বিয়ের প্রীতিভোজে চিংড়ি না দেওয়ায় তুলকালাম, ৩ দিন ধরে নানা আলোচনা, সালিশি বৈঠকের পর অবশেষে টিকে গেল আনোয়ারার আলোচিত সেই বিয়েটি। কনে শারমিন আকতারের শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার আগেই যে ভাঙ্গনের সুর বাজতেছিল তা জোড়া লেগেছে দুই পরিবার ও স্থানীয় দুই চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায়।
সোমবার সন্ধ্যায় প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে সালিশি বৈঠক ও দুই পক্ষের বক্তব্যের পর বরপক্ষ ক্ষমা চেয়ে কনেকে ঘরে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। তবে বৃহস্পতিবার বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে বর মোহাম্মদ আলমগীরের (৩০) উচ্ছৃংখল আচরণের শাস্তি ও কনে শারমিন আকতারের ভবিষ্যৎ আরো নিরাপদ করতে কনেকে তুলে নেওয়ার আগে তার নামে ৩ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
আগামী শুক্রবারের আগে কনের নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলে ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে কনেকে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যাবে বরপক্ষ। এছাড়া ৭ লাখ টাকার দেনমোহর ও ৮০ হাজার টাকা উসুল দেওয়ার পুর্বের সিদ্ধান্তও বলবৎ থাকবে বলে জানা গেছে।
বৈঠক সুত্র জানায়, দুই পক্ষের আলোচনার পর বিয়ে অনুষ্ঠানে অনাকাংখিত আচরণের জন্য ক্ষমা চান বর মোহাম্মদ আলমগীর। কনের পিতা মোহাম্মদ হোসেন সব ভুলত্রুটি ভুলে মেয়ে জামাই আলমগীরকে বুকে টেনে নেন। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সম্মানজনক এই সমাধানে তিনি খুশি।
সোমবার রাতে আনোয়ারা রুস্তমহাটে স্থানীয় বটতলী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী এবং বরুমছড়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন চৌধুুরীর মধ্যস্থতায় প্রায় দুই ঘন্টা ধরে এই বৈঠক চলে। রাত ৯টায় শেষ হয় বৈঠক। বৈঠকে বরের পিতা আবদুল মোনাফ, চাচা শেয়ার আলী, কনের বাবা মোহাম্মদ হোসেন, নানা আহমদ শফি, আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল ইসলাম, আলমগীর আজাদ, জসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ বাবুসহ দুই পক্ষে অন্তত ৩০ জন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সুন্দর সমাধানের পর ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী সারাবেলাকে বলেন, একটি সংসার টিকে গেছে সেটা বড় শান্তি। আর সেদিন বর আলমগীর যে আচরণ করেছে সেটা কোন মতে কাম্য নয়। ভবিষ্যতে এমন আচরণ যাতে না করে সেজন্য ছেলেকে দেনমোহরের বাইরে অতিরিক্ত ৩ লাখ টাকা দিতে হবে। এরপর শুক্রবার নববধুকে ঘরে তুলে নেবে।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) উপজেলার ১১নং জুইদন্ডী ইউনিয়নের ৮নং খুরসকুল গ্রামের হাজী বাড়ীর আবদুল মোনাফের ছেলে মোহাম্মদ আলমগীর (৩০) সাথে একই ইউনিয়নের জুইদন্ডি গ্রামের মোহাম্মদ হোসেনের মেয়ে শারমিন আকতারের বিয়ে ঠিক হয়। ১৮ দিন আগে তাদের আকদ সম্পন্ন হয়। গত বৃহস্পতিবার বটতলী আলভী ম্যারেজ গার্ডেনে প্রীতিভোজের আয়োজন ছিল।
মধ্যপ্রাচ্যের আমিরাত প্রবাসী বরের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে কনেপক্ষ ৫শ’ বরযাত্রীসহ প্রায় ৮শ’ লোকের প্রীতিভোজের আয়োজন করে। মুরগির রোস্ট, খোরমাসহ নানা উপাদেয় আইটেমে ভোজের আয়োজন করা হয়। কিন্তু খাবার আয়োজনে চিংড়ি মাছ না থাকায় বাকবিতন্ডায় জড়ায় বর আলমগীর। এক পর্যায়ে তা গড়ায় হাতাহাতিতে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।
বরের চাচা শেয়ার আলী সারাবেলাকে জানান, বিয়েতে সাড়ে ৩শ’ বরযাত্রী যাওয়ার কথা ছিল। বিয়ের ক্লাবে বর আলমগীরের উচ্ছৃংখল আচরণের পর অনেকে না খেয়ে চলে গেছে। আসলে বাইরে থেকে কয়েকজন ফোন করে খাবারের বিষয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলায় ছেলে খারাপ আচরণ করে। তার এমন আচরণের জন্য তিনি ক্ষমা চান।
কনের নানা আহমদ শফি সারাবেলাকে জানান, অনেক আশা নিয়ে নাতনির বিয়ে ঠিক করেছিলাম। দুই পক্ষে ৮শ’ লোকের খাবারের আয়োজন ছাড়াও ৬২ হাজার টাকার ফার্নিচারসহ অনুষঙ্গিক অন্যান্য উপহার সামগ্রি দেওয়া হয়। ছেলে পক্ষও আড়াই তোলা স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য উপহার পাঠায়। প্রীতিভোজের দিন বর উত্তেজিত হয়ে বলেছিল-আজিয়া লই যাইয্যুম, হালিয়া ছাড়ি দিয়্যুম” (আজ নিযে যাব, কাল ছেড়ে দেব)। তার এই কথা কারো পছন্দ হয়নি। তাই ওই দিন নাতনিকে তুলে দেই নি। শেষ পর্যন্ত সুন্দর সমাধান হয়েছে।
নাতনি ও নাতনি জামাই পরস্পর মোবাইলে আলাপ করে ভুল বুঝাবুঝি মীমাংসা করে নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
: সারাবেলা