
তৈরি পোশাকখাতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও বাজারজাতকারী চট্টগ্রামের ছোট-বড় কয়েক হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক শিল্পের উৎপাদন ও বিপনন বন্ধ থাকায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা।
আসন্ন রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে যারা শত শত কোটি টাকা আগাম বিনিয়োগ করেছেন, তারা এখন ভয়াবহ অর্থ সঙ্কটে মানবেতর অবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দিন গুণছেন।
কোন এক সময় করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কোটি কোটি টাকার ক্ষতি কাটিয়ে ব্যবসায়ীরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কি-না এই শঙ্কা এখন সবার মধ্যেই।
চট্টগ্রামের ফ্যাশন ব্র্যান্ডের উদ্যোক্তা, তৈরি পোশাকের উৎপাদনকারী এবং বড় বড় পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে চরম দুরবস্থার চিত্র পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম ভিত্তিক জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড ম্যানহুড ফ্যাশনের কর্ণধার তৈয়বুল আলম জিকু রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর থেকে আমরা ভয়াবহ সঙ্কটময় একটি পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি। সারাবছর আমরা রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখেই ব্যবসায় বিনিয়োগ করি।
‘এছাড়া পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যেও তৈরি পোশাকের বড় ব্যবসা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ছোট-বড় সব কারখানা এবং মার্কেট-শপিংমল বন্ধ থাকায় হাজার হাজার মানুষ পূঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, ‘দেশীয় ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাক স্থানীয়ভাবে উৎপাদন এবং বিপণনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত। ঈদকে সামনে রেখে এই শিল্পে ব্যবসা হয় ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ব্যবসায়ীদের আগাম বিনিয়োগের বিপরীতে বর্তমানে উৎপাদন এবং বিপণন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি হবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।’
নিজের শো-রুম ও কারখানার উদাহারণ দিয়ে জিকু জানান, তার কারখানা এবং শো-রুমে বিভিন্ন পর্যায়ে ২০০ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। শুধু ঈদের মাসেই তার কারখানা ও শো-রুমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার পণ্য বেচাকেনা হয়।
আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে কয়েক কোটি টাকার পণ্য উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু এখন সবকিছু বন্ধ থাকায় কর্মচারীদের বেতন দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। ঋণ করে মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা হলেও এপ্রিল মাসের বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।
এছাড়া মার্কেট কারখানা সব বন্ধ থাকা সত্ত্বেও দোকান বা কারখানা ভবনের মালিকরা ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। যা অমানবিক। গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক গার্মেন্টস কারখানার মালিকরা সরকারের কাছ থেকে বড় অঙ্কের প্রণোদনা পেলেও দেশীয় ব্র্যান্ডের উৎপাদনকারী এবং স্থানীয়বাজারে বাজারজাতকারী ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প মালিকরা কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন এ ব্যাপারে সরকারের কোনো ঘোষনা নেই।
এই খাতেও প্রণোদনার দাবী জানান ফ্যাশন শিল্প উদ্যোক্তা তৈয়বুল আলম জিকু।
চট্টগ্রামে ঈদ পোশাক পণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি বিক্রেতা হাজী তসলিম উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে এই বাজারে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। কিন্তু এখন সব স্তব্ধ। প্রতিজন ব্যবসায়ী শত শত কোটি টাকা লোকসান গুণতে বাধ্য হবেন।’
‘ঈদের বেচাকেনার জন্য বিভিন্ন কারখানায় ও ব্যবসায়ীদের পোশাকের জন্য বুকিং দেওয়া এবং কোটি কোটি টাকার পণ্য কিনে গুদাম ভর্তি করে রাখার পর বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো দুঃসময় আর কখনো আসেনি’ বলে মন্তব্য করেন ব্যবসায়ী তসলিম।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের অপর পাইকারী ব্যবসায়ী শাহ আলম সওদাগর রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষ্যে আমাদের কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে গেছে। দিনের পর দিন অলস সময় কাটাচ্ছি আমরা। করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় অবস্থায় ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করা নেই।’
চট্টগ্রাম ভিত্তিক দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড জেন্টেলম্যান, শৈল্পিক, ব্লুমুন, ট্রাফিকসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্যাশন শিল্প উদ্যোক্তারা রাইজিংবিডিকে জানালেন এই পরিস্থিতিতে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কি-না জানেন না। এ ব্যাপারে সরকারি প্রণোদনা পেলে দেশের পোশাক শিল্পের ৮০ ভাগ চাহিদা পূরণকারী এই শিল্প বেঁচে থাকবে এবং প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান রক্ষা পাবে।
সূত্র: রাইজিং বিডি