BanshkhaliTimes

ইতালিতে আজ কেন এত দুর্দশা

BanshkhaliTimes
রায়হান আজাদ

খৃষ্টবাদের উর্বরভূমি ইটালি আজ টালমাটাল। করোনার আগুন ধিকি ধিকি জ্বলছে। ইটালির রাজধানী রোম কিন্তু প্রাচীন রোমান সভ্যতার পাদপীঠ। এ রোম নিয়েই আল কুরআনে সুরাতুর রুম রয়েছে। উক্ত সূরা রুমেই রয়েছে তাদের এ করুণ পরিণতির কারণ ও প্রতিকার। কিন্তু তারা তো দেখেও দেখে না, তাদের হৃদয়ে জং ধরেছে। বর্তমানে ইটালি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম সারির উন্নত রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক ভিত্তি অনেক শক্তিশালী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ইটালির শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার্য। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা অনেক মজবুত। রাজনৈতিক অঙ্গীকার আন্তরিকতাপূর্ণ। রিজার্ভ ফান্ডে রয়েছে প্রাচুর্য। এরপরও কেন আজ ইটালি মরণাপন্ন। বিষয়টি আজ একটু তলিয়ে দেখা প্রয়োজন মনে করছি। আপনারা ইতিমধ্যে মিডিয়ার বদৌলতে জানতে পেরেছেন করোনা সংক্রমণের ফলে ইটালির অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। খোদ ইটালিতে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের অধিক লোক মারা গেছে এবং আরো লক্ষাধিক বনি আদম মৃত্যুর মিছিলে হাঁটছে। পুরো দেশ লকডাউনে রয়েছে। সম্প্রতি ইটালির প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে মারা গেছি, আমাদের জমিনের সকল প্রচেষ্টা শেষ হয়ে গেছে, এখন আকাশের পক্ষ হতে এর সমাধান দেয়া ছাড়া আর উপায় নেই।

ইটালি আজ কেন এহেন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলো সে কারণ বর্ণনার আগে আমি আপনাদের কাছে আমার একটি গবেষণা সম্পর্কে অবতারণা করতে চাই। কুরআন-সুন্নাহ আর ইতিহাস পর্যালোচনা করে বলা যায়, এ পৃথিবীতে এমন কতিপয় অপরাধ রয়েছে যার প্রকৃত শাস্তি পরকালে জমা থাকলেও দুনিয়াতে তার কিয়দংশ ভোগ করতে হয় আর এমন অপরাধের মধ্যে রয়েছে ১. আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ তথা সারা দুনিয়ার মসজিদগুলোর অমর্যাদাকরণ। ২. কুরআনুল কারীমের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন। ৩. মহানবীর শান ও মান নিয়ে মশকরায় লিপ্ত হওয়া। ৪. মাতাপিতার সাথে বেআদবি আর ৫. অহংকার করা। এ পাঁচটি পাপের প্রায়শ্চিত্ত পরকাল ছাড়াও এ দুনিয়াতেও পেতে হবে। এ পাপ ব্যক্তিগতভাবে কিংবা জাতীয়ভাবে সংগঠিত হোক এর শাস্তি এড়াবার কোন সুযোগ নেই।

আল্লাহ রব্বুল আলামীন আল কুরআনে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে অসংখ্যবার বলেছেন, তিনি ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। এ পৃথিবীতে এমন কোন কর্মকান্ড নেই যার কোন পরিণতি নেই। নিউটনের ৩য় সূত্র তো স্বত:সিদ্ধ। জালিমদের বাড়াবাড়ি সম্পর্কে আল্লাহ পাক কখনো অনবগত নন মর্মে আল কুরআনে একাধিকবার উল্লেখ করেছেন। ইটালি চরম বাড়াবাড়ি করেছে আল্লাহর পেয়ারা হাবীব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আজীম শান ও আজমত নিয়ে। ইটালির বোলোগনায় একটি ক্যাথলিক গির্জার ভেতর মহানবীর ৬১১ বছরের পুরাতন একটি ব্যঙ্গচিত্র সংরক্ষিত আছে। যে ব্যঙ্গচিত্রে দেখানো হয়েছে মহানবীকে নরকের রক্ষীরা নির্যাতন করছে। গির্জাটির নাম ‘San Petronio Basilica’ এবং ব্যঙ্গচিত্রটির শিল্পীর নাম ‘Giovanni da Modena’। এটি যুগ যুগ ধরে গির্জায় ঝুলিয়ে রেখে তারা মহানবীর মর্যাদার চরম অবমাননা করেছে এবং মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত দিয়ে চলেছে। এটি সরানো এবং এ বিদ্বেষ থেকে বেরিয়ে আসার দাবি জানানোয় ২০০২ সালে তারা ৫ জন মুসলমানকে গ্রেফতার করে অপবাদ দিয়ে জেলে পুরেছে। ইটালির মুসোলিনী সরকার এখন থেকে ৮৯ বছর আগে তথা ১৯৩১ সালে লিবিয়ার মরুসিংহ খ্যাত দেশপ্রেমিক মুজাহিদ আজম উমার মুখতারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। ইটালিতে অশ্লীলতা ও মাদকতার এত ছড়াছড়ি যে খোদ ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রেও এরূপ জঘন্য চিত্র দেখা যায় না। মহানবীর ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, ‘যে জমিনে জুলম, শিরক, ব্যভিচার আর মাদকতার ছড়াছড়ি হবে সেখানে খোদায়ী গজব নেমে আসবে’। ইটালির ক্ষেত্রে আজ তাই দেখা যায়।

চায়না উইঘুর মুসলমানদের নির্মম নির্যাতনের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে তদুপরি আল কুরআন বদলে ফেলতে অপপ্রয়াসে মেতে উঠে তাই আল্লাহ পাক তাদেরকে দুনিয়াতে শাস্তি দিয়ে সমুচিত জবাব দিয়েছেন। একইভাবে স্পেনের ইতিহাস মুসলমানদের সাথে প্রতারণা আর জুলমের ইতিহাস। তারাও মহানবীর বিকৃত কার্টূন ছেপে চরম বাড়াবাড়ি করেছে। ইরান আল কুরআনের সঠিক মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা মহানবীর হাদীস ও ছাহাবীদের নিয়ে উগ্রতা দেখিয়েছে। খোলাফায়ে রাশেদার তিন খলীফার প্রতি তাদের বেআদবি ক্ষমার অযোগ্য। তাই আল্লাহ পাক চায়নার পর ইটালি, স্পেন ও ইরানে করোনার মতো এরূপ মারাত্মক মহামারির প্রকোপ ছড়িয়ে দিয়েছেন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও আজ নিরাপদ নয়। কারণ আমাদের দেশেও খোদায়ী আজাব আসার যথেষ্ট কারণ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশে ইসলামপন্থীদের উপর জুলম বেড়ে গেছে, আল কুরআন ও মহানবীর অবমাননা হয়েছে অসংখ্যবার। সবচে বড় কথা হলো, আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি না। অথচ অন্যায় সয়ে যাওয়া অন্যায়কারীর সমতুল্য অপরাধ বিবেচিত হয়। এসব খামখেয়াল মানুষদের সম্পর্কে বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/ তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে’।

তাই আসুন, আল্লাহর কাছে তাওবা-ইসতেগফার করি আর নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে উপরে উল্লেখিত পাঁচটি অপরাধ সংঘটন হতে নিজকে এবং অপরকে বিরত রাখি । আল্লাহ পাক আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন।

লেখক: সহকারি অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কক্সবাজার

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *