চট্টগ্রামের ভাষার শব্দ ভাণ্ডার দেখে মাঝে মাঝে অভিভূত হই। “আবুলাইন্না বিয়ে” শব্দটি আমার কাছে আজ নতুন। সেইন্ট ম্যারিস স্কুলের সহপাঠী বেনজীরের কাছ থেকে শব্দটি জানলাম।
মানে হলো দাওয়াত ছাড়া বিয়ে খাওয়া। খাঁটি বাঁশখালীর মেয়ে হয়েও এতো সুইট শব্দটা কখনো শুনিনি এই জীবনে। যাই হোক, শব্দটি শুনে আবুলাইন্না দাওয়াতের এক স্মৃতি ভেসে উঠল। তখন আমি খুব ইয়াং, সুন্দরী আর গ্ল্যামারাস ছিলাম। রুচিশীল পোশাক পরে পেন্সিল হিল পায়ে নিখুঁত মেক আপ করে দুপুরে বিয়ে খেতে গেলাম আম্মুর সাথে। আব্বু অফিসে ছিল। নাসিরাবাদের কোনো এক ক্লাবে ছিল বিয়েটা। গিয়ে সোফায় বসে পরলাম পায়ের উপর পা তুলে, গোল্ডেন হিল দেখিয়ে। আমাকে দেখে কয়েকজন মহিলা (বয়স ৩৮ থেকে ৪৫ বছরের হবে, যারা ওই বিয়েতে আলমারির উপরের তাকে সযত্নে রাখা বিয়ের কাতান শাড়ি নামিয়ে পরেছিলেন আর মাথায় স্বর্ণের টিকলি তো আছেই) অতি উৎসাহে চট্টগ্রামের কড়া আঞ্চলিক টানে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনারা কুন পক্ষ?” বললাম, বরপক্ষ। জিজ্ঞেস করলেন, কি হন বরের? অ্যাটিচ্যুড নিয়ে বললাম, কাজিন। জাপটে ধরলেন আদরে, ওমা… তালতো বোন। আসেন আসেন ভাত খেয়ে নেন, বরের আসতে দেরী হবে। চট্টগ্রামের স্টাইলে আন্তরিকভাবে হাত ধরে টেনে টেনে নিয়ে গেলেন টেবিলে। বসলাম। টেবিলে মানুষও হল। কিন্তু আম্মুর মনে সন্দেহ ধরল। বলল টেবিলে কাওকে চেনা জানা মনে হচ্ছেনা কেনো? কাতান শাড়ি পরা একজন তালতো বোন শাড়ির আঁচল সামলিয়ে যেই প্লেটে পোলাও তুলে দিচ্ছিল ঠিক তখনই আম্মু জিজ্ঞেস করে বসলো বরের নাম। বলল কিছু একটা, মোখলেস বা আবুল হোসেন, ঠিক মনে পরছেনা এই মুহূর্তে। তবে আমাদের বরের নামের সাথে মিল ছিলোনা। আম্মু তৎক্ষণাৎ উঠে গেলো। আবুলাইন্না বিয়ে খাওয়া নাকি হারাম আর গুনাহ। তারপর বাসা থেকে বিয়ের কার্ড আনালো (মোবাইল ফোনের যুগ তখনো শুরু হয়নি)। জানলাম আসল বিয়ে একি এলাকার অন্য আরেকটা ক্লাবে। তবে অতক্ষণে আব্বুর অফিসের ড্রাইভার সাহেব খাবার হজম করে ফেলেছিলেন। যাই হোক, আমরা আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেলাম। একটাই আফসোস ছিল, আবুলাইন্না বিয়েতে টেবিলে বোরহানি দিয়েছিলো আর আইটেম একটু উন্নতমানের ছিল। আসল বিয়েতে কোক দিয়েছিলো। খাবারও নরমাল টাইপের ছিল।
লেখক:
Umme Taufika Lina, Doctoral Student, Faculty of Law, The University of Hong Kong