আরমানউজ্জামানের গল্প || একাত্মতার স্বপ্ন

একাত্মতার স্বপ্ন

আরমানউজ্জামান

শরতের আকাশে মেঘগুলো বালিকার স্বপ্নের মতো লাগামহীনভাবে ঘুরছে। পড়ন্ত বিকেলে ছাদে বসে উদাস ভঙ্গিতে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে খারাপ লাগছে না চৈতির। কী বিস্তীর্ণ আকাশ! মেঘেরা দল বেঁধে ছুটে চলছে অজানা গন্তব্যে। হঠাৎ চোখ পড়তেই দেখল গত দিনের আধো ফোঁটা গোলাপটি পাঁপড়ি মেলেছে মেঘ দেখে নেচে উঠা ময়ূরীর মতো! বিকেলের ক্লান্ত সূর্যের সোনালী আভা তাতে যোগ করেছে বধুয়ার ঘোমটা জড়ানো লাজুক আদল! চৈতি ফুলের পাশে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে গভীর নিঃশ্বাস নিল অতঃপর মুঠো ফোনের বাটন চেপে হেড ফোন কানে লাগিয়ে দিল অমিতের কণ্ঠের অপেক্ষায়! অপরিচিত নাম্বার দেখে কলটি কেটে দিল অমিত। আবার বেজে উঠল অমিতের ফোন! খানিকটা বিরক্তি নিয়েই কল রিসিভ করল অমিত।
-হ্যালো কে বলছেন?
-খানিকটা বিষন্ন হাসি দিয়ে চৈতি বলল, ‘ফুর্তির বাপ’ আমি চৈতি! কণ্ঠ চিনতে পারনি!
-ও ‘ফুর্তির মা’ কেমন আছ বলো!
-না আমি মোটেও ‘ফুর্তির মা’ নই!
-অমিত হেসে বলল, আমি ‘ফুর্তির বাপ’ হলে তুমি কী শুনি!
-চৈতি ম্লান হেসে বলল, বড় জোড় ‘বিষাদের আম্মু’ বলতে পার!
-অমিত হেসে বলল, যাহ! আম্মু শুনতে কেমন বুড়ো বুড়ো লাগে! সে যা হোক এটা কার নাম্বার! তোমার নাম্বার কী হয়েছে!
-এখন থেকে এই নম্বারেই আমাকে পাবে! আগের নাম্বারটি আম্মুর কাছে, ভুলেও কল কর না!
-বেশ তো করব না, কেন ফোন করেছ বল?
-তুমি বাবা হতে যাচ্ছ!
-কী যা তা বলছ?
-মনে হয় আকাশ থেকে পড়লে! দিনের পর দিন আমার মূল্যবান সময় আর অস্তিত্বকে নিজের করে নিয়েছে! আর এখন এই সংবাদটিকে যা তা মনে হলো!
-কী আশ্চর্য্য তুমি এখনও এসব নিয়ে ভাবছ! আমাদের সম্পর্কের কথা বাদ দিলেও আমরা ভালো বন্ধু তাইনা! তাছাড়া এখনও তুমি মা হবার মতো যথেষ্ঠ নও! আর চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন অনেক উন্নত। এসব নিয়ে ভেবনা ডিয়ার! আরেকটি বিষয় তো তুমি খুব ভালো করেই জানো তোমার বাবা-মা আমাকে তাদের জামাই হিসাবে মেনে নিবেন না।
-সম্পর্কের কথা বাদ দিলেও আমরা ভালো বন্ধু! বাহ দারুণ বলেছ অমিত! বন্ধুত্ব বুঝি সম্পর্ক নয় তাইনা। ফান করনা প্লিজ! আমার খুব অসহ্যবোধ হচ্ছে; তোমার আজব সব পাগলামিতে আমাকে না জড়ালেই পারতে!
-তুমি তো আর এতোটা বোকা নও। শুরুতেই যেহেতু বিষয়টি বুঝতে পারছ, চল আমরা খুব সহজ একটা সমাধান করে ফেলি।
– সত্যি বলছ ‘ফুর্তির বাপ’! আমাদের ফুর্তি বাঁচবে! আমরা কি বিয়ে করছি!
– আহ বিয়ে করার সময় এখনো হয়নি, সে বিষয়ে আমরা পরে ভাবব!

ফোন রাখতেই আবার চোখ ভিজে যায় চৈতির। বুকের ভিতরের লালিত স্বপ্নগুলো কাঁচ-ভাঙা রিনিঝিনি শব্দের মতো করে বেজে উঠে! চোখের সামনেই ফিকে হয়ে যেতে দেখে ক্লান্ত বিকেলের অর্স্তগামী সূর্যকে সঁন্ধ্যার বুকে। মসজিদের শহর ঢাকাতে স্লোগানের মতো মুখরিত হয় মাগরিবের আযান! মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে প্রতীক্ষার কাকের মতো ঠাঁই হয়ে বসে থাকে চৈতি! ভাবনার করিডোরে শুনতে পায় আবেগ আর বিবেকের পয়চারি! আজকাল চোখ বন্ধ করে প্রায় বিড়বিড় করে কথা বলে চৈতি তার ভিতরের অস্তিত্বের সাথে!

চৈতি তার ভিতরে জন্ম নেয়া আগত অতিথির নাম রেখেছে ‘ফুর্তি’! ক্যাম্পাসের মহা দুষ্ট এবং মজার জুটি অমিত আর চৈতির নাম ভুলেছে তাদের প্রিয় সকল বন্ধুরা! সেই সঙ্গে ভার্সিটির অন্যদের কাছেও ফুর্তির মা-বাবা নামেই ওদের পরিচয়!
চৈতি তার পেটের উপর আলতো করে হাত রেখে বলে আচ্ছা ‘ফুর্তি বাবু’ এই শহরে আমি কেমন করে বেঁচে থাকব বলত! তোর জন্মদাতা চায়ছে আমি তোকে হত্যা করি! মানুষ এতো নিষ্ঠুর কেনো বলতে পারিস! সারা পৃথিবীতে এই একটি হত্যার বৈধতা দিয়েছে আদালত! কোন বিচার নেই র্নিবিঘেœ মাতৃগর্ভে হত্যা করা হয় অগণিত ভ্রুন, বেওয়ারিশ নিস্পাপ শিশুটি বেড়ে ওঠে অনাদর অবহেলায় ‘বেজন্মা’ গাল শুনে শুনে! আমি তোকে খুন করতে পারব না আবার বাঁচিয়ে রাখতেও পারব না কেননা তোর জন্মের কোন বৈধতা নেই! অথচ ভাবতে পারিনা প্রিয় কবি রুদ্রের লেখা সেই সব লাইনগুলো কী চমৎকার করে আমার মস্তিকে বুনে দিন অমিত, আমি নির্ভাবনায় ওর কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুনতাম ও আবৃত্তি করত- ‘এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আড়ষ্ট কুমারী জননী, স্বাধীনতা একি তবে নষ্ট জন্ম! একি পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল!’ লাইনগুলো নিশ্চই তুইও শুনেছিস ফুর্তি বাবু! আমার বাবা-মা আমাকে দিয়েছিল লাগামহীন স্বাধীনতা। তাদেরই বা সময় কোথায়! বাবা দেশ বিদেশে ঘুরছেন তার ব্যবসার পরিধি বড় করতে আর মা নিচ্ছেন নানা সামাজিক সংগঠন করে মূল্যবান অ্যাওয়ার্ড! আর দেখ আমি রাত্রির বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদছি ‘ফুর্তি বাবু’।

বেশ কিছুদিন ধরে ঘুম হয়না চৈতির। বাবা মায়ের সাথেও তৈরি হচ্ছে দূরত্ব! বাহ্যিক অবয়ব তৈরি হবার পূর্বেই হত্যা করা হবে ফুর্তিকে! চমৎকার প্লান তৈরি করে দিয়েছে অমিত! কখনো কখনো প্রকৃতি মানুষকে নির্মম সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে রেখেছে অমিত; এটা আর এখন কঠিন কোন কাজ নয়, এমন ঘটনা এখন হর হামেশায় হচ্ছে! চৈতি সব মেনে নিয়ে বলেছে, আমি তোমাকে দিনক্ষণ জানিয়ে দিব! সারাক্ষণ একা একা কথোপকথোন হয় ভ্রুণের সাথে; মনের সব কথা বলতে বলতে ফুর্তিকে আর হত্যার কথা ভাবতে পারে না চৈতি। ফুর্তিকে বলে চিন্তা করিস না আমি তোকে হত্যা করতে পারব না। প্রয়োজন হলে তোকে নিয়ে চলে যাব অন্য গ্রহে! আমি বেঁচে থাকলে তুইও বেঁচে থাকবি! এবার মন খারপ করিস না ‘ফুর্তি বাবু’!

**********

ফোন দুবার বেঁজে উঠার পরেই কল রিসিভ করল অমিত।
-কী খবর ‘ফুর্তির মা’ কেমন আছ?
-‘ফুর্তির মা’ না ছাই! বলছি না আমাকে ‘বিষাদের আম্মু’ বলো!
-বেশ তো বলবো, কেন ফোন করেছ?
-দেখতে ইচ্ছে করছে তোমাকে খু-উ-ব! বাবা এখনো দেশে ফিরেন নি, মা কী একটা মিটিং নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। জমিলা দেশের বাড়িতে গিয়েছে! ‘অ্যাই মিন অ্যাডভ্যাঞ্চার অফ ফাঁকা বাড়ি!’ আসবে?
-সত্যি বলছ! তুমি ডাকলে আসব না! বল কী! সো নাইস অফ ইউ বেবী। ভয় পাবে না তো আবার!
-আর কী-বা আছে ভয় পাবার! সে যা হোক কী খাবে অমিত?
-এতো ব্যস্ত হয়ো না ডিয়ার কিছু না কিছু তো খাব-ই, যা তুমি ভালোবেসে দিবে!
-বেশ তো চলে এসো!

কলিংবেল চাপতেই দরাজা খুলে দিল চৈতি। বাসায় ঢুকতেই সুমিষ্ট ঘ্রাণে ভালোলাগা অনুভূত হলো অমিতের!
বাহ চমৎকার! ঘ্রাণটা কী ফুলের?
-বেলকনিতে চলো নিজেই দেখবে!
-তোমাদের ঐ খোলা বেলকনিটা আমার ভীষণ পছন্দ চৈতি! তবে আজ তোমাকে আরো সুন্দর লাগছে। একটু পাশে এসে বসো না।
-এতো ব্যস্ততার কী হল সারা দিন পড়ে আছে, চলো বেলকনির পাশের রুমটাতে যায় ফুল আর আকাশ দেখতে দেখতে গল্প করা যাবে।

চৈতির রুমের সাথেই লাগানো চমৎকার একটি বেলকনি। ঢাকা শহরে আজকাল এতো বড় বেলকনি দেখা যায় না। চৈতি যতœ করে তাতে লাগিয়েছে কিছু ফুলের গাছ আর জানালার গ্রীলের সাথে ঝুলিয়ে দিয়েছে নানা প্রজাতির ক্যাকটাস আর মানিপ্লান্ট। ছোট্ট একটা বক্স টেবিলর নিচেই রয়েছে দু’টো চমৎকার ছোট্ট আসন যা দু’জনের বসার জন্য বেশ চমৎকার। চৈতি আসন দু’টি টেনে অমিতকে বলল, ‘এস বন্ধু মুখোমুখি বসি, অথবা টানিয়া নেই হিয়ার মাঝে হিয়া’।
-বাহ দারুণ কাব্য করছ দেখি!
-কাব্য করছি না আজ কাব্য শুনব তোমার কাছ থেকে। তার আগে নাস্তা নিয়ে আসি তুমি বসো।
-চৈতি প্লেট সাজিয়ে নাস্তা নিয়ে আসল।
-আরে এতো কিছু কে করেছে! আর এক প্লেট কেন তুমি খাবে না?
-বিষাদের আম্মু করেছে! তুমি খাও আমি পাশে বসে দেখব, যদিও মুখে দিতে পারবে কিনা কে জানে!
-অমিত স্যুপ মুখে দিয়েই বলল,অসাধারণ হয়েছে। কবে শিখলে এসব!
-এখন না শিখলে হবে! আজ বাদে কাল আমি মা হতে যাচ্ছি! অনেক বড় হয়ে গেছি না?
-মানে কী চৈতি!
-তোমার হাত ছুঁয়ে বলছি অমিত আমরা যদি সন্তানটাকে বাঁচাতে চাই কোন উপায়-ই কী নেই! এমনিতেই অনেক বড় অপরাধ করেছি। আবার হত্যা করব ভাবতেই না আমার গাঁ শিউরে উঠে! তাও নিজের সন্তান!
-এসব কী বলছ! তুমি কি এসব বলার জন্যই আমাকে ডেকেছে! আর নিজের সন্তান বলছ কেন! এখনো কিচ্ছু হয়নি!
-না আসলে এসব বলার জন্য ডাকিনি তুমি যা বলবে আমি সেটাই করব। তবুও শেষবারের মতো তোমার সাথে আলাপ করে দেখা। আর ওর সাথে আমার রোজ কথা হয় সে কারণে একটা মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পড়েছি।
-কার সাথে রোজ কথা হয়! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না চৈতি!
-কার সাথে আবার ‘ফুর্তির’ সাথে!
-তুমি না পাগল হয়ে যাচ্ছ। যত দ্রুত সম্ভব ওটাকে ওয়াস করে ফেলতে হবে তা না হলে তুমি কী যে করবে কে জানে!
-চৈতি ম্লান হেসে বলল, ভেবনা তুমি যেমন চাও তেমনই হবে! তোমাকে কোন বিপদে ফেলব না।
-তোমার মতি-গতি আমার ভালো লাগছে না, আমি উঠব! কোথায় একটু মজা করে সময় কাটাবো তা নয়; তুমি কানের কাছে অযথা ঘ্যানর ঘ্যানর শুরু করেছ!
-সরি ডিয়ার রাগ করনা, আর এমন কিচ্ছু বলব না। তুমি শেষ কর আমি কফি নিয়ে আসি।
-এই তো লক্ষী মেয়ে আমার পাশে এসো একটু আদর করে দেই! কফি লাগবে না।
-না আগে খাবার শেষ কর, কফি খাবে তারপর সব হবে!
-বেশ তো তুমি যেভাবে চাও।
-কিছুক্ষণ বাদেই চৈতি দু’মগ কফি নিয়ে বসল অমিতের মুখোমুখি। বলল আবৃত্তি শোনাও!
-কী শুনবে রবী ঠাকুর না জীবনানন্দ?
-রুদ্রের সেই কবিতাটি শোনাও না।
-না রুদ্র নয় ওসব মাঠ-ময়দান গরম আর করতালির জন্য! রোমান্টিক কিছু শুনবে কি না বল?
-বেশ তো জীবনানন্দ তবে রোমান্টিক নয়, আট বছর আগের এক দিন!
-অমিত শুরু করল- ‘ শোনা গেল লাশ কাটা ঘরে নিয়ে গেছে তারে, কাল রাতে ফাল্গুনের আঁধার যখন গিয়েছে ডুবে!’
-থামলে কেন অমিত দারুণ লাগছে!
-আচ্ছা এটা কোন কথা হলো তোমার না আজব সব পছন্দ! হঠাৎ লাশ কাটা ঘরের কবিতা শুনতে ইচ্ছে হলো কেন তোমার।
-কবিতা তো কবিতাই অমিত! বেশ তো বাদ দাও! তাছাড়া তোমার গলা খুসখুস করছে; আগে আরাম করে কফিটা শেষ কর তারপর রোমান্টিক কিছু একটা শুনব!
-জ্বী না ম্যাডাম একটু শুধরে দেয় রোমান্টিক কিছু একটা শুনব নয় করব!
-বেশ তো যা ইচ্ছে তোমার! আচ্ছা আমি যদি তোমাকে একটা কবিতা শোনায়?
– সত্যি শোনাবে! বেশ তো শোনাও
– আমি কিন্তু আবৃত্তিকার নই অমিত, শুধু পড়ে যাব! তবে একটা শর্ত আছে।
– কী শর্ত চোখ বন্ধ করে শুধু শুনবে ভালো না লাগলেও কিছুই বলতে পারবে না।
– ঠিক আছে আমি চোখ বন্ধ করলাম তুমি শুরু কর।
-চৈতি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুরু করল…

‘তুমি আমার সর্বনাশ করেছ শুভঙ্কর
কিচ্ছু ভাল লাগে না আমার কিচ্ছু না।
জ্বলন্ত উনুনের ভিজা কয়লার ধোঁয়া
আর শ্বাস কষ্ট ঘিরে ফেলেছে আমার দশদিগন্ত।
এখন বৃষ্টি নামলেই কানে আসে নদীর পাড় ভাঙ্গার অকল্যাণ শব্দ
এখন জোৎস্না ফুটলেই দেখতে পাই
অন্ধকার শশ্মানযাত্রীর মতো ছুটে চলেছে মৃতদেহের খোঁজে।
কিচ্ছু ভাল লাগে না আমার।কিচ্ছু না … … … … … … … …
এখন সমস্ত স্বপ্নই যেন বিকট মুখোশের হাসাহাসি;
দুঃস্বপ্নকে পার হওয়ার সমস্ত সাঁকো ভেঙ্গে চুরমার।
কিচ্ছু ভাল লাগে না আমার। কিচ্ছু না।’

অমিত গভীর বিস্ময়ে চেয়ে দেখে, চৈতির চোখ বেয়ে অবিরত জল পড়ছে! অতঃপর বলল, পূর্ণেন্দু তোমার খুব প্রিয় জানতাম না তো! করতালি না দিয়ে পাড়ছি না আমাকে অবাক করেছ তুমি এত্তবড় একটি কবিতা মুখস্ত তোমার! তার চেয়ে বড় কথা তুমি অনেক দরদ দিয়ে পড়েছ! তোমার চোখে জল! তোমার কফি বোধহয় এতক্ষণ ঠাণ্ডা হয়ে গেছে!

চৈতি এক চুমুক কফি মুখে দিয়েই বমির মতো শব্দ করল। অমিত পানি এগিয়ে দিয়ে বলল, কী সমস্যা হলো তোমার? চৈতি হাসার চেষ্টা করে বলল, তেমন কিছু না মেয়েদের এই সময় এমন একটু হয়ে থাকে! অমিত বলল, রাখ তোমার আর খেতে হবে না ঠা-া কফি! না অমিত কফি আমি অনেক যতœ করে বানিয়েছি তোমার সাথে কথা শেষ করে এক চুমুকে খেয়ে নিব; খাবার জিনিস নষ্ট করতে নেই।
বেশ তো বলো চৈতি!
হুম বলছি- তোমার সাথে যে সীম টা দিয়ে আমি কথা বলছি তা কারো নামেই রেজিস্ট্রশন করা নেই, কিছুক্ষণ পর আমি বাথরুমে ফেলে দিব! আর আমার সীম টা মায়ের কাছে কথাটা সত্য নয় সেটা চালু আছে। আমি ইচ্ছে করেই সেটা দিয়ে তোমার সাথে কথা বলিনি! অর্থাৎ তোমার সাথে এই যে এতো দিনের কথা কিংবা আজ বাসায় ডেকে আনার কোন কল রেকর্ড আমি রাখছি না!
-এসব কী বলছ, আমি বুঝতে পারছি না!
-আমার কথা এখনো শেষ হয়নি অমিত, ক্ষেপে উঠা মানুষগুলো নেকড়ের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে! তোমার হাতে আর বেশি সময় নেই! স্যরি আমার উচিৎ ছিল তোমাকে একটিবারের জন্য হলে কিছুটা উঞ্চতা দেয়া। কিন্তু হাতে একেবারেই সময় নেই। এখানে বেশ কিছু টাকা আছে রাখ!
-টাকা দিয়ে আমি কী করব!
-উহ! কথা বলনা, এটা কি নিশ্চই চিনতে পারছ! পিস্তলটি বাবার। যাতে ছয়টি গুলি লোড করা আছে টিগারটা টান দিলেই তোমার বুক ঝাঁঝরা হয়ে যাবে! কিন্তু তার আর দরকার হবে না! তোমাকে আমি বিষ দিয়ে কফি খাইয়েছি আর মাত্র ত্রিশ মিনিটের মতো সময় তোমার হাতে। কাজটি আমি ঠিক করিনি বুঝতে পারছি! বিষে ভেজাল নেই; শুধু অ্যকশন শুরু হতে ত্রিশ মিনিটের মতো সময় নেয়। জমিলাকে আসলে ছুটি দেয়নি খাইয়ে পরীক্ষা করেছি; পাশের রুমে গিয়ে দেখতে পার চিরতরের ঘুম দিয়েছে জমিলা। তুমি যত দ্রুত সম্ভব চলে যাও। হাসপাতাল কিংবা কোনো ক্লিনিক থেকে ওয়াস করে নাও! তোমার জন্য আমার খুব করুণা হচ্ছে। গো অমিত নো মোর টাইম আর মাত্র ২৯ মিনিট তোমার হাতে।

-অমিত রাগে বিস্ফোরিত চোখে বলল, ইউ লায়ার, বাস্টার্ড!
-চৈতি রিভোলবার উচিয়ে বলল, আর একটা শব্দ করলে হাসপাতালে যাবার সময় পাবে না, আর গালি দিয়ে তোমার জন্ম পরিচয় আমার কাছে আর ব্যাখ্যা করতে হবে না!
অমিত দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায়! চৈতি জানালার গ্রীল দিয়ে চেয়ে দেখে একজন ভীত মানুষ কিভাবে জীবনটাকে বাঁচতে চায়ছে। চৈতির খুব হাসি পায় সে হাসি চৈতি চাপিয়ে রাখতে পারে না! হাসির শব্দ প্রতিধ্বনি হয়ে দিগন্তে ছেঁয়ে যায়! চৈতি মোবাইল থেকে সীমটি খুলে ভেঙে ফেলে দেয়! তারপর ধোঁয়া বিহীন পরিত্যাক্ত মগের কফিটুকু এক চুমুকে শেষ করবার চেষ্টা করে।

ডাক্তার কষে একটা থাপ্পর মারে অমিতের মুখে; ভন্ডামির জায়গা পান না তাই না! আমরা বিষ খাওয়া মানুষের চেহারা দেখলেই বুঝি! আয়াদের মধ্যে থেকে একজন রসিকতা করে বলে ভাইজান বাথরুম থাইকা একটু ‘গু’ খাইয়া বমি করেন, বিষ পান করা রোগীদের জন্য এটাই উত্তম চিকিৎসা! অমিত জ্ঞান শূন্যহীণভাবে বেঁচে থাকবার জন্য বাথরুমে চলে যায়! গলার ভিতর আঙুল দিয়ে বমি করবার চেষ্টা করে! অবশেষে মৃত্যুর কোন লক্ষণ টের পায় না অমিত! বাসায় ফিরে দরাজা বন্ধ করে বিছানায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়ে এপাশ ওপাশ করে ঘুমাতে চেষ্টা করলেও ঘুম আসছে না! একটা সময় আনমনে রিমোট চেপে টিভি অন করল অমিত।

সদ্য সংবাদঃ
কোটিপতি ব্যাবসায়ি মকবুল সাহেব ও সমাজ সেবিকা রেবেকা বেগমের একমাত্র কন্যা চৈতি বিষপানে আতœহত্যা করেছে! মৃত্যুর সময় তাদের বাসায় কেউ ছিল না! প্রাথমিকভাবে কাজের মেয়ে জমিলাকে জিজ্ঞসা করা হলে সে ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আছে বলে জানা যায়। তার ব্যবহৃত সেল ফোনের কল লিষ্টে দেখা যায় তার বাবা মা ছাড়া আর কাউকে কল করেনি!

 

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *