ইরানের বিপ্লব দিবস || আহমদুল ইসলাম চৌধুরী
আজ ইরানের বিপ্লব দিবস। ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে দেশটিতে ইসলামী বিপ্লব সম্পন্ন হয়। এর মধ্য দিয়ে সেখানে পাহলভী রাজবংশের শাসনের অবসান হয়। ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসাবে ইরান আত্মপ্রকাশ করে। বিপ্লবের পর তাদের শাসনতন্ত্রের পরিবর্তন হয়। এ শাসনতন্ত্রমতে, ইমাম খোমেনী ইরানের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও ক্ষমতার অধিকারী। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
তিনি দেশ পরিচালনা এবং বিদেশের সঙ্গে দেশের প্রতিধিনিত্ব করেন। কিন্তু তার মর্যাদা ও ক্ষমতা ইমামের পরে। ইরানে রয়েছে ইসলামী গার্ড। যদিও দেশটিতে পূর্ণাঙ্গ তিন বাহিনী রয়েছে; যেমন-সামরিক বাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী; তারপরও ইসলামী গার্ডের সম্মান, মর্যাদা ও ক্ষমতা আলাদা।
বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী ইমাম রুহুল্লাহ খোমেনী ১৯৮৯ সালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষিক্ত হন বর্তমান ইমাম হোসেন আলী খামেইনী। রাজতন্ত্রীয় শাহের আমলে ইরানিরা পশ্চিমা স্টাইলের বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের পর ইরান শতভাগ পাল্টে যায়। বলা যায়, সেখান থেকে মানুষের অতি বিলাসী জীবনযাপন বিদায় নেয়। ইরানে এখন নারীরা পুরুষের সমান্তরালে উচ্চশিক্ষা লাভ করছে। তারা প্রায় সব ক্ষেত্রে কর্মতৎপর। তাদের শালীনতা মুসলিম বিশ্বে অনুকরণীয়।
আয়তনে বিশাল দেশ ইরানের জনসংখ্যা ৭ কোটি। টাকা রোজগারের জন্য তাদের বিদেশে যেতে হয় না, আবার দেশে কাজ করার জন্য বাইরে থেকেও লোক আনতে হয় না। তাদের দেশে খাদ্দামা প্রথা নেই বললেই চলে। ঘরের কাজ তারা নিজেরাই করে। নারীরা যেমন কর্মক্ষেত্রে তৎপর, তেমনি সচ্ছল। পরিবারে রয়েছে তাদের নিজস্ব গাড়ি।
আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব ইরানকে কাবু করার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। এতে তারা কতটুকু কৃতকার্য হচ্ছে ভাবতে হবে। ইরানের জনগণ সৎ, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক, কর্মঠ বিধায় দেশ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। ইরান অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা চলে। তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যই ব্যবহার করে; যেমন- মোটরগাড়ি, জিপ, বাস, ট্রাক, রেল, রেলের ইঞ্জিন, জাহাজ, যুদ্ধজাহাজ, ছোট ছোট বিমান, যুদ্ধবিমান ইত্যাদি। এর অনেক কিছু বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। অর্থাৎ বড় বিমান নির্মাণ বাদে অন্য প্রায় সবকিছুতে ইরান নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে বলা চলে।
ইরানে বিভিন্ন ধরনের বাদাম, কিশমিশ, খেজুরসহ নানা খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন হয়। কিছু ইরানি খাদ্যদ্রব্য আমাদের দেশেও আমদানি করা হয়। ইরানের জাফরান বিশ্ব বিখ্যাত। তাদের খাবার স্বাস্থ্যসম্মত। উজবেকিস্তান, ইরান, তুরস্ক-এসব দেশের মানুষ অতি মসলামিশ্রিত খাবার খায় না। তারা সালাদ খায় বেশি। খাবারের সময় দুধ, চিনিবিহীন চা খেতে পছন্দ করে। ইরানে গ্রীষ্মকালে অতি গরম, আবার শীতকালে কোনো কোনো জায়গায় বরফ পড়ে। ইরানের ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। তবে অভ্যন্তরীণ বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা ততটা উন্নত নয়, যেহেতু তারা উন্নত বিশ্বের মতো বড় বিমান তৈরিতে অক্ষম। অবশ্য উন্নত দেশের সহযোগিতায় ইরানও কিছু বড় বিমান নির্মাণ করে থাকে।
ইরান গোপনে পরমাণু বোমা তৈরি করে থাকুক বা না থাকুক, দেশটি যেভাবে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে তাতে পশ্চিমারা তেহরানের সঙ্গে সহাবস্থানে থাকাটাকেই কল্যাণকর মনে করছে। সে লক্ষ্যে ইরানের সঙ্গে চুক্তিও করেছে। ইরান প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, তাদের দেশ আক্রান্ত হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসরাইলকে মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া হবে। এতে বিশ্ব বুঝতে পারছে, ইরান শক্তির দিক থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে।
পরিশেষে বিপ্লব বার্ষিকীতে ইরানের কল্যাণ কামনা করছি।
আহমদুল ইসলাম চৌধুরী : গবেষক ও লেখক