ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সহযোগী অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন আজহারী।
সোমবার (১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা যায়।
সূত্র মতে, গত ৩০ জুলাই সদ্যবিদায়ী সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ারুল ওহাবের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়। পরে ৩১ জুলাই ড. নাছিরকে তার স্থলাভিষিক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী ৩ বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন।
নবনিযুক্ত সভাপতি ড. নাছির উদ্দীন আজহারী বলেন, ৩১ জুলাই ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ১ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। বিভাগের একাডেমিকসহ সকল ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। এ কাজে আমি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
উল্লেখ্য, ড. নাছির বিশ্ববিদ্যালয়ের জুরিস্টিক ক্লিনিকের সহযোগী পরিচালক ও ইন্টারন্যাশনাল আ্যফেয়ারস সেল-এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের শরীয়াহ সুপাভাইজারি বোর্ডের অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা অসংখ্য গুণীজনের পদচারণায় মুখরিত। এই মাটিতে জন্মগ্রহণ করে নিজ নিজ পরিমণ্ডলে আলোকিত করেছেন নিজেদের জীবন, একই সাথে বাঁশখালীর সুনাম ছড়িয়ে দিয়েছেন দিগ্বিদিক। ড. মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন আজহারী তাঁদের মধ্যে একজন। তাঁর পিতা হাজী মনির আহমদ সওদাগর। জন্ম চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার দক্ষিণ জলদী গ্রামে। বর্তমানে তিনি দেশের স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), কুষ্টিয়ার আইন অনুষদভুক্ত আল-ফিকহ্ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক হিসেবে সর্বজনবিদিত তিনি। অত্যন্ত সুনামের সাথে তিনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করে যাচ্ছেন। পাঠদানের পাশাপাশি তিনি বিভাগের সার্বিক উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশ ও সুন্দর ক্যারিয়ার গঠনের রূপরেখা তৈরী এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করে তিনি বাঁশখালীর সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। দেশ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করাই তার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
তিনি ছাত্র জীবনের শুরু থেকে প্রতিটি স্তরেই কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রথম শ্রেণীতে দাখিল (এস.এস.সি.) ও আলিম (এইচ.এস.সি.) পাশ করেন। পাশাপাশি ‘আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া’ থেকে প্রথম শ্রেণীতে দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন। অতঃপর তিনি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় মিশরস্থ আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপসহ পড়াশোনার গৌরব অর্জন করেন। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়াহ ও আইন অনুষদ থেকে প্রথম শ্রেণীতে বি.এ. (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি স্নাতকোত্তর শিক্ষার জন্য মিশর সরকারের ‘মিশর-বাংলাদেশ কালচারাল এক্সেইঞ্জ স্কলারশিপ’ অর্জন করে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক আইনশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণী অর্জন করে মাস্টার্স ও এম.ফিল. ডিগ্রি লাভ করেন। তার এম.ফিল. অভিসন্দর্ভে গবেষণার বিষয় ছিল ‘হানাফি মাজহাবে আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (র.)- এর অবদান’। পরে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর পি.এইচ.ডি. অভিসন্দর্ভে গবেষণার বিষয় ছিল : ‘Rules of Shariah Regarding Online Contract : A Comparative Fiqh Study (অনলাইন চুক্তির শর’য়ী বিধান : একটি তুলনামূলক ফিকহ অধ্যয়ন)।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ায় যোগদানের মাধ্যমে তাঁর শিক্ষকতা জীবনের সূচনা হয়। তিনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদভুক্ত আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে ২০১২ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। একই বিভাগে ২০১৫ সালে সহকারী অধ্যাপক ও ২০১৮ সালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক ও প্রশাসনিক পদে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
তিনি ২০১৪ সালে সাদ্দাম হোসেন হলের হাউস টিউটর ও ২০১৮ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর পদে নিযুক্ত হন। সহকারী প্রক্টর থাকাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফিকহ, উসূলে ফিকহ, তুলনামূলক ফিকহ, ইসলামী অর্থনীতি, মাকাসিদুশ-শারী’য়াহ, হালাল ফুড, অন-লাইন লেনদেন ও সমসাময়িক নানা বিষয়ে তাঁর বহু গবেষণা প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অর্থায়নে একাধিক গবেষণা প্রজেক্ট লাভ করেন। বাংলা, আরবী, ইংরেজি এবং উর্দ্দু ভাষায় উপর বিশেষ পারদর্শী হওয়ায় মিশর, সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া এবং ব্রুনাইসহ বেশ কিছু রাষ্ট্রে ভ্রমণ করেছেন। এছাড়াও ইন্ডিয়া, মিশর ও ব্রুনেইসহ বেশ কিছু রাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপন ও অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। সর্বশেষ ২৮-২৯ জানুয়ারী ২০১৯ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুল ফাউন্ডেশন ফর সাইন্স এন্ড কালচার এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স পরিচালনা ও প্রবন্ধ উপস্থাপনা করে তিনি অত্যন্ত সুনাম অর্জন করেন।
মিশরে অধ্যয়নকালে তিনি ২০০৯-২০১০ সালে আজহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি এবং একই সময়ে মিশরস্থ বাংলাদেশ ছাত্র কল্যাণ সমিতির প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাত্র কল্যাণ সমিতি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান উপদেষ্টা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বৃহত্তর চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছেন।