BanshkhaliTimes

আজাদ কাশ্মীরও থমথমে!

থমথমে ভাব আজাদ কাশ্মীরেও। এখানেও ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন অনেকেই। দোকানপাট বন্ধ। রাস্তাঘাটে কমে গেছে গাড়ি-ঘোড়ার চলাচল।

লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর হাই অ্যালার্ট জারি করেছে পাকিস্তান। ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে রোববার সীমান্তের অধিবাসী ও সেনা সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে পাক কর্তৃপক্ষ।

সীমান্তের অপর পাড়ে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে ভারতীয় সেনারাও। নিলাম ও ঝিলাম নদী অববাহিকতায় নির্মাণাধীন বাঁধ থেকে ইতিমধ্যে ৫০ চীনা শ্রমিককেও সরিয়ে নিয়েছেন পাক কর্মকর্তারা।

গত কয়েক দিন ধরে এ এলাকায় মাঝে মাঝেই গুলি ও পাল্টা গুলি বিনিময় করছে উভয়পক্ষের সেনারা। ইসলামাবাদ জানিয়েছে, ভারতীয় সেনাদের গুলিতে মঙ্গলবার আজাদ-কাশ্মীরের চার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

এর মধ্যে ৪ বছরের এক শিশুও রয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ১১ জন। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভারত গুচ্ছবোমা ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। খবর এএফপির।

পরমাণু শক্তিধর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে মূলত চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জয়েশ-ই-মোহাম্মদকে দায়ী করে দেশটির অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালায় ভারতের বিমানবাহিনী।

পাল্টা বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানও। সর্বাত্মক যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের দ্বার থেকে ফিরে এলেও কাশ্মীর সীমান্তে পাক ও ভারত সেনার মধ্যে গোলাগুলি অব্যাহত থাকে।

গত কয়েক সপ্তাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও চলতি সপ্তাহে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাক সেনার ছত্রছায়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী অনুপ্রবেশ করছে বলে অভিযোগ করে নয়াদিল্লি।

গত শনিবার কাশ্মিরের কেরান সেক্টরে পাকিস্তানের পাঁচ অনুপ্রবেশকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতের এক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র জানিয়েছেন, ৩১ জুলাই রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গঠিত বর্ডার অ্যাকশন টিমের (বিএটি) সাত সদস্য অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে তা সফলভাবে প্রতিহত করা হয়।

তবে এরপর ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা চার জনের মৃতদেহের ছবি প্রকাশ করে ভারত। এই ঘটনাকে কেন্দ্র সীমান্তে ফের গোলাগুলি শুরু হয়। রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে আজাদ কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের অ্যালার্ট থাকার পরামর্শ দেয় পাক কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ভারতীয় বাহিনীর ছোড়া কোনো বোমা, মর্টার শেলের কাছে না যেতেও নিষেধ করা হয়েছে।

ওদিকে ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের রাজপথে এখন পিন পড়লেও যেন তার শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও সেই নিঃশব্দতা খান খান করে যাচ্ছে ভারি বুটের শব্দ।

পথে-ঘাটে সাধারণ মানুষের দেখা নেই, শুধুই ‘ক্যামোফ্লেজ’ পোশাকে টহলরত সেনা। বরাবরই এই রাজ্যে নাগরিকপিছু সেনার অনুপাত বেশি। কিন্তু এত সেনা মোতায়েন অতীতে কখনও দেখেনি উপত্যকাবাসী।

সব মিলিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে এক অজানা আতঙ্কের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে। পেট্রলপাম্পে জ্বালানি নেই, হেঁশেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বাড়ন্ত। চাল-ডালের জোগাড় করতেই বাসিন্দাদের হিমশিম দশা। সব মিলিয়ে ভারতের মধ্যে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে কাশ্মীর উপত্যকা। কারগিলের বিজয় দিবসের সময় থেকেই আঁটসাঁট নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে।
: যুগান্তর

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *