আলোকিত মানুষ মাস্টার জমির আহমদ
-মুহাম্মদ তাফহীমুল ইসলাম
মাস্টার জমির আহমদ বাঁশখালী উপজেলার ( Banshkhali Upozilla ) বৈলছড়ী ( Boilchori ) ইউনিয়নের চেচুরিয়া (Checuhria) গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪২ সালের ২২ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- মরহুম হাফেজ বশির আহমদ, মাতা- ছৈয়দা খাতুন। মাস্টার জমির আহমদ চেচুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ( Chechuria Government Primary School) ও বৈলছড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (Boilchori Primary School) থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ শেষে বৈলছড়ী নজমুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে ( Boilchori Najmunnesa High School ) ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৫৮ সালে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৬০ সালে বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ ( Banshkhali Degree College ) থেকে পাশ করেন এইচএসসি। এরপর ১৯৬১ সালে কালিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ( Kalipur Government Primary School ) শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। সেখানে দীর্ঘকাল শিক্ষকতার পর আবার যোগ দেন বাড়ির নিকটস্থ বৈলছড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ( Boilchori Government Primary School ) । ১৯৯৯ সালে বৈলছড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসরের মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশা থেকে অব্যাহতি নেন মাস্টার জমির আহমদ। শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরের পর তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। ২০০১ সালে মাস্টার জমির আহমদ পবিত্র হজ্জ্বব্রত পালন করেন।
মাস্টার জমির আহমদ অবসরকালীন সময়ে ব্যস্ত থাকতেন ধর্মীয় কাজ ও লেখাপড়ায়। মানুষকে দাওয়াত দিতেন ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার। তিনি নিজেও ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি ছিলেন সজাগ। সময় পেলে বসে পড়তেন বই নিয়ে। অধ্যায়ন করতেন অজানা বিষয়ে। আহরণকৃত জ্ঞান বিলিয়ে দিতেন অন্যান্যদের মাঝে। মাস্টার জমির আহমদ স্বপ্ন দেখতেন ইসলামী অনুশাসন ভিত্তিক একটি সমাজের। যেই সমাজে থাকবে না মানুষে মানুষে ভেদাভেদ। সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য মাস্টার জমির আহমদ বাড়িয়ে দিতেন সাহায্যের হাত। তিনি বাঁশখালী হামেদিয়া রহিমা ফাযিল মাদরাসা ( Banshkhali Hamidia Rohimia Fajil Madrash ), বৈলছড়ী নজমুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের ( Boilchori Najmunnesa High School ) গভর্ণিং বডির সদস্য ছিলেন। এছাড়াও বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পিছনে মাস্টার জমির আহমদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
০২.০৯.২০১৭। জিলহজ্জ্ব মাসের দশম দিন অর্থাৎ পবিত্র ঈদুল আজহার দিন। ফজর নামাজ আদায়ের পর সবার সাথে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজও আদায় করেন মাস্টার জমির আহমদ। এরপর কুরবানি শেষে জোহর, আসর, মাগরিবের নামাজও জামায়াতের সহিত আদায় করেন। সামান্য অসুস্থতা অনুভব করায় হাজির হতে পারেননি এশার নামাজের জামায়াতে। ভালো লাগছে না বলতে বলতে রাত সাড়ে দশটার সময় সাড়া দেন মহান আল্লাহর ডাকে- ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছাঁয়া। পরেরদিন বাদে আসর বাঁশখালী হামেদিয়া রহিমা ফাযিল মাদরাসার ( Banshkhali Hamidia Rohimia Fajil Madrash ) মাঠে অসংখ্যা মানুষের উপস্থিতিতে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাঁকে। মাস্টার জমির আহমদ দীর্ঘ তিনটি বছর শায়িত আছেন সেই কবরে। বহু বিশেষণের অধিকারী এই মানুষের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আল্লাহর দরবারে মোনাজাত- তিনি যেন মাস্টার জমির আহমদের ভালো কাজগুলোকে কবুল করে জান্নাতুল ফিরদাউসে আসীন করেন- আমিন।
লেখক: তরুণ সাংবাদিক