ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সাথে ছিল আগুনও
জাতি আজ ভুলতে বসেছে ভয়াল ২৯ এপ্রিল কে…
(এ দিনে নিহত সকল আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। )
***
২৭ বছর আগে ঘটেছিল সেই ট্রাজেডি।
সম্প্রতি(১ বছর আগে) আমি ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের উপর বই সংকলন করতে গিয়ে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণের জন্য বিভিন্ন মিডিয়ার দ্বারস্থ হয়েছিলাম। যদিও চট্টগ্রামের তৎকালিন জেলা প্রশাসক(ডি.সি) জনাব মেজবাহ উদ্দিন আমাকে এ বিষয়ে তথ্য সহযোগিতা দিয়েছিলেন তবু আমি অনলাইন জগতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিক্ষিপ্ত লেখাগুলো থেকে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। পেয়েছি অনেক বাস্তব অভিজ্ঞতার বর্ণনাও। আবার কয়েকজন বিদগ্ধ মণিষি আমাকে তাদের নিজের অভিজ্ঞলদ্ধ লেখা দিয়েছেন আমার সংকলিত বইটির জন্য।
এখানে কয়েকজন লেখক ঐ দিন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সাথে আগুনের উপস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন। সেখান থেকে আমি কয়েকজনের উদ্বৃতি তুলে ধরছি;
শিক্ষাবিদ, কবি, সাংবাদিক কমরুদ্দিন আহমদ লিখেন, ‘‘দরজার খিলক ছুটে গিয়ে কপাট দুটি খুলে গেল। তখন আমি একটি চেয়ার দরজায় দিয়ে তাতে বসে দেয়ালে দু’হাত ঠেস দিয়ে দরজা চেপে বসে থাকলাম। বাইরে বাতাসের ভয়াল শব্দ, গাছের ডাল ভাঙ্গার শব্দ, ঘরের টিন উড়ে যাওয়ার শব্দ। আর বৃষ্টির সাথে বিদ্যুৎ চমকের সাথে এক ধরনের আগুনের হল্কা ভেসে যাচ্ছে তা দরজার ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছি। ভোরের দিকে ঝড়ের মাতম থেমে গেল।’’
লেখক, কলামিষ্ট, ব্যাংকার এম.ওসমান গনি লিখেছেন, ‘‘আমরা যে বাসায় অবস্থান করছিলাম তার দক্ষিণ দিকটা ছিল খালি। জানালার পাশে দাঁড়ানোই যাচ্ছিল না। আগুনের লেলিহান শিখা যেন দক্ষিণ দিক থেকে ধেয়ে আসছিল। এ যেন আগুনের লু হাওয়া। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা, যা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। এ রাত যেন কিয়ামতের নমুনা হয়ে ধরণীতলে অবতীর্ণ হয়। এ রাতের ভয়াবহতা দীর্ঘ দু’যুগ পরও ভুলা যায়নি। এটিই বাস্তবতা। ’’
এছাড়া ব্লগার তানভীর লিখেন, ‘‘ঘরের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। হঠাৎ খুব ইচ্ছে হল বাইরেটাকে দেখার। আম্মার নিষেধ অগ্রাহ্য করে ড্রইংরুমের দরজা খুলে বাইরে যা দেখলাম তাতে রক্ত হিম করা একটা ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা হল! দেখলাম ওই প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে একটা আগুন কুন্ডলী সাপের মত হিস হিস শব্দ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই অদ্ভূত ঘটনার ব্যাখ্যা আজও আমি পাই নি। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, পরদিন ঝড় থামার পর দেখলাম, শহরে যে সব গাছ তখনো অক্ষত আছে সেসব গাছের পাতা প্রায় সবই পুড়ে কালো হয়ে গেছে! পৃথিবীর আরো অনেক ঝড় নিয়ে পরে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, কিন্তু ঝড়ের সময় এমন আগুন কুন্ডলী ছোটাছুটি করার আর গাছের পাতা পুড়ে যাবার কথা আর কোথাও শুনি নি।’’
ব্লগার বনবিলাসী লিখেন, ‘‘কথামত ৮টার সময় কারেন্ট চলে গিয়েছিল, আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাত ১০টার পর থেকে আস্তে আস্তে বাতাস শুরু হল। আমরা সবাই আবার ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। রাত বাড়ার সাথে সাথে ঝড় আর বাতাসের তীব্রতা বাড়তে শুরু করল। আমাদের বাসার জানালার কাঁচগুলো একে একে ভাঙ্গা শুরু করল। আমাদের বাসাটা ছিল সমুদ্রের কাছাকাছি, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায়। আমরা যে বাসায় ছিলাম সেটি ছিল ৫ তলা বিল্ডিং, আমরা ৪র্থ তলায় ছিলাম। আমাদের বাসা থেকে সমুদ্রটা একটু একটু দেখা যায়। রাত ১২ টার দিকে আমার আব্বা একবার বারান্দায় গেলে দেখলো সমুদ্র থেকে কেমন যেন আগুনের ফুলকির মত উঠছে। এটা দেখে আমার বাবা একবার আজানও দিয়েছিল। কারণ তিনি নাকি শুনেছেন আজানের শব্দে ঝড়ের তীব্রতা কমে যায়।’’
উপরোক্ত বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এটা নিশ্চিত হতে পারি যে ২৯ এপ্রিলের ভয়াল রাতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সাথে আগুনেরও একটি সম্পর্ক ছিল। পানি, বাতাস ও আগুন এই তিন শক্তির সম্মিলিত আক্রমণের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধারণাতীত ছিল।
#ভয়াল ২৯ এপ্রিল ১৯৯১ইং স্মরণে
(আমার দুর্ভাগ্য যে এত পরিশ্রমের সংকলিত বইটা মোটামোটি রেডি থাকা সত্ত্বেও এখনও ছাপানো অক্ষরে ছেপে প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। একজন দক্ষ সাহিত্য সমঝদার ও সাহসী কর্মবীর আমার দরকার। )
– আহমদ রশিদ বাহার