মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের: বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। স্থানীয় এক প্রবাসীর ছেলের অপকর্ম ধরা পড়ায় জিনের কারণে ছাত্রীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে বলে ঘটনাটি স্থানীয় শালিসকার কর্তৃক সমঝোতার মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ।
সরেজমিনে পরির্দশন কালে স্থানীয় এলাকাবাসী এবং স্কুল সূত্রে জানা যায়, অন্তঃসত্ত্বা হওয়া ছাত্রীটির বাড়ি গন্ডামারা ইউনিয়নের ৭৭নং পূর্ব গন্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পার্শ্বে ২ নং ওয়ার্ডের ছৈল্লনির ব’ড় বাড়ির দিনমজুর মোঃ আনিছের কন্যা ভিকটিম ছদ্মনাম তাহসিনা (১২)। সে উক্ত বিদ্যালয়ের ২০১৮ সালের শিক্ষাবর্ষে ৪র্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হওয়া ছাত্রী ছিল। জানা যায়, স্কুলে লেখাপড়া চলা অবস্থায় স্কুলের সহকারি শিক্ষিকা হোসনে আরা বেগম ছাত্রীটিকে লেখাপড়ার পাশাপাশি মাসিক ১ হাজার টাকা করে তার বসত ঘরে কাজের মেয়ে হিসেবে রাখেন। শিক্ষিকার বাড়ি একই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের হরিনার বড় বাড়ি এলাকায়।
শিক্ষিকা হোসনে আরার স্বামী মোঃ রহম আলী রাউজান এ ও আর সি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাই তিনি চাকরির সুবাধে বেশীর ভাগ সময় রাউজানেই থাকেন। ঘরে শিক্ষিকা তার একটি ছোট্ট মেয়ে এবং ছাত্রীটি থাকতেন। শিক্ষিকার ভাসুর আলী হোসেন বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ সৌদি আরবে থাকেন। তার তিন ছেলে রয়েছে। তার বড় পুত্র মোঃ মহিউদ্দীন। শিক্ষিকার বাড়িতে থাকারত অবস্থায় মহিউদ্দীন অধিকাংশ সময় রাতের অন্ধকারে বাড়ির পিছনে দরজা দিয়ে ডুকে উক্ত ছাত্রী (ছদ্মনাম) তাহসিনার সাথে অবৈধভাবে মেলামেশা করার ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয় বলে নির্যাতিতার পরিবার দাবি করেন।
৭৭ নং পূর্ব গন্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রশিদ বলেন, আমি স্কুল থেকে বাজারে আসার পথে ছাত্রীটিকে তাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় দাড়ানো অবস্থায় দেখে কেমন জানি অসুস্থ হওয়ার মত লাগল, তখন আমি মেয়েটিকে স্কুলে গিয়ে তাদের ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করতে বলি, পরবর্তীতে এসব ঘটনার রহস্য বের হয়। ছাত্রীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে ঘটনাটি সত্য। তবে মেয়েটি ২০১৮ সালে ৪র্থ শ্রেণি থেকে উর্ত্তীণ হয়ে ৫ম শ্রেণির নতুন বই নিয়ে ৪-৫ দিন স্কুলে ক্লাস করে আর স্কুলে আসেনি। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরটি আমরাই প্রথম ওই ছাত্রীর পরিবারকে জানিয়েছি। বর্তমানে ছাত্রীটি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
এ দিকে এ ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ২ জন ইউপি সদস্য নুরুল হাকিম ও আব্দুল জাব্বার গত ২৮ জুন ঘটনাটি নিয়ে শালিসী বৈঠকের আহবান করে। এ সময় নির্যাতিত ছাত্রীটি মহিউদ্দিনকে তার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ব্যাপারে দায়ী করেন। কিন্ত প্রভাবশালীদের আঁচড়ে ওই দরিদ্র ছাত্রীটির কথা কেউ আমলে না নিয়ে জিনের কারণে এ অবস্থা হয়েছে বলে ঘটনাটি ধামাপাছা দেওয়ার চেস্টা করে।
ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষিকা হোসনে আরা বেগম বলেন, আমি ছাত্রীটিকে প্রায় ৩ বছর যাবৎ আমার বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে রেখেছিলাম। গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে সে আমার বাড়ি থেকে চলে আসে। অন্ত:সত্ত্বার ঘটনায় সে আমার ভাসুরের ছেলে মহিউদ্দিনকে দায়ী করলেও ছাত্রীটির ঘটনার বর্ণনার সঙ্গে কিছুই মিল হচ্ছে না। তবে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে ঘটনাটি সত্য। কেনই বা অন্তঃসত্ত্বা হলো এ বিষয়ে আমি জানি না। তবে তার জিনের আলামত ছিল।হয়তো জিনের কারণে ছাত্রীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়া ছাত্রীর বাবা মোঃ আনিছ ও মা রাজিয়া বেগম জানান, আমার মেয়ে উক্ত শিক্ষিকার ঘরে থাকা অবস্থায় মহিউদ্দীন আমার মেয়ের সাথে অবৈধভাবে মেলামেশার কারণে অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়ে।তবে মেয়েটি ভয়ে আমাদেরকে ঘটনাটি জানায়নি।
এদিকে এ ঘটনাটি জিনের অজুহাত দেখিয়ে আমরা গরীব অসহায় অশিক্ষিত বিধায় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে একটি মহল। তবে আমরা এই ঘটনাটির জন্য প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করব।
গ্রাম্য শালিসী বৈঠকে উপস্থিত থাকা গন্ডমারা ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহ আলম বলেন, আমরা বৈঠকে নির্যাতিত ছাত্রীটির অপকর্মের হোতা খোঁজার জন্য বৈঠক করেছিলাম। মহিউদ্দিন নামের প্রবাসীর এক ছেলের নাম ছাত্রীটি বলেছে। কিন্তু বারংবার বৈঠকে জিনের কথা ওঠে আসায় আমরা সমাধান করতে পারিনি। তবে গতকাল সোমবার (১ জুলাই) আবারো বৈঠকের কথা থাকলে মহিউদ্দীনের পরিবার উক্ত বৈঠকে আসবে না মর্মে জানিয়ে দেয়।অন্তঃসত্ত্বার ঘটনাটি সত্য। তবে আমি তাদেরকে ডাক্তারি পরীক্ষাসহ আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য ওই ছাত্রীর পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছি।
গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ আলী হায়দার চৌধুরী আসিফ বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি, তবে এইসব ঘটনা ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ম বহির্ভূত বিচার নয়। যার কারণে এসব ঘটনার বিচার করা আইনসম্মত নয়। কিছুদিন আগেও গন্ডামারার পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামে এক অন্তঃসত্ত্বা যুবতীকে জিনে মেরেছে বলে হত্যা করেছিল। আবারও ৫ম শ্রেণির ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর জিনের আঁচড় বলে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।তাদেরকে আইনের আশ্রয় নিয়ে এসব দুস্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে বাঁশখালীর উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, বাঁশখালীতে বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং ও সামাজিক অবক্ষয়রোধে আমি গ্রামে-গ্রামে গিয়ে অসংখ্যবার সভা-সমাবেশ করেছি। এসব অপকর্মরোধে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সচেতন ও উদ্যোগী হতে হবে। নয়তো এসব বন্ধ করা সম্ভব নয়।
ঘটনাটি কেউ আমাকে লিখিতভাবে অভিযোগ করেনি, অভিযোগ হাতে পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।