অবশেষে কাল বাঁশখালীতে ( Banshkhali ) ভোট, সংঘর্ষের আশংকা

কয়েক দফায় উচ্চ আদালতের স’গিতাদেশ পেরিয়ে অবশেষে বাঁশখালীর ( Banshkhali ) ১৪টি ইউনিয়নে আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউপি নির্বাচন।
সংঘর্ষের আশংকায় ১৪টি ইউনিয়নের ১৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১১০টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কাথারিয়া ও পুকুরিয়া ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিকাংশ কর্মকর্তা আতংকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করেছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে মিউচুয়াল ট্রান্সফার দেখিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুষ্ঠু ও শংকামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশ্বাস দিয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে বাধ্য করছেন।
ভাঙচুরের আতংকে গাড়ি রিকুইজিশনে দিতে নানা জটিলতা সৃষ্টি করছেন গাড়ি মালিকরা। গত পৌরসভা নির্বাচনে রিকুইজিশনে দেওয়া গাড়ি ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় এ আতংক সৃষ্টি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন তারা।
উল্লেখ্য, সারাদেশের মতো গত বছরের ৪ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এর তিনদিন আগে (১ জুন) স’ানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও তৎকালীন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরে গত ২ জুন নির্বাচন স’গিত করা হয়। তৎকালীন নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করে নিয়োগ দেওয়া হয় নতুন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামকে। এরপর গত ১২ নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ ধার্য করা হয়। তাও ১০ নভেম্বর উচ্চ আদালতে এক প্রার্থীর দায়ের করা মামলায় স’গিত হয়। এরপর ১৯ নভেম্বর ধার্য হলে পরে তাও স’গিত হয়। এরপর চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়। প্রচার-প্রচারণা ও প্রশাসনিক যাবতীয় ব্যবস’াও গৃহীত হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন ও জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা প্রার্থীদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠকও করেন। কিন’ উচ্চ আদালতে কয়েকজন প্রার্থীর মামলায় তাও ১২ এপ্রিল স’গিত হয়ে যায়। আবার কয়েকজন প্রার্থী উচ্চ আদালতে আপীল করে ওইসব স’গিতাদেশ বাতিল করে দেন। সেই প্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল নির্বাচনের তারিখ ধার্য করে নির্বাচন কমিশন। এখানেও বর্তমান নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামকে প্রশিক্ষণে পাঠিয়ে সাতকানিয়া উপজেলার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শেখ ফরিদকে অতিরিক্ত নির্বাচনী দায়িত্ব দিয়ে গত ১৮ এপ্রিল বাঁশখালীর নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে ব্যাপক প্রস’তি নেওয়া হয়েছে। মাঠে টহল দিচ্ছে বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও আনসার। জোরদার করা হয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস’া। দুই হাজার পুলিশ, দুই শতাধিক আনসার দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া প্রতি ইউনিয়নে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে থাকবে টহল পুলিশ। ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ৫ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ১৩৫ জন প্রিজাইডিং, ৭৫৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং, ১ হাজার ৫১২ জন পুলিং কর্মকর্তা। ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৯ হাজার ১শ ৫৮ জন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন বলেন, ‘বাঁশখালীর ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হবে। দুষ্কৃতিকারীদের কেউ রেহাই পাবে না।’
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, ‘বুনো ওলের জন্য বাঘা তেঁতুল প্রয়োজন। বাঁশখালীর ( Banshkhali ) সন্ত্রাসীদের ভোটের দিন বাঘা তেঁতুল কাকে বলে শিখিয়ে দেওয়া হবে।’
অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শেখ ফরিদ বলেন, ‘বাঁশখালীর ( Banshkhali ) ১৪ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণের জন্য সকল প্রস’তি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা অহেতুক ভয় পাচ্ছেন।’
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ফ্রন্টসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন। ১৪টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ৭২ জন, সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১৩০ জন এবং সাধারণ আসনে ৫৬২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পুকুরিয়ায় চেয়ারম্যান পদে আবদুর রাজ্জাক (নৌকা), মো. আক্তার হোসাইন (আনারস), আসহাব উদ্দিন (ধানের শীষ), আলতাফ হোছাইন (চশমা) ভোটযুদ্ধে নামছেন। এখানে সংরক্ষিত আসনে ৯ জন এবং সাধারণ আসনে ৪৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সাধনপুরে চেয়ারম্যান পদে মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা (নৌকা), আহসান উল্লাহ চৌধুরী (আনারস), মো. মহিউদ্দিন (মোটর সাইকেল), মো. রাশেদ (অটোরিকশা), ইন্নে আমিন (টেবিল ফ্যান) লড়বেন। এখানে সংরক্ষিত আসনে ১০ জন, সাধারণ আসনে ৩৮ জন প্রার্থী রয়েছে।
কালীপুরে চেয়ারম্যান পদে অ্যাডভোকেট শাহাদত আলম (নৌকা), আমিনুর রহমান চৌধুরী (ধানের শীষ), মো. নাসের (আনারস), সজনূর নাহার (অটোরিকশা) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এখানে সংরক্ষিত আসনে ৯ জন এবং সাধারণ আসনে ৩৮ জন প্রার্থী রয়েছে।
খানখানাবাদে চেয়ারম্যান পদে বদরুদ্দিন চৌধুরী (নৌকা), আক্তার ফারুক (ধানের শীষ), জাহেদ আকবর জেবু (মোটর সাইকেল), ফরিদুল আলম (্আনারস), ফোরকান চৌধুরী (অটোরিকশা) লড়বেন। এখানে সংরক্ষিত পদে ৯ জন এবং সাধারণ আসনে ৪৫ জন প্রার্থী রয়েছে।
বাহারছড়ায় চেয়ারম্যান পদে অধ্যাপক তাজুল ইসলাম (নৌকা), মাস্টার লোকমান আহমদ (ধানের শীষ), বখতেয়ার উদ্দিন চৌধুরী করিম (আনারস), রেজাউল করিম চৌধুরী (অটোরিকশা), মো. মুজিবুর রহমান (টেলিফোন), আমান উল্লাহ খান (ঘোড়া), মো. জসীম উদ্দিন (টেবিল ফ্যান), সাজ্জাদ উল্লাহ চৌধুরী (মোটর সাইকেল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এখানে সংরক্ষিত আসনে ১০ জন, সাধারণ আসনে ৪১ জন প্রার্থী রয়েছে।
কাথারিয়ায় চেয়ারম্যান পদে ইব্নে আমিন (নৌকা), শাহজাহান চৌধুরী (ধানের শীষ), জয়নাল আবেদীন চৌধুরী (অটোরিকশা), আবদুল মালেক (চেয়ার), রাসেল চৌধুরী (রজনীগন্ধা), শাহীন আক্তার (আনারস), মো. নুর হোসেন (মোমবাতি) লড়বেন। এখানে সংরক্ষিত আসনে ৯ জন, সাধারণ আসনে ৩৫ জন প্রার্থী রয়েছে।
বৈলছড়িতে চেয়ারম্যান পদে কফিল উদ্দিন চৌধুরী (নৌকা), মো. ইব্রাহিম খলিল (ধানের শীষ), মো. ইউসুফ (অটোরিকশা), আবদুল হক (মোটর সাইকেল), নাজিম উদ্দিন (আনারস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এখানে সংরক্ষিত আসনে ৬ জন, সাধারণ আসনে ৩০ জন প্রার্থী রয়েছে।
তাছাড়া সংরক্ষিত আসন-২ এ বুলবুলি দাশ বিনা প্রতিদ্বান্দ্বতায় সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
শীলকূপে চেয়ারম্যান পদে মোজাম্মেল হক সিকদার (নৌকা), মো. মহসিন (ধানের শীষ), আবদুলাহ আল রেজা (চেয়ার), হাজী অছিউর রহমান (লাঙল), শফি আলম (আনারস) লড়বেন। এখানে সংরক্ষিত আসনে ৯ জন, সাধারণ আসনে ২৭ জন প্রার্থী রয়েছেন। গন্ডামারায় চেয়ারম্যান পদে হারুন অর রশীদ তালুকদার (চশমা), মো. লেয়াকত আলী (ধানের শীষ), শফকত হোসাইন চাটগামী (হাতপাখা), মো. আরিফ উল্লাহ (মোটর সাইকেল), নুরুল মোস্তফা সিকদার সংগ্রাম (নৌকা), এমএ মালেক মানিক (আনারস), মুরাদুল ইসলাম চৌধুরী (টেবিল ফ্যান), মো. ইকবাল হোসেন (অটোরিকশা), সেলিম উলাহ (টেলিফোন), আজিজুল হক (ঘোড়া), এখানে সংরক্ষিত আসনে ১৪ জন এবং সাধারণ ৬১ জন প্রার্থী রয়েছে।
শেখেরখীলে চেয়ারম্যান পদে মাওলানা হামেদ হাছান (আনারস), মো. ইয়াছিন (নৌকা), সাইফুল ইসলাম (চশমা) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এখানে সংরক্ষিত ৭ জন, সাধারণ আসনে ৩৯ জন প্রার্থী রয়েছে।
চাম্বলে চেয়ারম্যান পদে মুজিবুল হক চৌধুরী (নৌকা), নুর মোহাম্মদ ওসমান গণি (ধানের শীষ), আলী নেওয়াজ চৌধুরী ইরান (অটোরিকশা), মো. জকরিয়া (হাতপাখা), আবদুল মান্নান (দুটি পাখা) লড়বেন। এখানে সংরক্ষিত আসনে ১০ জন, সাধারণ আসনে ৪৩ জন প্রার্থী রয়েছে।
পুঁইছড়িতে চেয়ারম্যান পদে সোলতান গণি চৌধুরী (নৌকা), সোলতানুল আজিম চৌধুরী (ধানের শীষ), জসীম উদ্দিন চৌধুরী (রজনীগন্ধা), মো. সোলাইমান (ঢোল), কফিল উদ্দিন চৌধুরী (চশমা), ইয়াছিন আরাফাত গণি চৌধুরী (মোটর সাইকেল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এখানে সংরক্ষিত আসনে ৮ জন এবং সাধারণ আসনে ৩০ জন প্রার্থী রয়েছে।
ছনুয়ায় চেয়ারম্যান পদে রেজাউল হক চৌধুরী (ধানের শীষ), এম জিলুল করিম শরিফী (নৌকা), এম হারুনুর রশীদ (মোটর সাইকেল), মো. আলমগীর কবির (ঘোড়া), মো. আদম প্রার্থী (আনারস) লড়বেন। এখানে সংরক্ষিত আসনে ১০ জন ও সাধারণ আসনে ৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
সরল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এখানে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে না। সংরক্ষিত আসনে ৯জন ও সাধারণ আসনে ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

সুত্রঃ সুপ্রভাত বাংলাদেশ

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *