কদর হারিয়ে ব্যাকুল ‘জলকদর’
মিনহাজুর রহমান সিকদার
শুধু গ্রামগঞ্জে নয়, একসময় সমগ্র বাঙ্গালির খাওয়া হতে সকল ব্যবহার্য পানির উৎস ছিল নদী, ডোবা, খাল ইত্যাদি।পরিশ্রান্ত পথিক হতে সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তমনে খালের পাড়ে নেমে দুহাতে পানি তোলে খেয়ে নিতে দ্বিধা করতোনা।মুখে পানি ছিটিয়ে সারি সারি গাছের দোলা হাওয়ায় বিশ্রাম নিত মানুষ। এ খাল শুধু পানির জন্যই নয়, অঞ্চলের ব্যবসা-বানিজ্য হতে শুরু করে দূর-দূরান্তে মানুষ যাতায়াতের কাজে প্রধান চরিত্রও ছিল। বড় বড় বোট, নৌকাগুলোর যাতায়াত ছিল স্বাভাবিক। নদী খাল কেন্দ্রীক গড়ে উঠতো বাজার। চুনতিবাজার, মোশাররফ আলীর বাজার, বশির আলী মিয়াজির বাজার হতে নানাবিদ বাজার। বিশাল প্রত্যেক বাজারের দুটো প্রান্ত থাকতো একটা পশ্চিমে অন্যটা পূর্বে। বিশাল অঞ্চলকেও পৃথক করে,”পূর্বাংশ, পশ্চিমাংশ “নাম দিয়েছে সে। চঞ্চল এসব বাজারের অনেক বাজার বর্তমানে মৃতপ্রায় বা বিলীন।বআমরা যারা বর্তমান প্রজন্মের তারাও এসবের অনেকাংশ দেখেছি।
জমজমাট বাজার ছিল কিন্তু ছোটবেলার এসব স্মৃতি বাস্তবতায় আজ বিলীন। নেই বাজারে তেমন চঞ্চলতা, বাজারে নেই মাছের সেই সমাগম কিংবা তরিতরকারি। আজ যা চোখে পড়ে তাতেও এ খালকে ফেলনা ভাবার কিছু নেই তবে তা নেহাতই ক্ষুদ্র। আধুনিকতার ছোঁয়াতেও মানুষ কি তারে ভুলতে পেরেছে! হয়তো ভুলতে পেরেছে বলেই প্রয়োজনে যত্রতত্রভাবে তারে ভরাট করে ঘরবাড়ি উঠাচ্ছে নইতো ভালবেসে কেন তারে কেউ সংস্কার করেনা। ছোট নৌকাতে এক যুগল জেলে যেমন মাছ ধরার জাল বসিয়ে মাছ ধরে, লুইজালের পলক উঠিয়েও রমেশ জেলে পেকেট ভরে মাছ পুরে। এ জালে ধরা পরা মাছ বিক্রি করে বা খেয়েই হয়তো তারা ভালবাসার রোমান্স বাড়ায় ঘরে-বাইরে।
আমাদের দেখেই জেলেনি যেমন ঘোমটা ফেলে লজ্জাবতী গ্রাম্য বেশে লুকায় তলায় ঘোমটা ঘরে, সে দৃশ্যগুলো হয়তো নিশ্চতভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বঞ্চিত হবে। মানুষ এতো মডার্ন হচ্ছে, কখন না জানি বলে ফেলে “আমি গ্রামের নই”।এধরণের পরিস্থিতি ভবিষ্যতে হলে এর দায় কি আমার আপনার প্রশাসনের উপর বর্তাবেনা? ভরপুর সে যৌবন আজ নেই তার, তবে তাতে গচ্ছাটা আমাদেরইতো, একবার সুক্ষ্ম স্বচ্ছমনে ভাবুন। বিকল্প তার পায় বলে তবে তার ঋণ কেন ভুলব?
ভরাট হয়ে হয়ে সে এতোই সরু হয়েছে যে, কখন জানি পটল তোলে। বর্তমানে কোন বড় বোট চলাফেরা করতে পারবে সে অবস্থানে সে নেই। মানুষ মডার্ন হচ্ছে শহরমুখী হচ্ছে কিন্তু গ্রামের উন্নয়ন তেমন হচ্ছে কই। গ্রাম শুধু রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করে উন্নত করা যাবেনা। গ্রামকে উন্নত করতে হলে তার স্বভাবজাত সব বৈশিষ্ট্যকে ঠিক রেখেই করতে হবে। এ স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যের উপাদানগুলোর অন্যতম হলো এই খাল,বিল, নদী, সমুদ্র। প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়নই গ্রামের উন্নয়ন হতে হবে। পরিবেশ ক্ষতি করে কোন উন্নয়ন হলে তার প্রভাব সুদূরে অবশ্যই প্রজন্ম হতে প্রজান্মান্তরে বইতে হইবে।
জলকদরকে দেখে শুধু এই বলতে ইচ্ছে করে-
‘নয়নে মননে কাঁদি শুধু তোরে বাসি-ভালো বলে,
করিবো তবে অভিযোগ জনগণে
এ যে দশা তোর প্রাপ্য নয় জলকদর
এ যে দশা তোর প্রাপ্য নয়
যেদিনই মরিবি তবে কি তোর কদরে পালিশ পড়িবে!
কখন স্বনামের বড়াইয়ে আবার বলবি-
আমিই জলকদর।’