একুশে বইমেলায় এসেছে বাঁশখালীর যেসব কৃতি লেখকদের বই

তাফহীমুল ইসলাম (বাঁশখালী টাইমস): প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকায় শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা-২০১৮। বইমেলাকে উপলক্ষ করে দেশের খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিকরা বের করেছেন তাদের রচিত বই। সেই খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিকদের সাথে প্রকাশিত হয়েছে আমাদের জন্মভূমি বাঁশখালীর কয়েকজন কৃতি সন্তানের বই। যাদের মধ্যে কারো বই উপন্যাস, কারো বই কবিতা, কারো বই গল্পের। তাদের বই প্রকাশিত হওয়ার খবর আমাদের জন্য অনেক বেশি আনন্দের, খুশির। তাদের কষ্টের ফসল বইগুলো আমাদের কিনে পড়ে দেখা দরকার। কেননা- তাদের প্রায় সবার বইয়ে উঠে এসেছে আমাদের বাঁশখালীর সৌন্দর্যময় প্রাকৃতিক দৃর্শ্যের কথা। আসুন জেনে নিই- এবারের বইমেলায় বাঁশখালীর কোন কোন কৃতি সন্তানের কী কী বই প্রকাশিত হয়েছে তা এবং তা কোথায় পাওয়া যাচ্ছে।

জুবাইর জসীম: জন্ম বাঁশখালীর কালীপুরে। ছাত্রজীবন থেকে জড়িত আছেন লেখালেখির কাজে। প্রায় দুই দশক আগে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন শিক্ষকতাকে। এখনো সে পেশায় নিয়োজিত আছেন। তিনি চট্টগ্রাম একাডেমীর একজন সদস্য। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ শিশু সাহিত্য একাডেমী কর্তৃক লাভ করেছেন কিশোর কবিতা সম্মাননা। তাঁর লেখালেখির মাধ্যম শিশুসাহিত্য। দুই বছর পর পর বাজারে আসছে তাঁর লেখা কিশোর কবিতার বই। এইবারের বইমেলায় ঢাকার পঙ্খিরাজ প্রকাশনী থেকে এসেছে তাঁর দুটি বই। প্রতিবারে কিশোর কবিতার বই প্রকাশিত হলেও এইবারের মেলায় এসেছে পাঠকদের চমকে দেয়ার মতো কিশোর গল্পের বইও। বইগুলো যথাক্রমে- কিশোর কবিতার বই ‘আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন’ ও কিশোর গল্পের বই ‘রাজপুত্র’। বই দুটি পাওয়া যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলার ৫৬৪ নাম্বার স্টলে। একজন পাঠক হিসেবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস বইগুলো পাঠক মহলে সাড়া ফেলবে ব্যাপকভাবে। যেভাবে সাড়া ফেলেছে পূর্বে প্রকাশিত তাঁর লেখা কিশোর কবিতার বই ‘ফুল পরীদের হাট’ ‘চাঁদের মুখে ঈদের হাসি’ ঘুড়ি যাবে চাঁদের দেশে’।

আরকানুল ইসলাম: আরকানুল ইসলাম। জন্মেছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চেচুরিয়া গ্রামে। বাড়ির নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের সময় জড়িয়ে পড়েন লেখালেখির কাজে। লেখাপড়ার পাশাপাশি লেখালেখির চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করেন অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে। প্রথমে ছড়ার মাধ্যমে লেখালেখির যাত্রা হলেও পরে দখল করে নেন গল্পকার, ঔপন্যাসিকের পদবী। যার সর্বাধিক লেখা শিশু, কিশোর উপযোগী।

ইতিমধ্যে শিশুসাহিত্যিক হিসেবে সর্বমহলে লাভ করেছেন ব্যাপক পরিচিতি। লেখার শক্তিতে জড়ো করতে সক্ষম হয়েছেন বিশাল পাঠক বাহিনী। যার পাঠক বাহিনী বছরব্যাপী অপেক্ষায় থাকেন ছড়ার বইয়ের। লেখকও ছড়ার মাধ্যমে পাঠককূলকে রাখেন উজ্জীবিত। বছরব্যাপী ছড়া লিখে লেখক বই মেলাতে প্রকাশ করেন উপন্যাস। যেই দিকটি পাঠকদের অবাক করলেও আনন্দের ঘাটতি রাখে না। সারা বছর ছড়া পড়ে পাঠকরা অপেক্ষা করতে থাকে ফেব্রুয়ারি মাসের উপন্যাসের জন্য। উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে পাঠক মহলের পদভারে মুখরিত হয় লেখক অঙ্গন। লেখক নিমিষেই ভুলে যায় তার বই প্রকাশে সইতে হওয়া কষ্ট। পাঠকের ভালোবাসায় বেড়ে যায় কলমের শক্তি। লেখক অঙ্গীকার করে পাঠক মহলকে আরো ভালো কিছু উপহার দেয়ার। তাই পাঠকদের উচিত পাঠকদের স্বার্থে নেওয়া লেখকের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা, লেখকের বই কিনে নিয়ে লেখককে উৎসাহিত করা।

এইবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে আরকানুল ইসলামের চতুর্থ কিশোর উপন্যাস “ছোটমামার বড় বিপদ”। “ছোটমামার বড় বিপদ” নামটি পড়ে থমকে যাবে যে কেউ। আসলে থমকে যাওয়ার মতো। ছোটমামার বড় বিপদটা কি তা জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে বইটি। বইটি প্রকাশ করেছে দাঁড়িকমা প্রকাশনী। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ১৫০ টাকা। কমিশন বাদ দিয়ে ঘরে বসে পেতে চাইলে কুরিয়ার চার্জসহ প্রদান করতে হবে ১৩০ টাকা। তাছাড়া বইটি পাওয়া যাচ্ছে ঢাকার মাসব্যাপী একুশে বইমেলায় দাঁড়িকমা প্রকাশনীর ৬৬৬ নাম্বার স্টলে ও চট্টগ্রাম জামালখানে অবস্থিত প্রেস ক্লাবের নিচে বাতিঘরে।

শেখর দেব: জন্ম বাঁশখালীর শেখেরখীলে। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে কর্মরত আছেন।
শেখর দেব এক দশকের বেশি সময় ধরে কবিতা চর্চা করছেন। তাঁর কবিতায় বোধ ও প্রজ্ঞার শাণিত রূপায়ন পাঠককে প্রাণিত করে। মায়া ও বাস্তবতার মধ্যবর্তী স্বর ঋজুভাবে উচ্চারিত হয়েছে কবিতায়। সমাজের অসংগতি ও জীবনের হাসি-কান্না নিয়ে আড়াল ও ইঙ্গিতে বিধৃত কবিতাগুলো গভীর ও আলাদা দৃষ্টি দাবী রাখে। ধীর ও স্থির মনোভাষার সাথে মননের মিথস্ক্রিয়া কবিতাকে করেছে বহুরৈখিক, দিয়েছে নতুন মাত্রা। কবিতাগুলো পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে আশা করছি।
বইগুলো পাবেন একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৮ এ বাংলা একাডেমির লিটল ম্যাগ চত্বরে “শাঁখ” এর ২৫ নং স্টলে। এবার প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ “আরাধ্য আকাশবৃত্তি” পাবেন দাঁড়িকমা প্রকাশনীর ৬৬৬ স্টলে। আগ্রহী বন্ধুরা সংগ্রহ করতে পারেন।

প্রত্নচর্চার পাঠশালা(কবিতা, ২০১৪)
বাঞ্ছাকল্পতরু(কবিতা, ২০১৬)
কবিতার করিডোর(প্রবন্ধ, ২০১৭)
আরাধ্য আকাশবৃত্তি(কবিতা, ২০১৮)।

তান্নি চৌধুরী: তান্নি চৌধুরী জন্মেছেন বাঁশখালীর প্রথম ইউনিয়ন পুকুরিয়ায়। মেয়ে হলে যে কিছু করা যাবে না এমন কথার প্রতিবাদ কাজের মাধ্যমে করেছেন তান্নি চৌধুরী। লিখে যাচ্ছেন অনেক আগে থেকে। জড়ো করতে সক্ষম হয়েছেন পাঠকদের। এইবছর তান্নি চৌধুরীর ‘অক্ষরের মিছিল’ নামে একটা কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে ঢাকার ‘এক রঙা এক ঘুড়ি’ প্রকাশন থেকে। স্টল নম্বর- ৬৫৪। বইটি চট্টগ্রামের বইমেলাতেও পাওয়া যাবে।

রুদ্র সুশান্ত: বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে বাঁশখালীতে জন্ম। বেড়ে উঠা পৈত্রিক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। জলদী গ্রামে। কবিতা তার দ্বিতীয় জীবন। প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ, নির্মলেন্দু গুণ। প্রিয় মানুষ ‘বাবা’। শখ বই পড়া আর ভ্রমণ। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন।
এবছর তার ‘গণতান্ত্রিক বেদনা’ নামে একটা গল্পগ্রন্থ এসেছে দাঁড়িকমা প্রকাশনী থেকে।

তার প্রকাশিত বইসমূহ হলো-
কাব্যগ্রন্থ
১. বঙ্গদেশে স্বর্গবাস (একুশে বইমেলা’১৬ ইং)
২. চন্দ্রাবতীর সাতকাহন (একুশে বইমেলা’১৭ইং
ছড়াগ্রন্থ: হাড্ডু মামার ছড়া (সেপ্টেম্বর ২০১৬ইং)

জয়নাল আবেদীন: জয়নাল আবেদীনের বাড়ি বাঁশখালীর চাম্বলে। পেশায় তিনি একজন স্কুল শিক্ষক।

ছোটবেলা থেকেই কাব্যচর্চা করে আসছেন। তার বহু কবিতা ডায়েরিতে পড়ে আছে। মাঝখানে লেখালেখিতে দীর্ঘ বিরতি দিয়েছেন। আবার নতুন করে শুরু করেছেন। ডায়েরিতে পড়ে থাকা কবিতাগুলোকে মলাটবন্দী করতে হঠাৎ ইচ্ছে হল। যে ইচ্ছেটা লেখকমাত্রই লালন করেন। তেমনি ২০১৮ সালে তার লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিলেন।
এবছর তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ধূসর স্মৃতির পদচিহ্ন’ বের হলো দাঁড়িকমা প্রকাশনী থেকে। পাওয়া যাবে দাঁড়িকমা প্রকাশনীর ৬৬৬ নম্বর স্টলে।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *