#Be_a_heart_hero”
আজ ২৯ শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস,এভাবের স্লোগান হচ্ছে “Be a heart hero”.
সারাবিশ্বে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশী মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগজনিত কারণে।বাংলাদেশেও মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগ।
হৃদরোগে অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কম বয়সীদের হৃদরোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা বাংলাদেশে সারাবিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। ইউরোপ – আমেরিকার চেয়ে এই অঞ্চলের মানুষের হৃদরোগ ১০ বছর আগেই দেখা দেয়। তার মানে হচ্ছে একজন আমেরিকানের যদি হৃদরোগ ৫০-৬০ বছর বয়সে হয়,তাহলে বাংলাদেশীদের তা হবে ৪০-৫০ বছর বয়সে।
হৃদরোগ তথা কম বয়সীদের হৃদরোগ ব্যক্তিগত,সামাজিক,রাষ্ট্রীয়ভাবে এক মহাদুর্যোগ।কেননা সাউথ এশিয়ান রিজিয়নে দেখা যাচ্ছে কম বয়সী যে মানুষটির হৃদরোগ হয়ে শয্যাশায়ী বা মৃত্যুবরণ করছেন,উনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।ছোট ছোট ছেলে মেয়ে,পরিবার রেখে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে চলে যেতে হচ্ছে হৃদরোগজনিত কারণে।
কেন আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি এত বেশি?
হৃদরোগের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- স্মোকিং বা ধূমপান,হাইপারটেনশন,ডায়াবেটিস,রক্তে চর্বির ভারসাম্যহীনতা, স্থূলতা, বয়স নিজেই একটা রিস্ক ফ্যাক্টর,তাছাড়া পুরুষ মানুষের হৃদরোগের হার একই বয়সী মহিলাদের চেয়ে বেশী।
আর এই অঞ্চলের মানুষ জেনেটিক্যালি হৃদরোগে আক্রান্তের ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া আমাদের দেশের মানুষের হার্টের রক্তনালীগুলো তুলনামূলকভাবে সরু।
এসব কারণে আমাদের দেশে কম বয়সী তথা সর্বোপরি হৃদরোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা বেশি।
কিভাবে বুঝব হার্ট এ্যাটাক হচ্ছে?
প্রচন্ড বুকে ব্যথা,চাপ,হার্টের ব্যথা সাধারণত পুরো বুক জুড়ে হয়,থুতনী বা হাতের দিকে ব্যথাটা যেতে পারে।সাধারণত ব্যথার সাথে অস্বাভাবিক ঘাম,বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।তবে বয়স্ক,ডায়াবেটিস রোগী এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্যথার ধরণ এমন নাও হতে পারে।
এরকম লক্ষ্মণ দেখা গেলে সাথে সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।আমাদের দেশে অনেকেই গ্যাস্টিকের ব্যথা বলে হার্ট এ্যাটাককে এড়িয়ে যেতে চান।মনে রাখতে হবে, যত তাড়াতাড়ি হার্টের চিকিৎসা শুরু হবে চিকিৎসার সফলতার হার তত বেশি।
চিকিৎসাঃ
হার্ট এটাকের সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হচ্ছে যে রক্তনালীতে ব্লক হয়েছে এনজিওগ্রাম করে তা খুলে দেয়া।তবে এটার জন্য উন্নত সেটআপ,ভালো সেন্টার প্রয়োজন এবং ব্যথা শুরুর ০২ ঘন্টার মধ্যে আসতে হয়। এটা সম্ভব না হলে কিছু ঔষধ দিয়েও ব্লক খোলার চেষ্টা করা হয়, সেই ঔষধ ও ব্যথা উঠার ১২ ঘন্টার পরে আর কাজ করে না।বর্তমানে আমাদের দেশে ৬৫ টা ক্যাথল্যাব আছে, স্বল্পখরচে খুব সহজেই এসব জায়গায় আজকের দিনে ২৪ ঘন্টাই এসব চিকিৎসা হচ্ছে।
প্রতিরোধঃ
সবচেয়ে ভালো হচ্ছে হৃদরোগ প্রতিরোধ। হৃদরোগ একটি ক্রনিক রোগ।এটা একবার হলে সম্পূর্ণ সুস্থ্য হওয়া অসম্ভব।তবে এটি প্রতিরোধ যোগ্য।
ধূমপান না করা,প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম ( কমপক্ষে সপ্তাহে ৫ দিন)করা,ওজন নিয়ন্ত্রণ,হাইপারটেনশন,ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে রাখা।
আরেকটা ব্যাপার খুবই গুরুত্বপূর্ণ,তা হচ্ছে খাদ্যাভাস।
শর্করা (ভাত,আলু,চিনি ও চিনিজাতীয়) কম খাওয়া,চর্বিযুক্ত খাবার বিশেষ করে ট্রান্সফ্যাট( গরু,খাসী,সফট ড্রিংক,চানাচুর,চিপস্ সহ মচমচে ভাজা খাবার) পরিহার।
প্রতিদিন পরিমাণমত তাজা ফল,শাকসব্জি খাবারে রাখা।
তবে ডিম,দুধ(কোন ফ্যাট ফ্রী বা ফর্মূলা দরকার নাই,গরুর দুধ নিরাপদ) খেতে কোন বাধা নাই।
#থেরাপী দিয়ে ব্লক খোলাঃ
হৃদয়ের আবেগকে কেন্দ্র করে সারা দুনিয়ায় বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা জমে উঠে।তেমনি সাউথ এশিয়াতে হচ্ছে হৃদরোগ নিয়ে। থেরাপী দিয়ে ব্লক খোলা,হার্ট সুস্থ্য করে দেয়া…এগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
আজকের দিনে সবার প্রতি আহ্বান, আসুন স্বাস্থ্যমত জীবন যাপন করি।পরিবারের সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করি। নিয়মিত ব্যায়াম করি।ধূমপান পরিহার করি। হৃদরোগ থেকে দূরে থাকি।
মনে রাখতে হবে হিরো হতে হলে সুস্থ্য হৃদয়ের বিকল্প নাই।
” Be a heart hero”
লিখেছেন: ডা. ইকবাল মাহমুদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল