BanshkhaliTimes

কোয়ারেন্টাইনের দিনে মনের যত্ন

BanshkhaliTimes
আফিফা মরিয়ম জয়া

কোয়ারেন্টাইনের দিনে মনের যত্ন
আফিফা মরিয়ম জয়া

সারা বিশ্বে এখন করোনা আতঙ্ক। মরণঘাতী এই ভাইরাস আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে। করোনার ছোবলে একের পর এক দেশ পরিণত হচ্ছে মৃত্যুপুরীতে।

চীন, ইরান, ইতালি, স্পেন, আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় সব ক’টা দেশে ভয়াল থাবা বসিয়েছে করোনা। সারা বিশ্বই এখন প্রাণপণ চেষ্টা করছে করোনা মোকাবেলার। রোগের প্রাদুর্ভাব কমানোর তাগিদে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল ‘বাধ্যতামূলক অবরুদ্ধ’ ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, হাঁচি-কাশি শিষ্টাচার মেনে চলা এবং বারবার সঠিক নিয়মে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। যেহেতু এই অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করতে এখন আমাদের প্রত্যেকেরই ঘরে থাকতে হচ্ছে, এমন অবস্থায় আমাদের মধ্যে নানা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে এবং হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। এমন একটি পরিস্থিতিতে নিজের এবং পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য আমাদের মানসিক শক্তি ও সুস্থতার প্রতি লক্ষ্য রাখাটা জরুরি।

আমরা সবাই এখন খুব কঠিন একটি সময় পার করছি। আশা করি খুব দ্রুত সব আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এই ভয়াবহতা থাকবে না। আমাদের মনে সাহস ও শক্তি নিয়ে এ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। আমরা প্রায় সকলেই নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন। কিন্তু বেশির ভাগ সময় আমরা ভুলে যাই যে স্বাস্থ্য মানে কেবল শরীর নয়, মনও স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ভুলের কারণে মনের যত্ন নিই না, মনের সমস্যাগুলো সহজে চিহ্নিত করতে পারি না। আবার সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রকাশ করতে চাই না যে মনের রোগ হয়েছে। বিষয়টি চেপে রেখে সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শরীরের পাশাপাশি মনের যত্নের কথাও বলে আসছে। মানসিক স্বাস্থ্য অর্থ কিন্তু কেবল মানসিক রোগ নয়। শরীরে কোনো রোগ না থাকলেও শারীরিক সুস্থতার জন্য যেমন প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করতে হয়, গোসল করতে হয়, সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য আর অভ্যাস থেকে দূরে থাকতে হয়। তেমনি মনের সুস্থতার জন্য নিয়মিত মনের যত্ন নিতে হয়। নয়তো মন ভালো থাকবে না আর মন ভালো না থাকলে সার্বিকভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব হবে না। মন আর শরীর পরস্পরের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত, তাই মনের সমস্যা হলে শরীরের ওপর এর প্রভাব পড়ে আবার শরীর খারাপ হলেও মন খারাপ হয়।

মনের যত্নে করণীয়:

♦দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো এবং ইতিবাচক চিন্তা করা

সবার আগে সচেতনতা তৈরি করতে হবে যে ‘মন’ স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শরীরের পাশাপাশি মনের যত্নও নিতে হবে। যেকোন পরিস্থিতিতে নিজেকে অটোসাজেশন দিতে হবে যে ‘আমি ভালো আছি এবং সব কিছু ভালো হবে’- এটাই ইতিবাচক চিন্তা।

♦ পর্যাপ্ত ঘুম

সময় মতো ঘুমাতে হবে। কারও ঘুম বেশি আবার কারও কম। জরুরি হচ্ছে রাতের বেলা ঘুমাতে হবে আর দিনে কাজ করতে হবে। যদি এর উল্টোটা হয়ে যায়, তবে মস্তিষ্কের ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ এলোমেলো হয়ে যায় আর মনের পরিবর্তন ঘটে, মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। কোনো যুক্তি দিয়েই ‘রাতে জাগা’ আর ‘দিনে ঘুমানো’কে সমর্থন করা যাবে না, তাই ঘুমের জন্য বেছে নিতে হবে রাতকেই।

♦ সঠিক খাদ্যাভ্যাস

সুষম খাদ্য আর পানি পান করতে হবে। সময়মতো খেতে হবে। অনিয়ম করে খাওয়া শরীরে মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোনের নিঃসরণ বাড়াবে, যা মনের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে। যেহেতু করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে সেহেতু পুষ্টিকর খাদ্য, ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল ও পর্যাপ্ত পানীয় গ্রহণ করা এই সময়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

♦ ক্ষতিকর বিষয় আর অভ্যাস পরিত্যাগ

পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ, ধূমপান , অহেতুক হিংসা-কুটিলতা, অন্যায্য শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, পেশাজীবনে অনৈতিকতার চর্চা ইত্যাদি নিজের ও আশেপাশের মানুষের মনের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে, যা মনের পরিচর্যার অন্তরায়। এ বিষয়গুলোকে অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

♦পাঠাভ্যাস

পাঠ্যবই বা প্রয়োজনীয় কাজের বাইরে প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়তে হবে। বাড়িতে একটি ছোট পারিবারিক পাঠাগার এই পড়ার অভ্যাস তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। এর পাশাপাশি নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা, সংগীত, ছবি আঁকা ইত্যাদি মনের অন্যতম খোরাক। এসবের মাধ্যমে মনের পরিচর্যা আরও সুসংহত হবে। এছাড়া হাসিখুশি থাকা মনের যত্নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

♦ ঘরোয়া খেলা ও কাজ

বাচ্চাদের যেহেতু এখন স্কুল বন্ধ, তাই তাদের সময় দেয়া জরুরি। বিভিন্ন ঘরোয়া খেলা যেমন: লুডু, দাবা ইত্যাদি খেলে সময় কাটিয়ে মন উৎফুল্ল রাখার চেষ্টা করুন ও ঘরের কাজে সম্পৃক্ত করে তাদের এবং নিজেদের মন ভালো রাখুন। এতে করে পরবর্তীতে সমাজের তৈরি কাজ সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা ও বৈষম্যও দূর হবে।

প্রাত্যহিক কাজ কিংবা অবসরে মানসিক প্রশান্তিদায়ক কাজ ও চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখায় হবে এসময়ের দারুণ থেরাপি।

ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন।

লেখক:
স্নাতক
মনোবিজ্ঞান
মনোবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম কলেজ

ইন্টার্নশিপ
শিশু বিকাশ কেন্দ্র
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হসপিটাল মেডিকেল কলেজ

স্নাতকোত্তর
স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথলজি
যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *