বাঁশখালী টাইমস: জন্ম কিংবা মৃত্যু। কোনো পরিবারে শিশুর জন্মে আনন্দ থাকলেও মৃত্যুতে ভর করে বেদনা। আর নিজ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের আনন্দ-বেদনা দুটোই ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন একজন চেয়ারম্যান। শিশুর জন্মে শুভেচ্ছা বার্তা, মৃত্যুতে পৌঁছে দিচ্ছেন শোকবার্তা। খামে করে সঙ্গে পাঠাচ্ছেন সরকারি জন্ম-মৃত্যু সনদ পাওয়ার আবেদন পত্রটিও। আর আবেদন জমা হলেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন সনদটিও। অর্থাৎ পরিষদে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেও যে সেবা সহজে মিলতো না তা এখন ঘরেই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। গ্রাম পুলিশ, গণ্যমান্য ব্যক্তি কিংবা যে কোন মাধ্যমে শুধু খবরটাই পৌঁছে দিতে হবে ইউনিয়ন পরিষদে।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন এবং সেবা প্রদানে এমন যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করে চট্টগ্রাম জেলায় শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন নির্বাচিত হয়েছে বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদ।
অদ্য ৬ অক্টোবর জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবসে মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রাম জনাব মো. আশরাফউদ্দীন সাধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান কে.এম. সালাহ্উদ্দীন কামাল ও সচিব নোবেল ভট্টাচার্য-কে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা এবং সনদপত্র প্রদান করেন।
জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান এর সভাপতিত্বে ডিডি (এলজি) জনাব বদিউল আলমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও পরিচালক-স্হানীয় সরকার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. শাকাওয়াত উল্লাহ, সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী প্রমুখ।
সম্মাননা গ্রহন করে সাধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান কে.এম. সালাহউদ্দীন কামাল বলেন- কোনো কাজই সরকারের একক প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়। সবাই সার্বিক সহযোগিতা করলে কোনো কাজই কঠিন থাকে না। কাজের স্বীকৃতি পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত। এ সম্মান আমার সাধনপুর ইউনিয়নবাসীকে উৎসর্গ করলাম। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে আমি টিম প্রধান হিসেবে কাজ করছি মাত্র। এ কাজে আমাকে সার্বিক নির্দেশনা ও পরামর্শ ও শ্রম দিয়েছেন মাননীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব সাইদুজ্জামান চৌধুরী, ইউপি সচিব, সদস্য, গ্রাম পুলিশ ও উদ্যোক্তা। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
শুধু জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নয়, ইউনিয়ন পরিষদের আওতাভুক্ত সরকারি সবধরনের সনদও চেয়ারম্যান বিনামূল্যে দিচ্ছেন ইউনিয়নবাসীকে। আর সরকারি সনদ প্রদানের ফি নিজের ব্যক্তিগত ফান্ড থেকেই পরিশোধ করছেন। অবশ্য এমন ঘোষণা তিনি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতেই দিয়েছিলেন। যেমন কথা তেমন কাজ। শপথ গ্রহণ শেষে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত নানা ধরনের সনদ বিতরনের অংশ হিসেবে প্রায় তিন লক্ষ টাকা নিজ তহবিল থেকেই পরিশোধ করেছেন চেয়ারম্যান নিজে।
জানতে চাইলে সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কে.এম সালাহ্উদ্দীন কামাল বলেন, ‘আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল জয়ী হলে সবধরনের নাগরিক সেবা বিনামূল্যে সরবরাহ করবো। জানতাম এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গেলে সনদের এসব ফি আমাকেই পরিশোধ করতে হবে। তবুও জনগণের সেবার বিষয়টি মাথায় রেখে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এখন প্রতিশ্রুতি রক্ষার চেষ্টা করছি। আমি গ্রামের লোকজনকে বলেছি আমাকে সংবাদটি পৌঁছে দিলে আমি সেবা ঘরে পৌঁছে দিব। এক্ষত্রে মৃত্যু সনদটিও দ্রুত দেয়া সম্ভব হলেও জন্মসনদ দিতে কিছুটা বিলম্ব হয়। কারন ধর্মীয় রীতি মেনে শিশুর নাম রাখার পরেই জন্মসনদের আবেদন করতে হয়। এসব কাজ ছাড়াও এলাকাকে মাদকমুক্ত করতে কাজ করছি। এ কাজটিই আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং। এক্ষেত্রে আমি পাঁচটি বছর সকলের সহযোগিতা চাই। সবার সহযোগিতা পেলে আমি আধুনিক ও মডেল সাধনপুর উপহার দিব।’
পশ্চিম সাধনপুর ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এন্তেজার উদ্দিন আহমদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদের পুত্র। মৃত্যুর এ খবর পেয়েই তাঁর স্ত্রী জয়নাব বেগমের বরাবরে শোকবার্তা পাঠিয়ে দেন। খামে পৌঁছে দেন মৃত্যু সনদ পাওয়ার আবেদন ফরমটিও। সাধনপুর ৮নং ওয়ার্ডের নেজাম উদ্দিন ও তছলিমা আক্তার দম্পতির ঘরে নতুন অতিথি এক শিশুর জন্ম হয়। খবরটি পেয়েই এ দম্পতি বরাবরে দেয়া শুভেচ্ছা বার্তাটি ও মিষ্টি নিয়ে নিজেই নতুন অতিথিকে দেখতে যান চেয়ারম্যান সালাহ্উদ্দীন কামাল। চেয়ারম্যানের এমন উদারতায় মুগ্ধ নেজাম-তছলিমা দম্পতি। শুধু এই দুই পরিবার নয়, সালাহউদ্দীন কামাল দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যেসকল পরিবারে শিশুর জন্ম ও আপনজনের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের কাছে চেয়ারম্যানের বার্তাসহ সনদ পাঠানো হবে।
সেবাধর্মী এসব কাজের পাশাপাশি মাদক নির্মূলেও ভূমিকা রাখতে তৎপর তরুণ এ চেয়ারম্যান। ইতোমধ্যে গত ২ সেপ্টেম্বর বাণীগ্রাম বাজারে ইউএনও, ওসি এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে মাদক বিরোধী সমাবেশ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। একই সাথে ‘মাদক ছেড়ে মাঠে চল’ স্লোগানে প্রতিটি ওয়ার্ড নিয়ে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
সাধনপুর ইউনিয়নের লোকজন জানান, দেশে সবধরনের নির্বাচনে জয়ী জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কিংবা রক্ষায় খুব একটা সক্রিয় থাকেন না। সেদিক থেকে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিরল দৃষ্টান্ত রেখে চলেছেন চেয়ারম্যান সালাহউদ্দীন কামাল। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন- সাধনপুর ইউপি চেয়ারম্যানের সেবা প্রদানের মানসিকতা থেকে সারা দেশের ইউপি চেয়ারম্যানরা শিক্ষা নিতে পারেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন।
উল্লেখ্য, তিনি বাণীগ্রাম নিবাসী সাধনপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধকালীন “গ্রুপ কমান্ডার” মরহুম খোন্দকার মো. ছমিউদ্দীন-এর জেষ্ঠ্য পুত্র।