহিলা মাদ্রাসা টি যাত্রা শুরু করেন। এখনো মাদ্রাসা ত্রয় দিন দিন অগ্রগতির সহিত এগিয়ে চলছে। এতদাঞ্চলেনারী সমাজে দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারে মাদ্রাসাটি বিশেষ অবদান রেখে চলছে।
জালিয়াখালী খাল ও বাজার (১৯)
গন্ডামারা বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে পূর্ব দিকে সামান্য দক্ষিণে বাঁক করে পূর্ব দিকে ছুটে চলেছে যে খালটি তার নাম জালিয়াখালী খাল। এক সময় বোটের ব্যবসার ক্ষেত্রে এ খালের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। হাটখালীর পরে এই খালের মাথায় যে,জালিয়াখালী বাজার তাও জলকদরের কারণে নাইয়্যা-মাঝিদের মিলন মেলা ছিল।
দোয়াঁইল্ল্যার দীঘি স্লুইচ গেইট (২০)
এটা গন্ডামারা-সরল এর সীমানা স্লুইচ গেইট। এই জায়গায় দোঁইল্লার দীঘি নামে আরেক ঐতিহাসিক দীঘি ছিল। অথচ এই দীঘির বর্তমানে কোন অস্তিত্ব নেই।