আন্তর্জাতিক ডেস্ক :নিরীহ বেসামরিক রোহিঙ্গারা জীবন নিয়ে পালানোর সময় তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
বিশেষ করে নারী ও শিশুসহ ভয়াবহ সহিংসতা থেকে বাঁচতে যারা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে, তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী।
শনিবার বার্তাসংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদক বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্ত পোস্ট থেকে জানান, রোহিঙ্গাদের ওপর কয়েক ডজন মর্টার শেল ও অগণিত গুলি ছুঁড়তে দেখেন তিনি। এ সময় পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা প্রাণপণ চেষ্টায় বাংলাদেশের সীমান্ত টপকানোর চেষ্টা করছিল।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়েছে কিনা, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে রোহিঙ্গারা এলোপাতাড়ি ও বিক্ষিপ্তভাবে ছুটতে থাকে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) স্টেশন প্রধান মঞ্জুরুল হাসান খান নিশ্চিত করেছেন, ‘তারা বেসামরিক লোকজনের (রোহিঙ্গা) ওপর গুলি চালিয়েছে, যাদের অধিকাংশ ছিল নারী ও শিশু, যারা জিরো লাইনের পাহাড়ি এলাকায় লুকিয়ে ছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘বেসামরিক লোকজনকে (রোহিঙ্গা) লক্ষ্য করে তারা হঠাৎ করে মেশিন গান থেকে গুলি চালিয়েছে এবং মর্টার শেল ছুঁড়েছে। তারা বিজিবি সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেনি।’
ইউরোপীয় রোহিঙ্গা কাউন্সিলের আনিতা স্কুগ সুইজারল্যান্ডের সলোথার্ন শহর থেকে জানিয়েছেন, তার সংস্থা এই প্রতিবেদন যাচাই করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এ বিষয়ের কয়েকটি ভিডিও আছে এবং এই খবর যদি সত্যি হয়, তাহলে আমরা ভিডিওগুলো শেয়ার করতে পারি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বার্মিজ সেনাবাহিনীর সঙ্গে ছুরি, চাপাতি, তরবারি ও বন্দুক নিয়ে চরমপন্থি বৌদ্ধরা নিরস্ত্র, নিরপরাধ বেসামরিক রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।’
রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টার সময় সীমান্তে আটকে পড়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। আলজাজিরা জানিয়েছে, শুক্রবার নিরাপত্তা বাহিনী ও রাখাইন বিদ্রোহীদের মধ্যে সহিংসতায় কমপক্ষে ৯২ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে মিয়ানমারের ১২ সেনা রয়েছে। এ সহিংসতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা মুসলিমরা দলে দলে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ রুখতে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। অনেকে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে কিন্তু কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
কক্সবাজারে অনিবন্ধীত একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ নুর টেলিফোনে বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, তিনি শুনেছেন বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্তে পৌঁছেছে। তবে নিরপেক্ষ সূত্র থেকে এ তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি এএফপি।